দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কখনও পৃথক হতে চায় না শিবনাথ-শিবরাম। হেসে-খেলে দিন কাটাচ্ছে শিবনাথ-শিবরাম, তাদের মধ্যেকার ভালোবাসা তাদের জীবনি শক্তি।
শরীরের মাঝামাঝি তাদের জোড়া লাগানো। মাথা ও পা দুটি করে হলেও হাত চারখানা। এভাবেই দীর্ঘ এক যুগ (১২ বছর) ধরে হেসে খেলে দিব্যি বেঁচে আছে এই দুই ভাই। খাওয়া দাওয়া হতে শুরু করে সব কাজই তারা একসঙ্গে করে।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এমন অবস্থাতেই তারা সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়! চাইলে যেকোনো সময় অস্ত্রোপচার করে পৃথক হয়ে যেতে পারে জমজ ভাই শিবনাথ এবং শিবরাম। তবে তারা কখনও তা চায় না।
তারা জানিয়েছেন, আমরা কখনও পৃথক হতে চাই না। এভাবেই একসঙ্গে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত থাকতে চাই। বুড়োও হতে চাই ঠিক এভাবেই। শিবনাথ সাহ্ ও শিবরাম সাহর জন্ম মধ্য ভারতের রায়পুর হতে একশ’ কিলোমিটার দূরে, বালোদাবাজার লাভান নামক গ্রামে।
কোমর হতে জোড়া লাগানো অবস্থায়ই জন্ম নেয় এই দুই ভাই। তখন থেকেই গ্রামের সকলে এদেরকে দেবতা হিসেবে গণ্য করে। তবে দিনমজুর বাবা রাজ কুমার এবং মা শ্রীমতি সন্তানদের এমন অবস্থা দেখে চিন্তায় পড়ে যান। দিনের পর দিন তারা হাসপাতালে ছুটতে থাকেন।
একসময় এক চিকিৎসক তাদের জানিয়েছিলেন, এখন যেহেতু তারা খুব ছোট, তাই তাদের পৃথক করতে গেলে ঝুঁকিতে পড়তে হবে। তবে ১২ বছর বয়সে হলে তা সম্ভব হবে। তারপর হতেই বাবা-মায়ের অপেক্ষার পালা শুরু হয়। তবে যখন শিবনাথ-শিবরাম একসঙ্গে সব কাজ করে- তখন সে দৃশ্য তারা দেখে খুব খুশি হন। তারপরও যেনো দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না তাদের।
৫ কন্যা ও ২ পুত্রের জনক রাজ কুমার সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, সবাই আমার সন্তানদের এই অবস্থা দেখে মজা পায়। তবে কেবল আমিই জানি আমার সন্তানদের কতো সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টির সময় তাদের হাটতে অনেক কষ্ট হয়। যখন একজন হাঁটতে চায়, তখন অন্যজন বসে পড়ে। তবে এসব বিষয় নিয়ে দু’ভাই কখনও ঝগড়া করে না।
কখনও যদি শিবনাথ বলে খেলবে, তখন শিবরামও রাজী হয়। ধীরে ধীরে যখন শিবনাথ-শিবরাম বড় হলো তখন চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো তারা হাঁটা-চলা এবং কাজ করতে শিখতে থাকে। তারা নিজের কাজগুলো সব সময় নিজেরাই করে। খাওয়া, গোসল, জামা-কাপড় পর্যন্ত নিজেরা একাই পরে। তারা একজন আরেকজনকে চুল আচড়ে দেয়।
স্থানীয় একজন চিকিৎসক জানান, শিবনাথ-শিবরাম পুরোপুরি সুস্থ। তাদের মস্তিস্ক, ফুসফুস, হৃৎপিন্ড দুটি হলেও পাকস্থলী একটি। তারা চাইলেই পৃথক হতে পারে। তবে তারা কখনও একজন আরেকজনকে ছাড়তে চায় না।