দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে হজরত নিজামুদ্দিন (র:) দরগার ভেতরের মাজারে কেনো মহিলাদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না, দরগা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের কাছে সেই কৈফিয়ত তলব করেছে দিল্লি হাইকোর্ট।
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ভারতের পুনে-র একদল আইন অনুষদের ছাত্রী গত সপ্তাহে দিল্লি বেড়াতে এসে হযরত নিজামুদ্দিন দরগায় গেলে তাদেরকে মাজারের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
সম্প্রতি ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কেরালার শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী বয়সের মহিলাদের প্রবেশের অনুমতি দিয়ে যে রায় দিয়েছেন, তার আলোকেই ওই ছাত্রীরা দরগা কর্তৃপক্ষের ‘বৈষম্যে’র বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দাখিল করেছে।
ওই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার, দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকার, দিল্লি পুলিশ এবং হজরত নিজামুদ্দিন দরগার কাছে এই বিষয়ে তাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য জানতে চেয়েছেন।
ভারতের সংবাদ সংস্থা পিটিআই বলেছে, দিল্লি হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি রাজেন্দ্র মেনন এবং বিচারপতি ভি কে রাও-কে নিয়ে গঠিত একটি বেঞ্চ আগামী বছরের ১১ এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে তাদের জবাব দিতে আদেশ দিয়েছে।
অপরদিকে সুপ্রিম কোর্টের শবরীমালা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে শীর্ষ আদালতে যে আবেদন জমা হয়েছে, তার শুনানিতে কী হয় সে দিকেও দিল্লি হাইকোর্ট নজর রাখবে বলে বিচারপতিরা এদিন বলেছেন।
উল্লেখ্য, হজরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া ছিলেন ত্রয়োদশ শতকের একজন বিখ্যাত সূফী সাধক, দিল্লির বিখ্যাত নিজামুদ্দিন দরগা গড়ে উঠেছে তাঁর সমাধিস্থলকে কেন্দ্র করেই।
শুধু মুসলিমরাই নয়, অন্যান্য ধর্মের বহু মানুষও এটিকে পবিত্র তীর্থস্থান বলেই গণ্য করেন। দেশ-বিদেশের লক্ষ লক্ষ ভক্ত অনুরাগীরা প্রতিবছর এই দরগা দর্শনে আসেন।
পুনে-র ওই ছাত্রীরা বলছেন, দরগা চত্বরে তারা প্রবেশ করতে পারলেও যখন দেখেন যে তার একেবারে ভেতরে নিজামুদ্দিন আউলিয়ার কবরটিকে ঘিরে যে ভবন রয়েছে- সেখানে মেয়েদের পা রাখাও নিষেধ, তারা এতে ভীষণ অবাক হয়ে যান।
‘লাইভ ল’ ম্যাগাজিনকে ওই ছাত্রীরা জানান, “মেয়েদের ভেতরে ঢোকা বারণ, সেই মর্মে একটি নোটিশও বাইরে লটকানো রয়েছে। তারা জানান, মেয়েরা মাজারে ঢুকতে পারবেন না, শুধুমাত্র ঊঁকি দিয়ে দেখতে পারবেন মাজারের ভেতরে পুরুষরা কী করছেন।”
এই ধরনের ‘বৈষম্যমূলক’ রীতির বিরুদ্ধে দিল্লি পুলিশের সাহায্য চেয়েও পাননি বলে তারা অভিযোগ করেছেন।
যে কারণে বাধ্য হয়েই ওই ছাত্রীরা দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হয়েছেন বলে তাদের আইনজীবী কমলেশ কুমার মিশ্র সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, দেশটির সুপ্রিম কোর্ট প্রায় আড়াই মাস আগেই সবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মেয়েদের ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। তবে কেরালায় মন্দিরের ভক্তসমাজ ও বিজেপির তুমুল বাধার কারণে আজ পর্যন্ত ওই বয়সের কোনও মহিলা ওই মন্দিরে ঢুকতেই পারেননি।
কেরালার রাজ্য সরকারের সমর্থন এবং পুলিশের নিরাপত্তা নিয়েও জনাকয়েক মহিলা শবরীমালার ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন – তবে তাদেরও শেষ পর্যন্ত মন্দিরের গর্ভগৃহের অনেক দূর হতেই ফিরে আসতে হয়।
হজরত নিজামুদ্দিন দরগার মাজারেও মেয়েদের প্রবেশের অধিকারকে কেন্দ্র করে সবরীমালার মতোই আবার কোনও বিতর্ক বা আন্দোলন শুরু হয় কি না, বর্তমানে সেটিই দেখার বিষয়।