দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করতে চলেছে নিরাপত্তা পরিষদ- এমন খবর শোনা যাচ্ছে। তবে মিয়ানমার চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেেছে।
মিয়ানমারের ওপর অবরোধ আরোপ করতে চলেছে নিরাপত্তা পরিষদ। এদিকে রাখাইনের সহিংসতার জেরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যাতে কোনো ধরনের অবরোধ আরোপ করতে না পারে; সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেছে মিয়ানমার। গত বুধবার দেশটির সরকার বলেছে, রাখাইনের সহিংসতার জেরে নিরাপত্তা পরিষদ যাতে কোনো রকম অবরোধ আরোপের মতো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে সেজন্য চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক চ্যানেল আলোচনা শুরু করেছে মিয়ানমার।
মিয়ানমারের রাখাইনে দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের সহিংসতায় দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে পালিয়েছে এসেছে। তাদের উপর চালানো হচ্ছে নির্মম নির্যাতন। তাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
অথচ মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাখাইন রাজ্যের সহিংসতার জন্য সন্ত্রাসীদেরই দায়ী করেছেন। সেইসঙ্গে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি।
২৫ আগস্ট রাখাইনে পুলিশী তল্লাশি চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলায় ১২ পুলিশ সদস্য নিহত হলে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে। রোহিঙ্গাবিরোধী কঠোর অভিযান শুরু করলে রাখাইনে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন হতে বাঁচতে দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়েছে এসেছে।
এদিকে রোহিঙ্গা নিপীড়নের খবর ছড়িয়ে পড়লে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক সমালোচনা এবং নিন্দার ঝড় উঠলে প্রথমবারের মতো ওই ইস্যুতে মুখ খুলেন সু চি। মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) এই নেত্রী রাখাইনের সহিংসতা নিয়ে মিথ্যা সংবাদ ছড়ানোর অভিযোগও তোলেন। সু চি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের স্বার্থে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে উত্তেজনা উসকে দেওয়া হচ্ছে।
এক বিবৃতিতে সু চি এই মন্তব্য করলেও পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে কোনো কথায় বলেননি। ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি মুসলিম দেশের চাপের মুখে রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেষ পর্যন্ত কথা বলেন তিনি। বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিতে বুধবারও ইন্দোনেশিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে।
এর আগের দিন (মঙ্গলবার) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে লেখা এক বিরল চিঠিতে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরাস রাখাইনে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
মিয়ানমারে জাতিগত নিধনের কারণে ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে তিনি সতর্ক করে দেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, জাতিগত নিধনের এই চেষ্টার কারণে ওই অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির ঝুঁকিও রয়ে যাচ্ছে।
রাজধানী নেইপিদোতে এক সংবাদ সম্মেলনে মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থং তুন বলেছেন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী দুই সদস্য চীন এবং রাশিয়ার সঙ্গে তারা যোগাযোগ করছেন। যাতে করে রাখাইন সংকটের জেরে নিরাপত্তা পরিষদে জাতিসংঘের যে কোনো ধরনের অবরোধ আরোপের প্রস্তাবনা ঠেকানো সম্ভব হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘এই বিষয়টি যাতে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে না তোলা হয় সেজন্য আমরা বন্ধুত্বপূর্ণ কিছু দেশের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। চীন আমাদের বন্ধু ও রাশিয়ার সঙ্গেও আমাদের একই ধরনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং নিরাপত্তা পরিষদে এই বিষয়টিকে নেওয়া সম্ভব হবে না।’
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ দিনে বাংলাদেশে প্রায় ১ লাখ ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। গত বছরের অক্টোবরে রাখাইনে একই ধরনের সহিংসতার সূত্রপাত ঘটে। সেসময়ও একইভাবে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে বাংলাদেশ সীমান্তে। দুই দফার এই সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রায় দুই লাখ ৩৩ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছে বলে ওই তথ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বলেছেন, গত বুধবার শতাধিক রোহিঙ্গাবাহী অন্তত ৩টি নৌকা নাফ নদে ডুবে গেছে। ওই নৌকাডুবির ঘটনায় ৩ শিশুসহ ৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড।