দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কারাগার অর্থাৎ যেখানে কয়েদিরা বসবাস করেন সেই কারাগারও যে বিলাস বহুল হতে পারে তা কি কখনও চিন্তায় এসেছে? হয়তো আসেনি। তবে এটি বাস্তবে ঘটেছে। আজ রয়েছে এমনই একটি বিলাস বহুল কারাগারের গল্প!
আমরা জানি কারাগারে অত্যন্ত কষ্টদায়কভাবে জীবন-যাপন করতে হয়। সেখানকার পরিবেশ একেবারেই অন্যরকম। অনেকেই বলে থাকেন যেনো নরক বাস! কিন্তু আসলেও কী তাই? না সব কারাগারের পরিবেশ এক রকম নয়। বিশ্বজুড়ে এমন কিছু কারাগার রয়েছে যেখানে বন্দীদের জন্য থাকে সর্বোচ্চ আয়েশি অর্থাৎ বিলাসী আয়োজন। সেগুলো কখনও কখনও হার মানায় ধনকুবেরদের বিলাসী জীবনকেও! নরওয়েতে এমনই একটি কারাগার রয়েছে। এই কারাগারটির নাম হলডেন কারাগার।
যারা নানা ধরনের ছোট-বড় সামাজিক অপরাধ করেছেন, মামলায় জড়িয়েছেন। আবার তার বিচারের রায়ও হয়েছে, জেলেই তাকে থাকতে হবে। কিন্তু জেলে এসে পেয়েছেন এই বিলাসী জীবন! নিরপরাধ, খেটে খাওয়া মানুষের হয়তো তাদের দেখে হিংসা হবেই! কেনোইবা হবে না? এই কারাগারে থাকা কয়েদিদের বন্দী জীবন কাটাতে দেওয়া হয় কাঠের তৈরি পৃথক পৃথক কটেজ। এইসব কটেজে ডিশ টিভি চ্যানেলে নাটক দেখার ব্যবস্থার সঙ্গে আরও রয়েছে আলাদা সাউন্ড সিস্টেমও!
হলডেন কারাগারটি তৈরি করা হয়েছে দ্বীপের খুব কাছাকাছি। চমৎকার শান্ত লেকের পাশে শীতের সকালে উষ্ণ রোদ পোহাতে পোহাতে ল্যাপটপে গান শুনতে পারেন এখানকার কয়েদিরা! চাইলেই মাছও ধরতে চলে যেতে পারেন ওইসব লেকে! সেখানে রয়েছে ঘোড়া নিয়ে দৌড়ে খানিকটা আসার সুযোগও! বরফে স্কি করতেও যেতে পারেন এখানকার কয়েদিরা!
খুব বেশিদিনের কথা নয় ২০১০ সালের কথা। নরওয়েতে হলডেন কারাগারের যাত্রা শুরু হয় সে সময়টিতে। টাইম ম্যাগাজিন এই কারাগারকে বলা হয় ‘আয়েশি সংশোধন কেন্দ্র’! কয়েদিদের ঘরগুলো নানা রঙে রাঙানো রয়েছে। থাকার ঘরগুলোর সঙ্গে এটাচট গোসলখানায় লাগানো রয়েছে দামি দামি সিরামিক টাইলস। বড় পর্দার টিভি, ফ্রিজ, দামি দামি আসবাবপত্র দিয়ে তাদের রুমগুলোও গোছানো। জেলে থাকা মানুষগুলো যেনো বুঝতেই না পারে তারা জেলে রয়েছেন! তাই তাদের ঘরের জানালায় কোনো গ্রিল কিংবা লোহার শিকও নেই।
কারারক্ষীদের দুর্ব্যবহার যেনো বন্দীদের ওপর খারাপ প্রভাব না ফেলে সে কারণে পৃথক কোর্স করানো হয় কারারক্ষীদের! হলডেন কারাগারের অর্ধেক কারারক্ষীই হলো নারী। নানা অপরাধ করে জেল খাটতে আসা বন্দীদের জন্য রয়েছে সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থাও। তাদের জন্য আধুনিক হাসপাতাল দেখলে যে কেও বিস্মিত হবেন। সেখানে রয়েছে সিনেমা হল। বাস্কেটবলসহ খেলাধুলার জন্য পৃথক কোর্ট-মাঠও!
কারারক্ষীদের বেশির ভাগেরই হাতেই কোনো অস্ত্রই নেই। বন্দীদের জেলজীবন যখন শেষ হয়ে যায়, তখন বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাদের প্রায় সবাই বলে থাকেন, এখানে তো বেশ আরাম-আয়েশেই ছিলাম!
এই কারাগারটির আরাম-আয়েশ দেখলে মনে হবে যেনো আপনি কদিনের জন্য এখানে বেড়াতে এসেছিলেন। বেড়ানো শেষ তাই এখন বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। সত্যিই এমন কারাগার থেকে বের হয়ে কয়েদিরা কী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে না। তারা কী আবারও অপরাধ করবে? এখানে ফিরে আসার জন্য!
দেখুন ভিডিওটি