দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঈশ্বরদীর বিজ্ঞানী মাহমুদা বাংলাদেশের জন্য গৌরব! অনবদ্য গবেষণার মাধ্যমে তিনি বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন!
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের জয়নগর গ্রামের সন্তান মাহমুদা সুলতানা মুনমুন। কেও কখনও ভাবতে পারেননি যে, একটি পাড়া গাঁয়ের এক তরুণীই এক সময় বৈশ্বিক পর্যায়ে তুলে ধরবেন ঈশ্বরদী তথা বাংলাদেশের নাম!
কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জটিল গণ্ডি পেরিয়ে বিজ্ঞানী মাহমুদা ন্যানো ম্যাটারিয়াল ও মহাকাশে ব্যবহারযোগ্য কোয়ান্টাম ডট স্পেক্ট্রোমিটার ডিভাইস আবিস্কার করে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসার আইআরএডি বর্ষসেরা উদ্ভাবক নির্বাচিত হয়েছেন মাহমুদা সুলতানা মুনমুন।
সেইসঙ্গে নাসার সাময়িকী ‘কাটিং এজ’-এর সাম্প্রতিক ইস্যুর প্রচ্ছদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে মাহমুদাকে নিয়ে। মূলত নাসার অধীনে গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারস ইন্টারনাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআরএডি) কর্মসূচির আওতায় যেসকল বিজ্ঞানী বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন, তাদেরকে বার্ষিকভাবে এই খেতাব দেওয়া হয়ে থাকে। এই বছর এই কর্মসূচিতে প্রযুক্তি উদ্ভাবন কাজে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন মাহমুদা সুলতানা। তিনি এই খেতাবটি জিতে নিলেন।
নাসা কর্মকর্তারাও উচ্ছ্বসিত মাহমুদাকে নিয়ে। তারা বলেছেন, এতো কম বয়সী কোনো মেয়েকে এর আগে তারা নাসায় কাজও করতে দেখেননি। নাসার প্রধান কর্মকর্তা পিটার হিউজেস বলেছেন, মাহমুদাকে আমরা বর্ষসেরা উদ্ভাবক মনোনীত করতে পেরে সত্যিই গর্বিত। কারণ সে নাসার যে সব কাজে অংশগ্রহণ করেছেন, তার প্রত্যেকটিতেই দিয়েছেন অসাধারণ সৃজনশীলতার বিশেষ পরিচয়। মাহমুদার চমৎকার পারদর্শিতায় আমরা মনে করছি, খুব শীঘ্রই মাহমুদা নাসার একজন ন্যানো টেকনোলজি বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠবেন।
মাহমুদার এমন অর্জনে উচ্ছ্বসিত ঈশ্বরদীর সর্বস্তরের মানুষসহ মাহমুদার খেলার সঙ্গীরা। মাহমুদার বাবা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম জাকারিয়া বলেছেন, ‘আমার মেয়ে নাসার আইআরএডি বর্ষসেরা উদ্ভাবক মনোনীত হওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত। এখন এলাকার মানুষের কাছে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা অন্য রকম সম্মানিত বোধ করছি।’
মাহমুদার চাচা ঈশ্বরদী উপজেলা চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু এ বিষয়ে বলেছেন, ঈশ্বরদীর জয়নগর গ্রামের মেয়ে হয়ে আমার পরিবার ও ঈশ্বরদী তথা দেশবাসীকে মাহমুদা অনন্য উচ্চতার আসনে আসীন করেছে। এতে জয়নগর গ্রামবাসীই শুধু নয়; সমগ্র ঈশ্বরদীবাসীর সঙ্গে দেশবাসীও গর্বিত।
মাহমুদার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কিশোরী বয়সেই মাহমুদা সুলতানা যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি ছোটবেলা হতেই অত্যন্ত মেধাবী। কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে পড়াশোনা শেষ করেন মাহমুদা। তারপর ২০১০ সালে মাহমুদা ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (এমআইটি) হতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর পিএইচডি লাভ করেন মাহমুদা। একই বছর এক জব ফেয়ারে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে তিনি নাসায় কাজের সুযোগ পেয়ে যান। তার বড় চাচাও নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারে ফিজিসিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। বর্তমানে মাহমুদা এবং তার দল এমআইটির অধীনে প্রোটোটাইপ ইমেজিং স্পেক্ট্রোমিটার তৈরিতে কর্মরত রয়েছেন।
এই কোয়ান্টাম ডট স্পেক্ট্রোমিটার সম্পর্কে জানা যায়, কোয়ান্টাম ডট বা বিন্দু মূলত অর্ধপরিবাহী এক ধরনের ন্যানোক্রিস্টাল, যা কখনও খালি চোখে দেখা যায় না। এটি মূলত আবিষ্কার হয় ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। এই বিন্দুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এর আকার এবং রাসায়নিক গঠনের ওপর নির্ভর করে তা আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য কতোটুকু শোষণ করবে তার উপর। সাধারণত স্মার্টফোনের ক্যামেরা, মেডিকেল ডিভাইস ও পরিবেশগত পরীক্ষার সরঞ্জাম তৈরিতে এই ন্যানোক্রিস্টাল ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
মাহমুদা সুলতানা তাঁর এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আমি বিশ্বাস করি যে, মহাকাশে ব্যবহারযোগ্য এই ক্ষুদ্রাকৃতির স্পেক্ট্রোমিটারের আকার আরও ক্ষুদ্র করার পাশাপাশি এর আরও উৎকর্ষ সাধন করা সম্ভব। যে কারণে এই প্রযুক্তি কৃত্রিম উপগ্রহ এবং যেসব স্থানে মানুষ যেতেই পারে না, সেখানে পাঠানোর ক্ষুদ্র যানবাহনে ব্যবহার করা খুব সহজ হবে। মাহমুদার তৈরি এই ক্ষুদ্রাকৃতির স্পেক্ট্রোমিটারে শোষণ বর্ণালিকে কাজে লাগানো হয়েছে। এতে করে এই যন্ত্রে মহাকাশের ধূলিকণা এবং গ্যাসীয় পদার্থ হতে বিকিরিত আলো কতোটা শোষণ হলো, তা পরিমাপ করা সম্ভব হয়েছে, তাতে করে বিভিন্ন তথ্যও পাওয়া সম্ভব হয়েছে।
এই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর জন্য আমরাও গর্বিত। আমরা তাঁর সাফল্য কামনা করছি।