দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবসর সময় কাটানোর জন্য ইতিহাস ঐতিহ্যের সান্নিধ্যে যেতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন নারায়ণগঞ্জের সোনাকান্দা দুর্গ। ইতিহাস সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞতাও হবে।
নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্বদিকে অবস্থিত প্রাচীন এক জল দুর্গের নামই হলো সোনাকান্দা দুর্গ। ধারণা করা হয় যে, ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন বাংলা সুবেদার মীর জুমলা বাংলার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জলদস্যুদের আক্রমণ হতে রক্ষার উদ্যেশ্যেই ঢাকার কাছাকাছি যে ৩টি জল দুর্গ নির্মাণ করেন তাদের মধ্যে সোনাকান্দা কেল্লা বা দুর্গ হলো অন্যতম। বাংলার বার ভূঁইয়ার অন্যতম বীর ঈশা খাঁ তৎকালীন সময় এই দুর্গটি ব্যবহার করতেন।
মোঘল আমলে নির্মিত এই কেল্লাকে ঘিরে নানা ধরনের কল্পকাহিনী প্রচলিত। কথিত রয়েছে যে, রাজা কেদার রায়ের মেয়ে স্বর্ণময়ী লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নান করাকালীন সময় একদল ডাকাত তাকে অপহরণ করলে ঈশা খাঁ তাকে উদ্ধার করে কেদার রায়ের কাছে ফেরত পাঠান। তবে মুসলমানের তাবুতে রাত কাটানোর কারণে তার জাত গেছে এই অভিযোগ তুলে স্বর্ণময়ীকে ফেরত নেওয়া হয়নি। এরপর হতে স্বর্ণময়ী ঈশা খাঁর তাবুতেই থাকতেন তিনি। মনে করা হয়, তার নামানুসারেই দুর্গের নামকরণ করা হয়েছে সোনার কান্দা কিংবা সোনাকান্দা দুর্গ।
প্রায় ২ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে বিস্তৃত চতুষ্কোণ আকৃতির দুর্গের অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের অংশ ১৫.৭০ মিটার এবং ১৯.৩৫ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট, যার চারপাশে ৬.০৯ মিটার পুরুত্ব বিশিষ্ট উঁচু সুরক্ষা প্রাচীর রয়েছে। দুর্গটিতে একটি বিশাল কামান প্ল্যাটফর্ম এবং উত্তরমুখী প্রবেশ তোরণ রয়েছে। বিশাল আয়তনের আত্নরক্ষাকারী প্রাচীর এবং পশ্চিম দিকে জলদস্যুর আক্রমণ হতে রক্ষাকারী উঁচু মঞ্চই হলো দুর্গের দুইটি উল্লেখযোগ্য অংশ। প্রাচীরের মধ্যে গোলা নিক্ষেপের জন্য সেখানে রয়েছে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র। এছাড়াও পশ্চিম দেওয়ালের মধ্যবর্তী স্থানে দুর্গের মূল বেদীও রয়েছে। বর্তমানে এই দুর্গটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব এবং জাদুঘর অধিদপ্তরের অধীনে একটি সংরক্ষিত নিদর্শন হিসেবে রয়েছে।
যাবেন কিভাবে
রাজধানী ঢাকার গুলিস্থান হতে বাসে নারায়ণগঞ্জ যাওয়া যাবে। নারায়ণগঞ্জ শহরের ২ নং লঞ্চ ঘাট হতে নৌকা দিয়ে বন্দর উপজেলার ঘাটে নেমে রিকশায় সোনাকান্দা দুর্গে আপনি যেতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
ঢাকা হতে নারায়ণগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে সন্ধ্যার মধ্যে আবার ঢাকায় ফিরে আসা সম্ভব। তবে রাত্রিযাপনের প্রয়োজনে নারায়ণগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল মেহরান, হোটেল নারায়ণগঞ্জ, হোটেল সোনালি, হোটেল সুগন্ধা, হোটেল সুরমা এবং হোটেল রুপায়ন ইত্যাদিকে আপনি ইচ্ছে করলেই বেছে নিতে পারেন।
খাবেন কোথায়
নারায়নগঞ্জ শহরের রেলগেট এলাকায় বেশ কিছু খাবারের হোটেল রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরে মনির রেস্তোরাঁ, শাহী রেস্টুরেন্ট, নিরিবিলি রেস্টুরেন্ট, খাবার ঘর, নিউ ঘরোয়া ও বিভিন্ন বিরিয়ানি হাউজের মতো স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানসমূহ
নারায়ণগঞ্জের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের মধ্যে বিখ্যাত হলো পানাম নগর, সোনারগাঁও জাদুঘর, মুড়াপারা জমিদার বাড়ী, জিন্দা পার্ক, মায়াদ্বীপ, বাংলার তাজমহল এবং গোয়ালদি মসজিদ উল্লেখযোগ্য জায়গা।
তথ্যসূত্র: https://vromonguide.com