দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সারাদিনে চা, কফি খাওয়ার অভ্যাস শরীরে পানির অভাবকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। এতে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। সুস্থ থাকতে পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। সারাদিনের হাজার ব্যস্ততার মধ্যে তাহলে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন কীভাবে?
পর্যাপ্ত পারিমাণ পানির অভাবে শরীরে বাসা বাঁধে নানা ধরনের অসুখ। শরীরের চাহিদা মতো পানি না খাওয়া যতোটা সমস্যার, অতিরিক্ত পানি খেয়ে ফেলাও কিন্তু তেমনই মুশকিলের। তাই শরীরের চাহিদা জেনে সেই অনুপাতে পানি খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে কাজের ফাঁকে খুব তেষ্টা না পেলে পানি খাওয়ার কথা অনেকেরই কিন্তু মনেই থাকে না। আমাদের শরীরের সব ধরনের জৈবিক কাজকর্ম স্বাভাবিক রাখা, ত্বক এর জেল্লা ধরে রাখা, শরীরের শক্তির জোগান দেওয়া ও হজমশক্তি স্বাভাবিক রাখা ইত্যাদি নানা কাজে পানির প্রয়োজন হয়।
গরমের সময় পানি খাওয়ার প্রবণতা থাকলেও শীত এবং বর্ষায় পানি খাওয়া আরও অনেক কমে যায়। বিশেষ করে এই বর্ষার সময়। তাপমাত্রার পারদ কিছুটা হলেও কম। যে কারণে গ্রীষ্মের চেয়ে এই সময় তৃষ্ণার অনুভূতি কিছুটা হলেও কম থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির অভাবে নানা শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বর্ষায় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেকটা বেশি থাকে। যে কারণে ঘাম একটু বেশিই হয়। যে কারণে শরীরে তরল পদার্থের (বডি ফ্লুইড) মাত্রা কমেও যেতে থাকে। তাই বেশি করে পানি খাওয়া দরকার। এছাড়া ওসারা দিনে চা, কফি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এগুলো পানির অভাবকে আরও প্রকট করে তুলতে পারে। নানা রকম শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়। তাই সুস্থ থাকতে পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
সারাদিনের ব্যস্ততার মধ্যে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে
দিনের শুরুটাই হোক পানি দিয়ে
দিনের শুরুটাই করুন পানি দিয়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠেই চা-কফিতে চুমুক দেওয়ার পূর্বে, দু’গ্লাস পানি খেয়ে নিতে পারেন। এই অভ্যাস শরীর থেকে সব টক্সিন পদার্থ বের করে দিতে পারে, হজমশক্তিও বাড়ায়।
পানির বোতল সঙ্গে রাখুন
হাতের কাছে পানির বোতল রাখার সুবিধা কিন্তু অনেক। কতোটা পানি কতোক্ষণে খেলেন, তারও একটা হিসাব পাবেন এতে। তাই যেখানেই যান না কেনো, হাতের কাছে একটি বোতল রাখুন। অনেক সময় পানি তেষ্টা পেলেও সামনে পানির জোগান না থাকায় খাওয়া হয়ে ওঠে না আমাদের। এই কৌশল সেই সমস্যা থেকেও রক্ষা করে। দিনের বেশির ভাগ সময় আমরা অফিসেই থাকি। তাই অফিস ডেস্কে একটি বড় মাপের বোতল কিনে রাখতে পারেন।
তরলে আস্থা
পানির অভাব পূরণ করতে পারে স্বাস্থ্যকর তরল। স্বাদবদলের কারণে বার বার পানির বদলে ডালের পানি, ডাবের পানি, দইয়ের ঘোল, সব্জি কিংবা ফলের রসও ইচ্ছে করলে খেতে পারেন। যে কারণে স্বাদের সঙ্গে পুষ্টিগুণও পাবেন। তবে পানির বদলে নরম পানীয় বা কোনও প্রকার এনার্জি ড্রিংকই খাবেন না। এই সবকিছুতে অতিরিক্ত মাত্রায় চিনি থাকে, যে কারণে শরীরের উল্টো আরও ক্ষতি করে।
অ্যালার্ম সেট করা
সব সময় না হলেও কোনও কোনও সময় পানি খাওয়ার জন্য অ্যালার্ম সেট করুন। এতে পানি খাওয়ার সময় কখনও আপনার ভুল হবে না। পানি খাওয়ার কথা ভুলে গেলেও অ্যালার্মের মাধ্যমে মনে পড়ে যাবে।
অ্যাপ
আপনি কী টেক স্যাভি? তাহলে পানি খাওয়ার কথা মনে রাখতেও প্রযুক্তির শরণ নিতে পারেন। দিনে পানি খাওয়ার কথা মনে করানো থেকে শুরু করে সারাদিনে কতো পরিমাণ পানি খাওয়া উচিত ছিল, কতোটা খেলেন সে সব মেপে জানিয়ে দেবে এমন অনেক অ্যাপও রয়েছে। ব্যবহার করতে পারেন তেমন একটি অ্যাপ।
স্বাদবদল
সাধারণ পানি খেতে ইচ্ছে না করলে ‘ডিটক্স ওয়াটার’-এও ভরসা রাখতে পারেন। আগের দিন রাতে পানির মধ্যে শসা, পুদিনা, পাতিলেবুর টুকরো রেখে দিতে হবে। পরের দিন ওই পানি বোতলে ভরে অফিসে নিয়ে যান। অফিসে কাজের মাঝে ‘ডিটক্স ওয়াটার’-এ চুমুক দিতে থাকুন মাঝে-মধ্যে।
পানিকে না বলবেন না:
কেও যদি আপনার জন্য পানি নিয়ে আসে, তাকে কখনওই ফিরিয়ে দেবেন না। হোটেলে গিয়ে হোক বা কারও বাড়িতেই হোক, কেও যদি পানি নিয়ে আসে, তাহলে সেই পানি ফিরিয়ে না দিয়ে খাওয়ার অভ্যাস শুরু করুন। সামনে কাওকে পানি খেতে দেখলেই আপনিও খানিকটা পানি খেয়ে নিতে পারেন। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org