দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিশ্ববাজারে প্যালেডিয়াম ধাতুর দাম বেড়েছে। গত দুই সপ্তাহে এই ধাতুর দাম লাফিয়ে ২৫ শতাংশেরও বেশি দাম বেড়েছে, গত বছরের তুলনায় যার মূল্য এখন দ্বিগুণ বলা যায়! যা স্বর্ণের থেকেও বেশি।
প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক আউন্স (২৮.৩৫ গ্রাম) প্যালেডিয়ামের দাম ২ হাজার ৫শ’ ডলার! যে হারে দাম বাড়ছে তাতে করে শীঘ্রই এই ধাতুর দাম কমার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই প্যালেডিয়াম ধাতুটি আসলে কী? কী কাজে এটি ব্যবহার করা হয়? এর দামই বা কেনো হু হু করে বাড়ছে?
প্যালেডিয়াম দেখতে আসলে চকচকে সাদা। এটি মূলত প্লাটিনাম ধাতুর গোত্রভুক্ত। প্যালেডিয়াম ধাতুর গোত্রে রুথেনিয়াম, অসমিয়াম, রেডিয়াম ও ইরিডিয়ামও রয়েছে। রাশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা হতে বিশ্বের বেশিরভাগ প্যালেডিয়াম পাওয়া যায়। খনি হতে অন্যান্য ধাতু বিশেষ করে প্লাটিনাম ও নিকেল হতে নিষ্কাশিত উপজাতই হলো এই প্যালেডিয়াম ধাতু।
গাড়ির গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ ‘ক্যাটালিটিক কনভার্টার’ তৈরির জন্য মূলত বাণিজ্যিকভাবে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই ক্যাটালিটিক কনভার্টার গাড়ির দূষিত গ্যাস নির্গমন কমাতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। প্যালেডিয়ামের ৮০ শতাংশের বেশি এই যন্ত্রে ব্যবহার করা হয় যেটি কিনা বিষাক্ত গ্যাস কার্বন মনোঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইডকে কম ক্ষতিকর নাইট্রোজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড এবং জলীয় বাষ্পে রূপান্তরিত করে থাকে। সম্প্রতি এই ধাতুর দাম এতোই বেশি হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী গাড়ির ক্যাটালিটিক কনভার্টার চুরির ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে।
এদিকে লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ বলছে যে, ২০১৯ সালের প্রথম ৬ মাসে যে পরিমাণ চোর ধরা পরেছে, সেটি গত বছরের তুলনায় ৭০ শতাংশেরও বেশি!
চাহিদার তুলনায় যোগান কম হওয়ার কারণে প্যালেডিয়াম ধাতুর দাম বাড়ছে। ২০১৯ সালে যে পরিমাণে এই ধাতু উৎপাদন করা হয় তখনই পূর্বাভাস দেওয়া হয় যে, আগামী ৮ বছরে বিশ্বে এর যে পরিমাণ চাহিদা হবে তার অনেক গুণ নিচে এর যোগান রয়েছে।
দাম বাড়ার কারণে খনি শ্রমিকদের প্লাটিনাম এবং নিকেলের চেয়ে প্যালেডিয়াম উৎপাদনের প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। তবে আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে যে, এই ঘাটতি হয়তো থেকেই যাবে। কারণ হলো দক্ষিণ আফ্রিকার যে দেশটি ৪০ শতাংশের কাছাকাছি উৎপাদন করতো গত সপ্তাহে তারা বলছে যে, প্লাটিনাম গোত্র যার মধ্যে প্যালেডিয়ামও রয়েছে তার উৎপাদন কমে ১৩.৫ শতাংশের মধ্যে নেমে এসেছে। ২০১৯ সালের নভেম্বরের সঙ্গে ২০১৮ সালের নভেম্বরের তুলনা করলে এই পরিমাণ খুবই কম।
এদিকে গাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে প্যালেডিয়ামের চাহিদা ব্যাপক আকারে বেড়ে গেছে। এর পেছনে অনেক কারণও রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারের কাছ থেকে বিশেষ করে চীনে পেট্রোল চালিত গাড়ি হতে বায়ু দূষণ কমানোর নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে রয়েছে।
ঠিক একই সময় ইউরোপে গাড়ি থেকে ডিজেল নির্গমন নিয়ে যে কেলেঙ্কারি হয়েছে সেটারও প্রভাব পড়েছে ব্যাপক। যে কারণে গ্রাহকরা ডিজেল চালিত গাড়ি হতে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে, যেখানে মূলত ক্যাটালিটিক কনভার্টারের প্লাটিনাম ব্যবহার করা হতো। তারা বর্তমানে পেট্রোল চালিত গাড়ির দিকেই ঝুঁকছেন, যেখানে কনভার্টরে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আবার এই মাসের শুরুর দিকে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তিতেও প্যালেডিয়ামের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা যায়।