দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রিয়াল মাদ্রিদের সাথে নতুন চুক্তিতে সই করে বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ উপার্জনকারী ফুটবলারে পরিণত হওয়ার পথে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাদলদো। পাঁচ বছরের জন্য প্রায় ১৫৫ মিলিয়ন ইউরোর চুক্তি নিয়ে রোনালদোর প্রতিনিধিদের সাথে অগ্রীম আলোচনা শুরু করেছে রিয়াল মাদ্রিদ, যাতে সই করলে ট্যাক্স দেওয়ার পরে বাৎসরিক প্রায় ১৫ মিলিয়ন ইউরো আয় করতে যাচ্ছেন এই পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। সেক্ষেত্রে এটিই হতে যাচ্ছে ফুটবল ইতিহাসের সবচাইতে লোভনীয় চুক্তি।
রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে খেলা ৪ মৌসুমে ১৯৯ ম্যাচে ২০১ গোল করা রোনালদো গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করেই শোরগোল ফেলে দেন টুইটারের একটি বক্তব্যে যা ছিল, “রিয়াল মাদ্রিদে আমার চুক্তি নবায়ন নিয়ে সব খবরই ভুল।” তার কিছুদিন আগেই অবশ্য ২০১৫ তে শেষ হতে যাওয়া চুক্তির পরেও রিয়াল মাদ্রিদে থাকার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন তিনি।
গত সপ্তাহে বিশ্বকাপ বাছাই ম্যাচে পর্তুগাল রাশিয়াকে ১-০ গোলে হারাবার পর রোনালদো বলেন, “এখনো কারো সাথে আমার কথা হয়নি, তবে আমি জানি যে আমরা নতুন চুক্তি বিষয়ে একটা ঐক্যমতে পৌঁছাব। এই মূহূর্তে জাতীয় দলই সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।” মরিনহোর বার্নাব্যু ছেড়ে যাওয়ার সাথে যে তার ভবিষ্যতের কোন সম্পর্ক নেই তাও জানান দিয়েছিলেন তিনি মে মাসে, “মরিনহো কি করছে তা নিয়ে আমি চিন্তিত না, আমার চিন্তায় আছে রিয়াল মাদ্রিদ আর আমার ভবিষ্যৎ।” একসময়ের দারুণ সম্পর্ক থাকা মরিনহো আর রোনালদোর জুটিতে ফাটল ধরে জানুয়ারীতে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে মরিনহোর ট্যাকটিকাল সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে দুজনের কলহে।
গত মৌসুমের শেষে বার্নাব্যুর জীবনে রোনালদোর অসুখী থাকার বিষয়টা ভালমতই ছিল আলোচনায়। ব্যালন ডি অরের লড়াইয়ে ক্লাব থেকে জনসমর্থন না পেয়ে, সহখেলোয়াড় মার্সেলোর সাথে সম্পর্ক খারাপ হওয়ায় আর ক্লাবের দিক থেকে নতুন চুক্তি নিয়ে কোন কথা না উঠায় একরকম হতাশাগ্রস্তই ছিলেন তিনি। এখন অবশ্য সেই অবস্থাটা পাল্টেছে।
ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ পুনরায় রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি হওয়ার পর ২০০৯ এর গ্রীষ্মে রেকর্ড ৯৪ মিলিয়ন ইউরোয় ক্লাবে সাইন করান ম্যানইউর হয়ে খেলতে থাকা রোনালদোকে। বর্তমানে ট্যাক্স দিয়ে তাঁর আয় দাঁড়ায় বাৎসরিক ১০ মিলিয়ন ইউরোর মত। যখন রোনালদো ক্লাবে এসেছিলেন, তখন এক আইন অনুযায়ী স্পেনে ১০ বছরের কম থাকা বিদেশীদের যারা কিনা বাৎসরিক ১,২০,০০০ ইউরোর ওপর আয় করে থাকেন তাদের প্রচলিত শতকরা ৪৫ ভাগের জায়গায় ট্যাক্স দিতে হত আয়ের স্রেফ শতকরা ২৩ ভাগ। ম্যানইউ থেকে ২০০৩ এ স্পেনে এসে এই আইনের সুবিধা নেওয়া প্রথমদের একজন ছিলেন ডেভিড বেকহাম, এই আইনটিকে প্রায়ই ডাকা হয় “বেকহাম ল” বলে। কিন্তু সেই সুবিধা এখন আর নেই, আর রোনালদোকেও তাই নতুন চুক্তি হলে তাঁর আয় থেকে শতকরা ৫২ ভাগ ট্যাক্স হিসেবে দিতে হবে। ফলে রোনালদোর দাবিকৃত ১৫ মিলিয়ন ইউরোশুদ্ধ মাদ্রিদের এই পর্তুগিজের পেছনে বার্ষিক খরচ দাঁড়াবে প্রায় ৩১ মিলিয়ন ইউরোতে।
তবে রোনালদোর গুরুত্বটাও বোঝে রিয়াল মাদ্রিদ। সাম্প্রতিককালে নেইমারকে দলে ভিড়াতে পারেনি তারা, ডর্টমুন্ডের গুন্ডোগান আর লেভোনডোস্কি যুগলকেও দলে টানতে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যান্য ট্রান্সফার টার্গেটদের মধ্যে আগুয়েরো, ফ্যালকাওদেরও পাচ্ছেনা তারা, গ্যারেথ বেলকে আনা বিশাল খরচের বিষয়, এডিনসন কাভানি ক্ষেত্রেও সমস্যাটা দাম নিয়েই। রোনালদোর চুক্তি নবায়নটা তাই হয়ে উঠেছে আরো গুরুত্বপূর্ণ।
রিয়াল মাদ্রিদের সভাপতি পেরেজও রোনালদোকে আগামীতে ক্লাবেই দেখতে চান। তিনি জানিয়েছেন যে, রোনালদোকে কেন্দ্র করে রিয়াল মাদ্রিদ দল সাজাতে চান তিনি আর চান যেন রোনালদো বিশ্বের সর্ব্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া খেলোয়াড় হয়।
তাই তারা রোনালদোর বেতন বৃদ্ধির দাবী আমলে নিয়ে তাকে মেসির চাইতেও বেশি আয় করা খেলোয়াড়ে পরিণত করছেন। বোনাস ছাড়াই বার্সাতে বাৎসরিক ১৩ মিলিয়ন ইউরো আয় করেন মেসি, এর বাইরে মোনাকোতে ফ্যালকাও বাৎসরিক ১৪ মিলিয়ন ইউরো আর স্যামুয়েল ইতো আনঝি মাখাচাকালাতে আয় করেন বাৎসরিক ২০ মিলিয়ন ইউরো। তবে ইতোর চুক্তি ৩ বছরের আর পুরো চুক্তি মিলিয়ে রোনালদো আয়ে ছাড়িয়ে যাবেন তাকে।
বর্তমানে আরেকটা ইস্যু হল খেলোয়াড়ের ইমেজ রাইট বর্তমানে যার ৬০ ভাগ আছে রোনালদোর হাতে আর বাকি ৪০ ভাগ রিয়াল মাদ্রিদের। রোনালদো অবশ্য নিজের ভাগে আরো বেশি চান আর তাঁর সাম্প্রতিক টুইট, দরকষাকষি নিয়ে মিডিয়াতে ফাঁস হওয়া খবর সেই ব্যাপারেই ক্লাবকে চাপ দেওয়ার জন্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। যাইহোক, দুইপক্ষই আশাবাদী যে আগামী কিছু সপ্তাহের মধ্যেই ব্যাপারগুলোর একটা সুরাহা হবে।
তথ্যসূত্রঃ গোলডটকম