দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১৫ মে এই আল-নাকবা দিবস পালন করা হয় ফিলিস্তিনে। এই নাকবা দিবসটি আসলে কী? এর ইতিহাসই বা কী সেই বিষয়টি আজ জেনে নিন।
ফিলিস্তিনিরা গাজা সীমান্তে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলের সঙ্গে বিক্ষোভ করে আসছে। এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে গত সোমবার প্রাণ হারায় ৬০ জনের মতো ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারী। তাই ফিলিস্তিনের ইতিহাসে এটি আরও একটি শোকাবহ দিন। কারণ ফিলিস্তিনের ইতিহাসে একই দিনে এতো মানুষের মৃত্যু এর আগে ঘটেনি।
পরের দিন মঙ্গলবারও সেখানে বিক্ষোভ হয়। এদিকে ১৫ মে দিনটিকে ফিলিস্তিনিরা পালন করে আল-নাকবা দিবস বা বিপর্যয়ের দিবস হিসেবে। এই দিন হতেই ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে শুরু করে।
নাকবা দিবসের নেপথ্যে
এই নাকবা দিবসের উৎপত্তি হয়েছিলো ১৯৪৮ সালের ১৫ মে। তখন শুরু হওয়া আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ হতে। এর ঠিক একদিন আগে, ১৪ মে ইসরায়েল নিজেদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে।
সেই সময় ওই এলাকাটি ছিল ব্রিটেনের নিয়ন্ত্রণে। ম্যান্ডেট প্যালেস্টাইন নামে তখন সেখানে একটি বিশেষ ব্যবস্থা চালু ছিল। সেটি যখন প্রায় শেষ হওয়ার পথে ঠিক তখনই ইসরায়েলকে ঘোষণা করা হয় স্বাধীন একটি রাষ্ট্র হিসেবে।
যে এলাকায় ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করা হয়েছিলো, ইসরায়েলি বাহিনী সেখান থেকে বেশিরভাগ আরবকেই বহিষ্কার করে, বা তারা সেখান থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।
১৯৪৮-১৯৪৯ সাল এই দুই বছরের আরব- ইসরায়েল যুদ্ধের সময় সাড়ে ৭ লাখ ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে। এরপর ১৯৬৭ সালের জুন মাসে আরব এবং ইসরায়েলের মধ্যে আবারও যুদ্ধ হয়। সেই সময় জর্ডান নদীর পশ্চিম তীর এবং গাজা ভূখণ্ড হতে আরও হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ে।
জানা যায়, বর্তমানে অন্তত ৫০ লাখ ফিলিস্তিনি জাতিসংঘে শরণার্থী হিসেবে নিবন্ধিত। তাদের বেশিরভাগই বাস করে জর্ডান, গাজা ভূখণ্ডের পশ্চিম তীর, সিরিয়া, লেবানন ও পূর্ব জেরুসালেমে। এদের এক তৃতীয়াংশ বসবাস করে শরণার্থী শিবিরগুলোতে।
এই দিনটি স্মরণ করতে প্রতিবছরই ফিলিস্তিনিরা এই নাকবা দিবসে প্রতিবাদ বিক্ষোভের আয়োজন করে থাকে। দিবসটি উপলক্ষে তারা জড়ো হয় ইসরায়েলি সীমান্তের নিকটে এবং দিনটিকে ঘিরে ইসরায়েলের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়ে থাকে। নাকবা দিবসকে কেন্দ্র করে দুবার বড়ো ধরনের সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে।
ফিলিস্তিনিদের প্রধান দাবি হলো তাদের জমিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার। এই দাবির ভিত্তিই হলো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৪৮ সালে গৃহীত একটি প্রস্তাব।
যে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, “যেসব শরণার্থী তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে চাইবে ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করবে তাদের অবশ্যই সেখানে যাওয়ার অনুমতি দিতে হবে।”
অথচ ইসরায়েলের বক্তব্য হলো, ৫০ লাখ শরণার্থীকে ফিরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। কারণ সেরকম কিছু হলে তারাই ৮৫ লাখ জনসংখ্যার দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে ও ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েলের সমাপ্তি ঘটে যাবে।
বিবিসির খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি এবং ফিলিস্তিনি নেতারা উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতার পর শরণার্থী সঙ্কট সমাধানের ব্যাপারে একমত হয়েছেন। তবে সেই শান্তি আলোচনাই এখন অসম্ভব এক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যার জন্য সেখানে রক্তপাত এক যেনো নিত্যদিনের ঘটনা। সমগ্র বিশ্ববিবেক এর অবসান দেখতে চাই।