দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার পর কোন কোন ওষুধ আপনি খাবেন? আর কোন কোন খাবারে রাখবেন ভরসা? এই সব বিষয়ে বিশদে আলোচনা করা হলো আজ।
দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। সকালের দিকে গরম থাকলেও রাতে ঠাণ্ডা হাওয়া বইছে। অনেক সময় ভোরের দিকে পড়ছে শিশির। ধীরে ধীরে শীতের অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতি। এমন আবহাওয়া বদলের সময় হঠাৎ করেই সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিছু ভাইরাস। যে কারণে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
তবে ঋতু পরিবর্তনের জ্বর নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে বারণ করেছেন কলকাতা শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা: রুদ্রজিৎ পাল। তার ভাষায়, ‘ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একাধিক পরিচিত ভাইরাসের দাপটে বর্তমানে জ্বর হচ্ছে। এইক্ষেত্রে কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে অনায়াসে এই সমস্যা থেকে সেরে ওঠা যাবে।’
ম্যাজিক ড্রাগ প্যারাসিটামল
জ্বর এলে কোনও দিকে না তাকিয়ে প্যারাসিটামল খাওয়া শুরু করে দিতে হবে। এইক্ষেত্রে দিনে ৩টি প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তাতেই শরীরের তাপমাত্রা কমে আসবে। সেইসঙ্গে ব্যথা, যন্ত্রণা থেকেও পাওয়া যাবে মুক্তি। জ্বরের পাশাপাশি সর্দি, কাশি থাকলে অ্যান্টিঅ্যালার্জিক ওষুধও খাওয়া যাবে। তবে ভুলেও নিজের বুদ্ধিতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে যাবেন না। ভাইরাল জ্বরে এর কোনও ভূমিকায় নেই। এর পাশাপাশি খাওয়া চলবে না কাশির সিরাপও। এই ভুলটা করলে বিপদ আরও বাড়তে পারে।
বমির ওষুধও
ভাইরাল ফিভারে আক্রান্ত অনেকের বমি পেতে পারে কিংবা বমি হতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে ডমপেরিডোন জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এমনকী ডমপেরিডোন ও প্যান্টোপ্রাজ়ল কম্বিনেশনের ওষুধ খেতে পারেন। তাতে বমি ভাবও কমবে, সেইসঙ্গে গ্যাস, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকেও দ্রুত মুক্তি পাবেন।
পানিপান মাস্ট
জ্বরের সময় ডিহাইড্রেশন কিংবা শরীরে পানির অভাব হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এই সময় পানিপানের পরিমাণ আরও বাড়াতে হবে। সেইসঙ্গে নিয়মিত খান ওআরএস পানি। হাতের কাছে ওআরএস না থাকলে লবণ-চিনির পানি করেও খেতে পারেন বলে জানিয়েছেন ডা: পাল। তবে সুগার, প্রেশার থাকলে যতোটা সম্ভব লবণ-চিনির পানি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। নইলে সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই আপনারা ওআরএস (খাবার স্যালাইন) খান।
বিশ্রাম নিন
ভাইরাল ফিভার শরীরের হাল বিগড়েও দিতে পারে। চেপে ধরে অত্যাধিক ক্লান্তি। তাই চেষ্টা করুন এই সময় একদম বিশ্রামে থাকার। জ্বর নিয়ে কখনও অফিসে যাবেন না। এমনকী বাড়িতেও ভারি কাজ করা চলবে না। সারাদিন শুয়ে-বসে কাটাতে হবে। তাতেই দ্রুত সমস্যা থেকে সেরে ওঠা যাবে।
বিপদ বাড়লে সাবধান হতে হবে
যদি কখনও জ্বর কিছুতেই কমতে না চাই, অনবরত বমি হতে থাকে, বারবার পানির মতো পায়খানা হলে, গায়ে-হাত-পায়ে খুব ব্যথা হলে, মাথা যন্ত্রণা বাড়লে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে করুন টেস্ট। এরপর তিনি যে ওষুধ দেবেন, তা খেয়ে চলুন। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org