দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোভিড-১৯ রোগ সৃষ্টিকারী নতুন করোনা ভাইরাসের রহস্য উন্মোচনে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের সব বিজ্ঞানীরা। এবার বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন যে, মানব শরীরের রোগপ্রতিরোধকারী শক্তিশালী কোষগুলোকেই (ইমিউন সেল) মেরে ফেলতে সক্ষম এই করোনা ভাইরাস।
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে চীনের সাংহাই ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের এক দল গবেষক জানিয়েছেন যে, মানবদেহের যে কোষগুলো ভাইরাস মারতে পারঙ্গম, নতুন করোনা ভাইরাস উল্টো সেগুলোকেই আরও মেরে ফেলছে।
অর্থাৎ করোনা ভাইরাস মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থায় (ইমিউন সিস্টেম) ব্যাপক আঘাত হানছে, যেমনটি দেখা গেছে এইডস রোগের জন্য দায়ী এইচআইভি ভাইরাসের ক্ষেত্রে।
সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক লু লু ও নিউইয়র্ক ব্লাড সেন্টারের গবেষক জ্যাং শিবো যৌথভাবে এই গবেষণার কাজ করেছেন বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
গবেষকরা ল্যাবে উদ্ভাবিত টি-লিম্ফোসাইট (টি-কোষ) কোষের সঙ্গে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির আচরণ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করেছেন।
কারণ হলো টি-কোষ শরীরে প্রবেশকারী যেকোনো ক্ষতিকর ভাইরাসকে শনাক্ত এবং নির্মূল করতে প্রধান ভূমিকা পালন করে থাকে।
গবেষকরা প্রথমে একটি ভাইরাস আক্রান্ত কোষকে চিহ্নিত করেছিলেন। তারপরে কোষের ঝিল্লিতে একটি গর্ত করে সেখানে বিষাক্ত রাসায়নিক প্রবেশ করানো হয়েছিলো।তখন দেখা গেলো- বিষাক্ত রাসায়নিক ভাইরাস এবং কোষ উভয়কে মেরে ফেলেছে ও সেগুলো মূলত টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
গবেষকরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন যে, টি-কোষটি করোনা ভাইরাসের সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে। তারা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনে এমন একটি কাঠামো খুঁজে পান, সংস্পর্শে আসার পরপরই যেগুলো ভাইরাল এনভেলপ এবং কোষঝিল্লির মধ্যে ফিউশনের সৃষ্টি করেছিল।
পরে ভাইরাসের জিন টি-কোষে প্রবেশ করে ও আশ্রয় নেয়। এভাবেই সেটি মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে মূলত অকার্যকর করে দেয়।
গবেষকরা এই পরীক্ষাটি অপর করোনা ভাইরাস সিভিয়ার অ্যাকুইটি রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) ক্ষেত্রেও করেছিলেন। তবে টি-কোষকে আক্রান্ত করার মতো সার্স ভাইরাসের সক্ষমতা নেই বলেই প্রতীয়মান হয়।
জানা গেছে, চলতি সপ্তাহেই পিয়ার-রিভিউড জার্নাল সেল্যুলার অ্যান্ড মলিকিউলার ইমিউনোলজি’তে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়।
বেইজিংয়ের সরকারি হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত জনৈক চিকিৎসক বলেছেন, ‘নতুন গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য আমাদের যা জানাচ্ছে তা হলো, মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সরাসরি আক্রমণকারী আরও এক মারাত্মক ও শক্তিশালী ভাইরাসের খোঁজ পাওয়া যায়।
নতুন করোনা ভাইরাস নিয়ে তাই আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা এবং বিস্তর গবেষণা চালিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বেল জানিয়েছেন গবেষকরা।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।