দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘নরকের দুয়ার’ বলে একটি কথা প্রচলিত আছে। তবে সেটি প্রবাদ বাক্য হিসেবেই আমরা দেখে থাকি। তবে এবার বিজ্ঞানীরা সেই ‘নরকের দুয়ারের’ রহস্যভেদ করলেন!
আজকের কথা নয়, প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বের একটি গ্রেকো-রোমান মন্দিরের ভয়ে শহরের বাসিন্দারা তটস্থ হয়ে থাকতো। বর্তমান তুরস্কে অবস্থিত মন্দিরটির পাথুরের ফটকটি পেরোলেই একটি ভারি কুয়াশায় ঢাকা গুহায় অশুভ শক্তির প্রভাব দেখা যেতো। গুহার ভেতরে পাঠানো হলো গরু-মোষ শুয়ে পড়ে ছটফট করে মরে যেতো, তবে মন্দিরের পুরোহিতের কিছু হতো না।
কেও কেও বলতো, পাতালের রক্তপিপাসু দেবতা প্লুটো ওখানে বিরাজ করছেন। আবার কেও বলতো পুরোহিত অতিপ্রাকৃত শক্তিতে এই কাজটি করছেন।
সম্প্রতি আর্কিওলজিকাল অ্যান্ড অ্যানথ্রোপলজিকাল সাইন্সেস-এ প্রকাশিত একটি নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এর খুব পার্থিব একটি ব্যাখ্যা।
গবেষণাপত্রটিতে বলা হয়, গুহার ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাসই বিভিন্ন প্রাণীর মৃত্যুর জন্য মূলত দায়ী। আগ্নেয়গিরির প্রাণীকুল গবেষক হার্ডি পফ্যাঞ্জ একদল বিজ্ঞানী নিয়ে গুহাটি পরীক্ষা করেছেন। গুহা হতে নিঃসৃত গ্যাস ওই এলাকার গভীর একটি ফাটল হতে উঠে আসতো। সেখানে মাটি থেকে যতোই নিচে যাওয়া হতো, কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ততোই বাড়তে থাকতো।
গবেষকরা বলেছেন, ভূ-পৃষ্ঠে থাকা গুহামুখের বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ হলো ৪%। সেখান থেকে নিচে যেতে থাকলে তা একসময় ৫৩%-তে গিয়ে পৌঁছায়।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়েছে, গ্যাস পরীক্ষা করার একটি বহনযোগ্য যন্ত্র নিয়ে বিজ্ঞানীরা মন্দিরে গিয়ে দেখেন যে, গুহার যতো গভীরে যাওয়া যায় মারাত্মক কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ ততোটাই বাড়তে থাকে।
কার্বন ডাই অক্সাইড অক্সিজেনের চেয়েও ভারি, সে কারণে তা যেকোনো স্থানে অক্সিজেনের নিচে জমা হয়। দেখা যায় কোনো বাড়িতে কার্বন ডাই অক্সাইড লিক করলে সেখানকার উপরের তলাগুলোর চাইতে বেসমেন্ট বেশি ক্ষতিসাধিত হয়।
দেখা যায় যেসব প্রাণীর নাক-মুখ মাটির কাছাকাছি থাকে, সেগুলো এভাবে জমে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে খুব বেশি গ্রহণ করে। তবে ঠিক তাদের পাশে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের নাক আসলে মাটি হতে উপরে থাকায় মানুষের নিঃশ্বাসের সঙ্গে এই গ্যাস শরীরে বেশি একটা প্রবেশ করতে পারে না।
জানা যায়, ২০১৩ সালে তুরস্কের দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের পামুকালেতে পুন:আবিষ্কৃত গুহাটি প্রাচীনকালে হিয়েরাপোলিসেরই অংশ ছিল। রোমান দেবতা প্লুটোর নামে গুহাটির নামকরণ করা হয় প্লুটোনিয়াম।
ঠিক তখন হতেই মানুষের ধারণা হয়, এটি হলো পাতালের নরকে যাওয়ার প্রবেশপথ। সেখানে পশু বলি দিলে দেবতাকে সন্তুষ্ট করা যায় বলে মনে করতো সেখানকার অধিবাসীরা। পশু বলি দেওয়ার সময় তা দেখতে সেখানে অনেক মানুষ জমাও হতো। সেই দৃশ্য দেখে মনে করতো এটি দেবতারই গুহা।
গ্রিক ভূগোলবিদ স্ট্র্যাবো গুহাটির বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন যে, ‘এই স্থানটির বাস্প এতো বেশি ঘন যে, মাটি প্রায় দেখাই যায় না। ষাঁড় সেখানে নিয়ে ঢুকার পর মাটিতে পড়ে যায়। বের করে আনলেই দেখা যায় ষাড়টি মরে গেছে।’
গুহায় পুরোহিতরা প্রবেশ করলেও স্ট্র্যাবো লক্ষ্য করেছেন যে, ‘তারা যতোক্ষণ সম্ভব তাদের নিঃশ্বাস বন্ধ করে রাখেন।’
ইউনেস্কো বর্তমানে স্থানটিকে গরম পানির ঝর্নার পর্যটনস্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে দুই হাজার বছর পরেও এই স্থানটিতে যাওয়া পর্যটকদের সাবধান থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন গবেষকরা। ২০১৩ সালে খনন কাজ চালানোর সময় প্রত্নতাত্ত্বিকরা দেখতে পান যে, গুহার গভীরে প্রবেশ করলে অনেক পাখিও মারা যায়। আর তখন থেকেই গবেষণার কাজ শুরু হয়। গবেষকরা যে ধারণাটি করেছিলেন বাস্তবে গিয়ে তার প্রমাণও পেয়েছেন। কার্বন ডাই অক্সাইড অক্সিজেনের কারণেই যে এমনটি হচ্ছে সেটি তারা বুঝতে পারেন।