দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পানির নিচে নদী, এমন কথা শোনার পর যে কেও আশ্চর্য হতে পারেন। তবে আশ্চর্য হলেও মেক্সিকোতে ঘটেছে এমন অদ্ভুতুড়ে কাণ্ড। পানির নিচে পাওয়া গেছে নদী!
যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে সেটি তোলাই হয়েছে পানির নিচে! গাছের গুঁড়ি, কাদামাটি সবকিছুই রয়েছে পানির নিচে, এটিকে পানির প্রবাহ বলে মনে হলে সেটি আসলে গ্যাসীয় হাইড্রোজেন সালফাইডের সঙ্গে লবণাক্ত পানির মিশ্রণে তৈরি হয়েছে নদী। এই হাইড্রোজেন সালফাইডের নদীটি পরিষ্কার পানির প্রায় ১০০ ফুট গভীর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীটিকে ডাকা হচ্ছে Cenote Angelita কিংবা Little Angel নামে। এই নদীটি মেক্সিকোর ইউকাটান পেনিসুলায় অবস্থিত।
Cenote Angelita নামে এই নদীর অবস্থান একটি গুহার অভ্যন্তরে। এর উৎপত্তি হয়েছে একটি পাথর সরে যাওয়ার মাধ্যমে। ক্রমশ ভূমিক্ষয় হয়ে ও স্বাদু এবং নোনা উভয় পানির আবদ্ধ অবস্থা তৈরি হয়ে বর্তমান পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১৮০ ফুট গভীর জলধারের মতো গুহাটি ভ্রমণ পিপাসুদের নৈসর্গিক অভিজ্ঞতার স্বাদ দেয়।
গুহার জলীয় অংশের উপর দিকে ১০০ ফুটের কাছাকাছি অংশ হলো মিঠাপানি। তবে কোনো ডুবুরি আরও গভীরে নেমে গেলে স্বচ্ছ পানির স্তরের নিচে একটি প্রবাহিত স্তরও দেখতে পাবেন। এই প্রবাহটিকেই বলা হচ্ছে পানির নিচের নদী।
এই ধরনের পানির ভেতরে পানির স্রোতের ঘটনাকে বলা হয়ে থাকে হ্যালোক্লাইন (halocline) যেখানে স্বাদু পানি ও নোনাপানি পরস্পরের সংস্পর্শে এসে দুটি আলাদা বিভাজনের স্তর তৈরি করে থাকে। এই ধরনের হ্যালোক্লাইনগুলো সাধারণত সমুদ্রের নিকটবর্তী গুহায় দেখা গিয়ে থাকে। ভূভাগ হতে বৃষ্টি ইত্যাদির মাধ্যমে গুহার উপরিভাগে স্বাদা কিংবা মিঠা পানি জমা হয়। অপরদিকে সমুদ্র হতে লোনাপানি ঢুকে নিচের দিকে পৃথক স্তর তৈরি করে। এতেকরে একধরনের দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি হয়। যখন স্বাদু পানির স্তরটিকে বায়ুমণ্ডল ও নিচের পানি নোনা পানির স্তরটিকে নদী কিংবা জলাশয় মনে করা হয়। নিচের ছবি দেখলেই হ্যালোক্লাইনের গঠন বোঝা যাবে।
এই পানিনিমগ্ন আধারটি কি সত্যিই কী একটি নদী? এর উত্তর হলো না। হাইড্রোজেন সালফাইডের ওজন এর স্তরটিকে সাধারণত নিচে ডুবিয়ে রাখে। গাছে গুঁড়ি, পাড়ের কাদামাটি ইত্যাদির আবহে এটিকে একটি উন্মুক্ত নদীর মতোই দেখা যায়। নোনাপানি মিশ্রিত এই হাইড্রোজেন সালফাইডের স্তর উপরের স্তরটিকে বিক্ষুব্ধ না করে স্বাধীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তাই এটিকে প্রবাহিত নদীর মতোই দেখা যায়।
যে ছবিগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো তুলেছেন বিশ্বখ্যাত আলোকচিত্রী আনাতেলি বেলোশ্চিন।