দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা আগে দেখেছি এমন দ্বীপের খবর যে দ্বীপে নারীদের প্রবেশ নিষেধ। কিন্তু এবার ঠিক এর উল্টো খবর। এমন এক দ্বীপপের খবর আমরা পেয়েছি যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষিদ্ধ!
আমরা আগে দেখেছি এমন দ্বীপের খবর যে দ্বীপে নারীদের প্রবেশ নিষেধ। জাপানের ওকিনোশিমায় অবস্থিত একটি দ্বীপ রয়েছে যার আয়তন শূন্য দশমিক তিন বর্গমাইলেরও কম। সেই দ্বীপে নারীদের প্রবেশ নিষেধ। শুধুমাত্র পুরুষরা যেতে পারেন সেই দ্বীপে। কিন্তু এবার নতুন খবর হলো এমন এক দ্বীপ যেখানে পুরুষদের প্রবেশ নিষেধ। কেবলমাত্র নারীরা যেতে পারবেন ওই দ্বীপে!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির কোল ঘেঁষে বহমান বাল্টিক সাগর। শীতল এই নীল জলরাশির উপকূলে সবুজে ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ; যা শান্ত, স্নিগ্ধ। এই দ্বীপের নাম ‘সুপার-শি’। ‘শি’ দেখেই আপনার মনে কৌতূহল জাগতে পারে এই দ্বীপটি নিয়ে। এর সঙ্গে কী তাহলে নারীদের কোনো সম্পর্ক আছে?
‘সুপার-শি’-এর সঙ্গে নারীদের সম্পর্ক রয়েছে তো বটেই। তবে তার চেয়ে বড় তথ্য হলো, এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পুরুষদের চোখে অধরাই থেকে যাবে। কারণ হলো এখানে ‘পুরুষ নিষিদ্ধ’! হয়তো মনে মনে আপনি ভাবছেন এটা কীভাবে সম্ভব? আর কেনোই বা এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে?
সাধারণ আমরা দেখি নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, এমন অনেক দ্বীপ। তবে ‘সুপার-শি’ দ্বীপে কি না তার একেবারেই উল্টো! তাহলে কী ওই ধরনের দৃষ্টান্ত মাথায় রেখেই কী শুধু নারীদের জন্য দ্বীপটি তৈরি করা হয়েছে? কিংবা দ্বীপে পুরুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে? এমন প্রশ্ন আসতেই পারে।
এই বিষয়টির সঠিক উত্তর জানতে হলে শুনতে হবে দ্বীপটির মালিক আমেরিকান উদ্যোক্তা ক্রিস্টিনা রোথের কথা। তিনিই এই দ্বীপটিতে পুরুষ নিষিদ্ধের মতো এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অবসর কাটাতে ক্রিস্টিনা রোথ একবার আমেরিকার একটি রিসোর্টে যান। সেখানেই রোথের মাথায় এই অভিনব চিন্তাটি আসে। কারণ হলো সেখানে গিয়ে পর্যটকদের আচার-আচরণ দেখে রোথের উপলব্দি হয় যে, নারী পর্যটকদের প্রতি পুরুষ পর্যটকদের আচরণটা মোটেও স্বাভাবিক না। কোথায় যেনো একটা অবহেলা, ক্ষোভ কাজ করছে সব সময়। পাশাপাশি তিনি খুব গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, নারীদের নিজের প্রতি যত্ন কিংবা মনোযোগ কোনোটিই নেই। তাদের সকল মনোযোগ পুরুষ সঙ্গীদের ওপর। তিনি দেখতে পান যে, কোনো নারী পর্যটক হয়তো মনোযোগ দিয়ে একটি কাজ করছেন। তবে কোনো সুদর্শন পুরুষ দেখলেই লিপিস্টিক দিতে শুরু করলেন।
তখন থেকেই রোথের চিন্তা শুধু নারীদের জন্যই তিনি একটি দ্বীপ বানাতে চান। যেখানে নারীরা তাঁরা নিজের মতো করে থাকবেন ও নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত রাখবেন। রোথের প্রথম চিন্তা ছিল অবকাশকেন্দ্রটি নিজের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গড়ে তুলবেন। সেই অনুযায়ী একটি পরিকল্পনা করে ফেলেন তিনি।
এরমধ্যে রোথের সঙ্গে এক ফিনিশিয় যুবকের সাক্ষাৎ হয়, তারপর দুজনের কথায়-কথায় তা হৃদয় দেওয়া-নেওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। প্রেমিকের সঙ্গে তার দেশ দেখতে গিয়ে রোথ ফিনল্যান্ডের প্রেমে পড়ে যান। কালবিলম্ব না করে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলেন, মার্কিন মুল্লুকে নয়, তিনি স্বপ্নের রিসোর্টটি বানাবেন ফিনল্যান্ডেই।
রোথ দেরি না করে ৮ দশমিক ৪ একরের ‘সুপার-শি’ দ্বীপকে বিশালবহুল অবসরকেন্দ্রে রূপ দিতে কাজ শুরু করেন রোথ। তিনি জানিয়েছেন, নারীদের অবসর যাপন এবং স্বাস্থ্যগত যত্নের সব ব্যবস্থাই থাকবে এই দ্বীপটিতে। নারীদের জন্য স্পা, ইয়োগার পাশাপাশি রান্নার ক্লাসও চলবে এই দ্বীপে।
রোথের ‘শুধু নারীদের জন্য’ এই অভিনব দ্বীপ বানানোর ক্ষেত্রে কোনো ‘পুরুষ-বিদ্বেষ’ মনোভাব কী আসলেও কাজ করেছে? এ প্রশ্নে রোথ বলছেন, না। পুরো ভাবনার পেছনে পুরুষদের প্রতি কোনো রকম বিদ্বেষ কাজ করেনি। বরং ক্রিস্টিনা রোথ জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে নারীদের অতিথি হয়ে পুরুষরাও হয়তো তার এই দ্বীপে আসতে পারবেন। তবে দ্বীপে প্রাধান্য পাবেন নারীরাই।
ইতিমধ্যে ‘সুপার-শি’ দ্বীপে ৫টি বিলাশবহুল কেবিন তৈরি হয়েছে। লক্ষ্য ১০টি কেবিনের। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী জুনেই যাত্রা শুরু করবে বিশ্বের প্রথম এই শুধু নারীদের জন্য তৈরি করা দ্বীপ।