দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকেই সকালে ঘুম থেকে উঠেই চা খাওয়ার বদলে চুমুক দেন ঈষদুষ্ণ পানিতে। এই অভ্যাস কতোটা স্বাস্থ্যকর? আদতেও কোনও উপকার আছে কী? বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা এই বিষয়ে কী বলেন? আজ জেনে নিন সেই বিষয়টি।
অনেকেই মনে করেন, সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে ঈষদুষ্ণ পানি খেলেই বোধহয় ওজন ঝরবে দ্রুত। অনেকের রয়েছে এমন বিশ্বাস। যদিও এই ভাবনা একেবারে ভুলও নয়। তবে খালি পেটে গরমপানি খেলে শুধু শরীরে বাড়তি মেদ ঝরে যায়, সেটি কিন্তু ঠিক নয়। এর আরও অনেক স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে। রাতে ঘুমোনোর সময় টানা ৭-৮ ঘণ্টা পানি না খাওয়ার অভ্যাস তেষ্টা মেটাতেও সাহায্য করে, সেটিও নয়। আবার অনেকেই বুঝতে পারেন না ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়ার আদৌ কোনও উপকারিতা রয়েছে কি-না। এ সম্পর্কে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, ‘‘এমনিতেও আমাদের পেটের ভিতরের তাপমাত্রা, বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে অনেকটা বেশি থাকে। খাবার ঠিক মতো হজম হওয়ার জন্য পেটের ভিতরের তাপমাত্রা বেশি থাকাটা প্রয়োজন। ঈষদুষ্ণ পানি খেলে বিপাকহারও বাড়ে। এছাড়াও সারারাত পেট খালি থাকার কারণে অ্যাসিডও জমতে থাকে। গরম পানি সেই অ্যাসিড ধুয়ে দেয়। গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমানোর ক্ষেত্রেও গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস বেশ উপকারী।’’ একই মত দিয়েছেন পুষ্টিবিদ পম্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বিষয়ে পম্পিতা বলেন, ‘‘ঈষদুষ্ণ পানি খেয়ে দিন শুরু করা ভালো অভ্যাস। তবে এক-দু’দিন খেয়ে বন্ধ করে দিলে উপকার পাওয়া যাবে না। যে কোনও অভ্যাসই ধারাবাহিকভাবে বজায় থাকলে সুফল পাওয়া যাবে।’’
দিনের শুরু ঈষদুষ্ণ পানি খেলে উপকার মেলে সেটা প্রায় নিশ্চিত। তাহলে কী কী উপকার হয় ঈষদুষ্ণ পানি খেলে?
# শরীরে বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বেশির ভাগই যেহেতু পানি, তাই শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়লে শারীরবৃত্তীয় নানা ধরনের কাজে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সকালে হালকা গরম পানি খেলে এই সংক্রান্ত সমস্যা দূর হতে পারে।
# ঈষদুষ্ণ পানি খেলে শরীর থেকে টক্সিন বের করা সহজ হয়। শরীর হতে দূষিত পদার্থ ছেঁকে বের করতে সাহায্য করে কিডনি ও লিভার। তবে ছাঁকনিরও তো যত্নের প্রয়োজন হয়। ঈষদুষ্ণ পানি খেলে এই প্রত্যঙ্গগুলো স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে।
# আবার ওজন ঝরাতে চাইলেও বিপাকহার উন্নত করতে হবে। বিপাকহার উন্নত করতে গেলে অনেকেই নানা রকম পানীয় খান। সেই সব যদি নাও খেতে চান, তাহলে হালকা গরম পানি খেতে পারেন তাতেও কাজ হবে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org