দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সত্যিই শিশুটিকে দেখলে যে কারও মায়া হবে। এমন সুন্দর ও নিরপরাধী শিশুকি কোনো অপরাধ করতে পারে? ‘ইনোসেন্ট’ এই শিশুটি যেখানে যায় সেখানেই নাকি আগুন লাগে! তাই তাকে বলা হচ্ছে পিশাচ।
ডেইলি মেইল এর এক খবরে বলা হয়েছে, পেইন্টিংটি দেখলে মনে হবে শিশুটিকে কেন্দ্র করে এটি আঁকা হয়েছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ইনোসেন্ট’ বা নির্দোষ একজন শিশু। রাজ্যের বিষণ্ণতা ও অবলীলায় তাকিয়ে থাকা ছেলেটিকে দেখলে যে কারো মায়া হবে। তবে এই শিশুটির প্রতি প্রকৃতির কী নির্মম পরিহাস! এই শিশুটিকেই নাকি মনে করা হয় অভিশপ্ত, পিশাচ। সে যেখানে যায় সেখানেই নাকি আগুন লাগে। তার চেয়ে অভাগা আর কে আছে? চোখের সামনে আগুনে মাকে ভস্মিভূত হতে দেখেছে এই শিশু। এরপর কান্নাই যেনো তার নিত্য সঙ্গী হয়ে দেখা দিয়েছে।
আজকের কথা নয়, সেই ১৯৮৮ সালের ঘটনা। ঘটনাস্থল হলো ইংল্যান্ডের হ্যাসোয়েল। সেখানে এমোস পরিবারের বাড়িতে হঠাৎ করে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। রহস্যময় ওই অগ্নিকাণ্ডে বাড়িটির প্রায় পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পূর্বেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় সাজানো-গোছানো পুরো বাড়িটি।
ফায়ার কর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা যখন আগুনে ছাই হয়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ সরাতে শুরু করেন তখন তারা একটি ফ্রেমে বাঁধানো পোট্রেটের সন্ধান পান তারা। এই পোট্রেটটি ছিল কান্নারত এক বালকের।
ওই বালকটি ছিল খুবই সুন্দর, যার চোখ হতে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। স্বভাবতই শিশুটির চেহারাও ছিল বিষণ্ণ। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো আগুনের দোর্দণ্ড আগ্রাসনে বাড়ির সবকিছু যেখানে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, সেখানে পোট্রেটটি ছিল পুরোপুরি অক্ষত। যে কারণে উদ্ধারকর্মীরাও ভড়কে গিয়েছিলেন ওই সময়।
তবে সেবারের ঘটনাটি ওই অবাক হয়ে যাওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল। কে জানতো এরসঙ্গে জড়িত আছে আরও অনেক রহস্য! এরপর আরও একবার বিস্ময়ের জন্ম দেয় ওই পোট্রেটটি। এবারের ঘটনা হলো ব্র্যাডফোর্ড শহরে। এবারও অগ্নিকাণ্ড ঘটলো। পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ হতে আবারও এক কান্নারত ছেলের ছবি পাওয়া গেলো।
তখনও ছবিটি ছিল ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে একেবারেই অক্ষত অবস্থায়। ঘটনাটি ফলাও করে প্রকাশ পায় স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে। সংবাদপত্রগুলো এই বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য জেঁকে ধরে ইয়োর্কশায়ারের তৎকালীন ফায়ার সার্ভিস প্রধানকে। প্রথমে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানালেও পরবর্তী সময় তিনি একটি বিবৃতিও দিয়েছিলেন।
বিবৃতিতে তিনি উল্লেখ করেন, পরপর বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল হতে একই ছবি অক্ষত পেয়েছেন দমকল বাহিনীর কর্মীরা। এই স্বীকারোক্তির পর সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল ছবিটি কী অশুভ? এটি ভূত বা প্রেতাত্মা কি না? এ বিষয়ে তিনি কোনোরকম মন্তব্য করেননি।
এবার ১৯৯৮ সালে ডাবলিনের এক বাড়িতে অগ্নিকাণ্ড ঘটলো। সেখানেও এই একই ছবি অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়! সমস্যার বিষয়টি হলো, এই অভিশপ্ত ছবির ছেলেটির পরিচয় কিংবা ছবিটি কে এঁকেছিলেন, সে বিষয়ে কিছুই জানা যাচ্ছিল না।
ডাবলিনের ওই ঘটনার ৩ বছর পূর্বে ১৯৯৫ সালে ডেভন শহরের একজন স্কুলশিক্ষক, যিনি একইসঙ্গে প্রখ্যাত একজন গবেষক জর্জ ম্যালোরি দাবি করেন, তিনি নাকি ছবিটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।
ওই শিক্ষক জানান যে, একজন বৃদ্ধ স্প্যানিশ পোস্টকার্ড শিল্পী ফ্র্যাঙ্কট সেভিল এই শিশুর ছবিটি এঁকেছিলেন। তিনি নাকি মাদ্রিদে থাকতেন। ১৯৬৯ সালে ওই শিল্পী মাদ্রিদের রাস্তায় ছবিতে আঁকা ছোট ছেলেটিকে নাকি ঘুরে বেড়াতে দেখেন। ছেলেটি নাকি কখনই কথা বলতো না। তার চোখে থাকতো রাজ্যের বিষণ্ণতা। সেভিল ওই ছেলেটির ছবি আঁকেন।
জানা যায়, এক পাদ্রী নাকি ওই ছেলেটিকে চিনতে পারেন। তিনি বলেন যে, ওই ছেলেটির নাম ডন বনিলো, যে নিজের চোখে তার নিজের বাবা-মাকে পুড়ে ছাই হতে দেখেছিলো। পাদ্রী আরও বলেছেন যে, ছেলেটিকে এক জায়গায় বেশি দিন যেনো থাকতে দেওয়া না হয়। কারণ হলো যেখানেই সে কিছুদিন অবস্থান করে, সেখানে নাকি রহস্যজনকভাবে আগুন লেগে যায়। এজন্য গ্রামবাসী ছেলেটিকে ‘পিশাচ’ বলে অভিহিত করে।
তবে ছেলেটির পরিচয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেলেও ইউরোপজুড়ে অগ্নিকাণ্ড ও তারসঙ্গে অশুভ এই ছবি উদ্ধারের কোনো ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।