দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিকিৎসকের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল হিসেবে আখ্যায়িত করলেন জীবন্ত কিংবদন্তি, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ ও লেখক স্টিফেন হকিং। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন বলে খবর বের হলে তিনি সংবাদ মাধ্যমে সরব হন।
স্টিফেন হকিং বলেছেন, ‘চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, আমি মারা যাচ্ছি, তাই তারা আমার লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রটি খুলে দিতে বলেন জেনকে (স্টিফেন হকিংয়ের প্রথম স্ত্রী জেন ওয়াইল্ড)। তবে জেন তাদের কথায় পাত্তায় দেয়নি। তিনি যন্ত্রটি খুলতে নিষেধ করেন।
স্টিফেন হকিং জোর দিয়ে বলেন, ‘আমি কেমবিজ্রে ফিরে যাবো। এর পরের নিবিড় পরিচর্যার সপ্তাহগুলো আমার জীবনের এক অন্ধকার সময়’। এভাবেই ২০১৩ সালের করা এক প্রামাণ্যচিত্রে বলছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি, বিশ্বখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ ও লেখক স্টিফেন হকিং।
গত ৮ জানুয়ারি ছিলো এই কিংবদন্তির ৭৬তম জন্মদিন। মজার বিষয় হলো, ১৯৬৩ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি মরণব্যাধি মোটর নিউরন ডিজিজ, যা এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এএলএস) আক্রান্ত হোন, চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে, দুই থেকে তিন বছর বাঁচবেন। আরও বলেছিলেন, হয়তো তিনি তাঁর ২৫তম জন্মদিনটি আর পাবেন না।
এর কারণ হলো, এই রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ মানুষই রোগ ধরা পড়ার তিন হতে চার বছরের মধ্যে মারা যান। তবে চিকিৎসকের ভবিষদ্বাণী ও সব অতীত ইতিহাসকে ভুল প্রমাণ করে স্টিফেন হকিং শেষ পর্যন্ত পা রাখলেন ৭৭ বছরে।
বেঁচে থাকলেও স্টিফেন হকিংয়ের কথা বলার, চলাফেরার ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে যায় মোটর নিউরন নামে এক ব্যাধি। তবে এতেও থেমে থাকেননি এই বিজ্ঞানী। ১৯৮৮ সালে তিনি লেখেন ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’। সারাবিশ্বে তাঁর এই বইটির এক কোটিরও বেশি কপি বিক্রি হয়!
যেহেতু স্টিফেন হকিং কথা বলতে এবং নড়াচড়া করতে পারেন না, তাই তিনি কথা বলে থাকেন ভয়েস সিনথেসাইজারের মাধ্যমে। তাঁর মুখের পেশির নড়াচড়ার অনুযায়ী কথা বলে দেয় যন্ত্র। এছাড়া গলার কম্পাংক এবং চোখের পাতার নড়াচড়ার মাধ্যমে তিনি কম্পিউটারে লিখতে পারেন কিংবা ভয়েস জেনারেটও করতে পারেন।
বিশ্বের প্রতিবন্ধীদের জন্যও এই পদার্থবিদ এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। ২০১২ সালের লন্ডন প্যারা অলিম্পিকেও স্টিফেন হকিং কথা বলেছেন। তাঁর এই প্রতিবন্ধিতা তাঁকে জীবনের নতুন এক লক্ষ্যের সন্ধান দেয় বলেও জানিয়েছেন তিনি । ওই প্রামাণ্যচিত্রে তিনি বলেছিলেন, ‘প্রতিদিনই আমার জীবনের জন্য শেষ দিন হতে পারে। তাই আমি প্রতি মিনিটকেই কাজে লাগাতে চাই।’
মাত্র দুই বছর সময় দেওয়ার পরও কীভাবে বেঁচেরয়েছেন স্টিফেন হকিংস? মার্কিন এএলএস সেন্টারের চিকিৎসা পরিচালক এবং নিওরোলজির সহকারী অধ্যাপক লিও ম্যাকক্ল্যাস্কি এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন । তিনি বলেছেন, এই মানুষটির ক্ষেত্রে একটা কথা বলা যায় যে, রোগটি অবিশ্বাস্যভাবে ভিন্ন ভিন্ন মানুষে ভিন্ন হয়ে থাকে। গড়ে বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ার দুই হতে তিন বছরের মধ্যে মারা যায় সেই রোগী।
কেও কেও অনেক দীর্ঘ জীবনও পেয়ে থাকে। জীবনের আশা নির্ভর করে মূলত দুটি বিষয়ের ওপর। মোটর নিউরনটি সচল রাখে শ্বাসযন্ত্রের পেশি। তাই সাধারণতভাবে শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়েই মারা যায় রোগীরা। মারা যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো, পেশির ক্ষয়, যে কারণে দেহে পুষ্টিহীনতা এবং পানিশূন্যতা দেখা দেয়। তাই এই দুটি সমস্যা না থাকলে আপনি হয়তো দীর্ঘজীবন পেলেও পেতে পারেন।
অদম্য প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী শুধু ৭৬ কেনো, শত বছর পূর্ণ করবেন ও বিজ্ঞানের জগৎকে আরও সমৃদ্ধ করবেন সে আশা আমরা করতেই পারি।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি একদল ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদের দাবি করেছেন যে, বিশ্বখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ‘স্টিফেন হকিং মারা গেছেন ৩৩ বছর আগেই’! ১৯৮৫ সালেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে হকিংয়ের মতো দেখতে অন্য একজনকে দেখিয়ে বলা হচ্ছে তিনি বেঁচে রয়েছেন। ওই সময় (১৯৮৫ সালে) তিনি নাকি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন। তখনই চিকিৎসকরা তার লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম বন্ধ করে দেন ও হকিং মারা যান। সে সময় তাঁর লাইফ সাপোর্ট যন্ত্রটি খুলে দিতে বলা হলেও তা খোলা হয়নি সেই বিষয়টিই এবার পরিষ্কার করছেন তিনি।
এই সংক্রান্ত একটি খবর “একদল ষড়যন্ত্রতত্ত্ববিদের দাবি: ‘স্টিফেন হকিং মারা গেছেন ৩৩ বছর আগেই’!” শিরোনামে দি ঢাকা টাইমস্ এ ১৫ জানুয়ারি প্রকাশিত হয়।