দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানুষ মারা যাওয়ার পর তারসঙ্গে আর কোনো রকম সম্পর্ক থাকে না। সেটিই দুনিয়ার স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু আজ রয়েছে মৃতদের কবরে খাবার দেওয়া হয় এমন এক গ্রামের গল্প!
সেই দেশটি অন্য কোনো দেশ নয়, ভারত। ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের একটি গ্রামে ঢুকলে আপনার মনে হবে `মনে হয় কোনো কবরস্থানে এসে পরলাম! প্রশ্নটা মনে আসাই স্বাভাবিক। কারণ হলো অন্ধ্র প্রদেশের কুরনুল জেলার আইয়া কোন্ডা নামক গ্রামে প্রতিটি ঘরের সামনেই রয়েছে একটা বা দুটো করে কবর! সেই কবরের সামনে আবার খাবারও রয়েছে! কেনো এসব খাবার?
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, এই আইয়া কোন্ডা গ্রামটি জেলা সদর হতে প্রায় ৬৬ কিলোমিটার দূরে এক পাহাড়ের কোলে অবস্থিত। মালাদাসরী সম্প্রদায়ের প্রায় দেড়শ পরিবার এখানে বসবাস করে।
এই সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক আগে থেকেই এক রীতি প্রচলিত রয়েছে মৃত আত্মীয় পরিজনকে ঘরের সামনেই কবর দেওয়ার।
বাড়ির লোকজন প্রতিদিন কাজে-কর্মে যান এই কবরগুলো পার হয়েই। প্রতিদিন ওই কবরে পুজো ও প্রসাদ দেন পরিবারের জীবিত সদস্যরা। শুধু তাই নয়, বাড়িতে যা রান্না হয়, সেটিও কবরে না দিয়ে কেও তা মুখে তোলেন না!
গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান শ্রীনিবাসুলু গণমাধ্যমকে বলেছেন, “আধ্যাত্মিক গুরু নাল্লা রেড্ডি ও তার শিষ্য মালা দাসারী চিন্তলা মুনিস্বামী এই গ্রামটির উন্নয়নের জন্য নিজেদেরকে উজার করে দিয়েছেন। কঠিন পরিশ্রম করেছেন তারা গোটা গ্রামের উন্নয়নের জন্য। আবার প্রচুর অর্থও ব্যয় করেছেন। তাদের কাজকে শ্রদ্ধা জানাতেই গ্রামে তাদের একটি মন্দির রয়েছে, সেখানে পুজো হয় নিয়মিত। ওই গুরুদের সম্মান জানানোর মতোই নিজের পরিবারের মৃত সদস্যদেরও সম্মান জানাতে বাড়ির সামনেই তাদের কবর দেওয়ার রীতি প্রচলন রয়েছে এই গ্রামটিতে।”
পুজো দেওয়া হয় বা প্রসাদ দেওয়া হয় কবরগুলোতে শুধু তা নয়। বাড়িতে যদি কেও পাখা, টিভি-র মতো যন্ত্র কেনেন, সেগুলোও ব্যবহার করার পূর্বে প্রথমেই কবরের সামনে রাখা হয়!
শ্রীনিবাসুলু জানিয়েছেন, গ্রামের মানুষদের মনে যে অন্ধ বিশ্বাস রয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠা বেশ কঠিন ব্যাপার। তাই শিশু-কিশোরদের মধ্যে শিক্ষার বিস্তার ঘটানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা, যাতে এরা বড় হয়ে ওইসব অন্ধবিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারে।
শ্রীনিবাসুলু জানিয়েছেন, শিশুদের পড়াশোনা ও দেখভালের জন্য একটা অঙ্গনওয়াড়ী কেন্দ্রও খোলা প্রয়োজন। সেজন্য পাহাড়ের কোলে একটা ছোট জমির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে। মোট কথা অন্ধবিশ্বাস দূর করতে শিশুদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে চাই স্থানীয় পঞ্চায়েত।
অবশ্য গ্রামের সমাজপতি রঙ্গাস্বামী জানিয়েছেন, “বহু যুগ ধরে যে রীতি রেওয়াজগুলো আমরা পালন করে আসছি, সেটি যদি বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের সকলের ক্ষতি হতে পারে। আমরা তো চিন্তিত একটি কারণে যে ভবিষ্যতে এই গ্রামে তো কবর দেওয়ার জায়গাই থাকবে না। তখন কি হবে আমাদের!”