দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহাশূন্যে এক ব্ল্যাক হোল রাক্ষস যে আবার উলঙ্গ, সেটি প্রমাণ করলেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। বেইজিংয়ে কাভলি ইনস্টিটিউট অব অ্যাস্ট্রনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিক্স-এর চন্দ্রচূড় চক্রবর্তী ও মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ-এর সুদীপ ভট্টাচার্য তাদের আবিষ্কার ঘোষণা করা হয়েছে বিখ্যাত জার্নাল ‘ফিজিক্যাল রিভিউ’-তে।
আনন্দবাজার পত্রিকার এক রিপোর্ট এই সংক্রান্ত একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে। ব্ল্যাক হোল প্রকৃতপক্ষে ভারি নক্ষত্রের প্রেত অবস্থা। নক্ষত্রের অগ্নিকুণ্ড চালু থাকলে তাপের কারণে সেটি ফুলে-ফেঁপে বড় হতে চায়। আবার উল্টোদিকে নক্ষত্রে উপস্থিত প্রচণ্ড পরিমাণ পদার্থ মহাকর্ষের ক্রিয়ায় সেটিকে সঙ্কুচিত করতে চায়। এই দুই বিপরীত ক্রিয়ার ভারসাম্যই হলো নক্ষত্রের জীবন। কোনও তারার অগ্নিকুণ্ডই চিরকাল স্থায়ী হতে পারে না। আগুন নিভলে সেটি ফুলে-ফেঁপে আয়তনে বাড়ার প্রবণতা উধাও হয়ে যায়। তখন কেবলমাত্র গ্র্যাভিটির নিষ্পেষণ।
ভারি তারায় অনেক পদার্থ থাকে বলে তার বেলায় ওই অন্তর্মুখী চাপও থাকে প্রচণ্ড। তখন নক্ষত্রের কেন্দ্রে একটা শাঁস, যার ঘনত্ব এক অপরিসীম। এর বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘সিঙ্গুলারিটি’। সিঙ্গুলারিটির চার দিকে একটি এলাকা পর্যন্ত ওর তীব্র গ্র্যাভিটিজনিত আকর্ষণ তখন বজায় থাকে। ওই এলাকার কোনও কিছু, এমনকি আলোও তখন এলাকার বাইরে আসতে পারে না। এ রকম এলাকার সীমানা বা দেওয়ালকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজ়ন। এই দেওয়াল অবশ্যই কাল্পনিক। এটি প্রচণ্ড গ্র্যাভিটির সীমানা।
এখন প্রশ্ন হলো, যদি সিঙ্গুলারিটি ঘিরে ওই কাল্পনিক দেওয়াল বা ইভেন্ট হরাইজ়ন তৈরি না-হয়? এমন একটা দশার কথা আলবার্ট আইনস্টাইনও কল্পনা করেছিলেন। সিঙ্গুলারিটি ঘিরে কোনও পর্দা নেই বলে তা ‘নেকে়ড সিঙ্গুলারিটি’ কিংবা উলঙ্গ সিঙ্গুলারিটি। চন্দ্রচূড় ও সুদীপের দাবি হলো, মৃত তারা জিআরও জে১৬৫৫-৪০ প্রকৃতপক্ষে ও-রকম একটা উলঙ্গ সিঙ্গুলারিটি। মৃত এই নক্ষত্র সম্পর্কে অন্য এক অনুসন্ধান চালাতে গিয়ে চন্দ্রচূড় ও সুদীপ তারাটির এই দশার কথা টের পেয়েছেন।
বিষয়টি হলো, যে কোনো ব্ল্যাক হোলের মতো জিআরও জে১৬৫৫-৪০ লাট্টুর মতোই ঘুরছে। তিন দল জ্যোতির্বিজ্ঞানী ওই ঘোরার তিন প্রকার মান পেয়েছেন। কেনো এই তিন মান, সেই রহস্যভেদে নেমেছিলেন চন্দ্রচূড় ও সুদীপ। তাদের গণনা বলছে, যদি জিআরও জে১৬৫৫-৪০-এর মধ্যে অদ্ভুতুড়ে পদার্থ ‘গ্র্যাভিটোম্যাগনেটিক মনোপোল’ থেকে থাকে, তাহলেই ওই মৃত নক্ষত্রের লাট্টুর মতো ঘোরার ওই তিন রকম মান পাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন হলো গ্র্যাভিটোম্যাগনেটিক মনোপোল কী? মনোপোল হলো এক-মেরু চুম্বক। যে কোনও চুম্বকেরই থাকে দুই মেরু- উত্তর ও দক্ষিণ। একটা চুম্বক কেটে দু’টুকরো করলে এক-মেরুওয়ালা দুটো চুম্বক পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় দু-মেরুওয়ালা দু’টো চুম্বক।
উল্লেখ্য যে, আজ নয় সেই ১৯৩১ সালে নোবেলজয়ী ব্রিটিশ পদার্থবিদ পল ডিরাক এক-মেরু চুম্বকের অস্তিত্ব কল্পনা করেছিলেন। সেই মনোপোল বাস্তবে আজ পর্যন্ত শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। ওই মনোপোলের অনুকরণেই বর্তমানে বিজ্ঞানীরা কল্পনা করেছেন গ্র্যাভিটোম্যাগনেটিক মনোপোল। দণ্ডাকৃতি এক রকমের পদার্থ, যার কোনো ভর নেই, তবে তা লাট্টুর মতো ঘুরছে। অদ্ভুতুড়ে ওরকম কোনও পদার্থ যে আগে কোথাও শনাক্ত হয়নি, তা বলাই বাহুল্য।
এ দিকে জিআরও জে১৬৫৫-৪০-র ঘোরার তিন রকম মানের উৎস খুঁজতে গিয়ে চন্দ্রচূড় এবং সুদীপ বুঝেছেন, ওরমধ্যে গ্র্যাভিটোম্যাগনেটিক মনোপোল রয়েছে। তাছাড়া ওই মৃত তারা আবার এক নেকেড সিঙ্গুলারিটিও। এক রহস্য ভেদ করতে গিয়ে দুই বিচিত্র বস্তুর সন্ধান পেলেন বিজ্ঞানীরা। অর্থাৎ যাকে বলে এক ঢিলে দুই পাখি!