দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজের সন্ধান পাওয়া গেছে। পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ ‘জ়ারকন’-এর বয়স ধরা হচ্ছে ৪২৪ কোটি বছর! ওই আগ্নেয় শিলা রয়েছে পূর্ব ভারতের ওড়িশায়।
পৃথিবীর বয়স ধরা হয় আনুমানিক ৪৬০ কোটি বছর। এবার যে-আগ্নেয় শিলার মধ্যে পৃথিবীর প্রাচীনতম খনিজ ‘জ়ারকন’-এর খোঁজ পাওয়া গেছে, তার বয়স মনে করা হচ্ছে ৪২৪ কোটি বছর! ওই আগ্নেয় শিলাটি রয়েছে পূর্ব ভারতের ওড়িশায়।
এক দল বাঙালি ভূতত্ত্ববিদ প্রায় সাড়ে তিন দশক পূর্বেই এর হদিস পেয়েছিলেন। তবে বিলেতের বিজ্ঞানীদের বিরোধিতায় সেই তত্ত্ব এতোদিন জোরালো হয়নি। এবার সেই পুরনো তত্ত্বকেই আরও জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন দুই বাঙালি ভূবিজ্ঞানী। ‘নেচার’ পত্রিকার প্রবন্ধে তারা লিখেছেন, জ়ারকন-সমৃদ্ধ ওড়িশার ওই আগ্নেয় শিলার অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণ বিশ্বে পানির আবির্ভাবের ইতিহাসে নতুন তথ্য তুলে ধরতে সক্ষম হবে।
গবেষণার অন্যতম বিজ্ঞানী, মালয়েশিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্বের শিক্ষক রজত মজুমদার জানিয়েছেন, সব থেকে পুরনো জ়ারকন পাওয়া যায় পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায়। তবে সেটি আগ্নেয় শিলা ছিলো না। ওড়িশার চম্পুয়ায় পাওয়া জ়ারকনটি রয়েছে গ্রানাইট আগ্নেয় শিলার মধ্যে। সেদিক থেকে এই শিলাও প্রাচীনতম শিলা। এই খনিজ তৈরি হয়েছে লাভা হতে।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ১৯৮১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের ভূতত্ত্বের দুই শিক্ষক আশিসরঞ্জন বসু এবং অজিতকুমার সাহা পূর্ব ভারতের এই আগ্নেয় পাথরের বয়স ৩৮০ কোটি বছর বলে দাবি করে ‘সায়েন্স’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তবে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল বিজ্ঞানী সেই দাবির বিরোধিতা করে জানিয়েছেন, বাঙালি গবেষকদের হিসেবে গড়মিল রয়েছে। ওই আগ্নেয় পাথরটি ৩৩০ কোটি বছরের পুরনো। এতোদিন সেই দাবিকে নস্যাৎ করতে পারেননি বাঙালিরা। ১৯৯৫ সালে আবারও একটি আন্তর্জাতিক গবেষণাপত্রে অজিতবাবু ও আরও কিছু ভারতীয় বিজ্ঞানী দাবি করেন যে, এই পাথরটি ৩৫০ কোটি বছরের পুরনো।
সংবাদ মাধ্যমকে রজতবাবু বলেছেন, কলেজে পড়ার সময় হতেই এই পাথর নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়। পরবর্তীকালে আশুতোষ কলেজ ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটে প়ড়ানোর সময় বিষয়টি নিয়ে সবিস্তার গবেষণা চালানোর চেষ্টা করেছিলাম। সেই সময় আমার ছাত্রী ত্রিস্রোতা চৌধুরীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। এই ত্রিস্রোতাই ‘নেচার’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধের মূল লেখিকা। সেইসঙ্গে রয়েছেন এক চিনা বিজ্ঞানী, ইউশেং ওয়ান।
রজতবাবু আরও জানান, এই পাথর বিশ্লেষণ করার জন্য প্রয়োজন ‘সেন্সিটিভ হাই রেজুলিউশন আয়ন মাইক্রোস্কোপ’। সেই যন্ত্র এই দেশে নেই। বেজিংয়ে ওই চীনা গবেষকের সঙ্গে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেন ও তাকে গবেষণায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাবও দেন। চীনা প্রতিষ্ঠানের সাহায্যেই গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে।
বাঙালি এই গবেষকদের আক্ষেপ হলো, ভূতত্ত্বের গবেষণায় খুব বেশি সরকারি সাহায্য পাওয়া যায় না। সরকার তৎপর হলে অনেক নতুন নতুন তথ্য বেরিয়ে আসতো। প্রাচীনতম পাথর আবিষ্কারের পরে বিষয়টি সরকারের অনুধাবনে আসবে সেটিই মনে করা হচ্ছে।