দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জিন প্রযুক্তি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেছে। তিনজনের ডিএনএ মিলিয়ে জন্ম নেবে এক সন্তান। এ বিতর্কিত ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ (টেস্টটিউব) প্রযুক্তিতে সন্তান জন্মদানের বিষয়টি স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে ব্রিটেন!
সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে, এ বছরের শেষ দিকে এ-সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করবে ব্রিটেন। ২০১৫ সাল নাগাদ জন্ম নেওয়ার সুযোগ পাবে তিনজনের এক সন্তান। এরই মধ্যে এ পদ্ধতির নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সমালোচকদের আশঙ্কা, এ পদ্ধতির সুযোগে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বিশেষ শিশুর (ডিজাইনড বেবি) জন্মদানের ঘটনা ঘটবে।
গবেষকরা জানান, আইভিএফ প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনজনের কাছ থেকে ডিএনএ নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে এক নারীর ডিম্বাণু ও এক পুরুষের শুক্রাণুর ডিএনএর সঙ্গে তৃতীয় এক দাতা নারীর মাইটোকন্ড্রিয়ার ডিএনএ নেওয়া হবে। তাতে তৈরি হবে টেস্টটিউব শিশু। এ শিশু ডিম্বাণু ও শুক্রাণুদাতার কাছ থেকে ২০ হাজারের বেশি জিন এবং মাইটোকন্ড্রিয়া দাতার কাছ থেকে পাবে ৩৭টি জিন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেহে কোষের শক্তিঘর হচ্ছে মাইটোকন্ড্রিয়া। মায়ের ডিম্বাণুর মাধ্যমে সন্তানের শরীরে মাইটোকন্ড্রিয়া স্থানান্তর হয়। মায়ের মাইটোকন্ড্রিয়ায় কোনো ত্রুটি থাকলে এ কোষীয় অঙ্গাণুটির মাধ্যমেই মরণঘাতী ব্যাধির জীবাণু সন্তানের শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ত্রুটিপূর্ণ মাইটোকন্ড্রিয়ার কারণে প্রতি সাড়ে ছয় হাজারে একটি শিশু মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত শিশুর পেশির দুর্বলতা, অন্ধত্ব এমনকি রোগ তীব্র আকার ধারণ করলে মৃত্যুও হতে পারে। মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত রোগ এখনও চিকিৎসার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।
গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথক এক দাতার ডিম্বাণু থেকে মাইটোকন্ড্রিয়া সংগ্রহ করলে এসব রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। এর ফলে সন্তানের মায়ের কাছ থেকে পাওয়া মরণঘাতী ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। এ প্রযুক্তির ফলে বছরে অন্তত ১০ দম্পতি সন্তানের মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত সমস্যা এড়াতে পারবেন।
ইংল্যান্ডের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডেম শেলি বলেন, বিজ্ঞানীরা যুগান্তকারী পদ্ধতির উন্নয়ন ঘটিয়েছেন। এর মাধ্যমে মাইটোকন্ড্রিয়াজনিত সমস্যা থেকে ৫/১০টি শিশু রক্ষা পাবে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, এক মা একটি সুস্থ সন্তান পাবেন।
যদিও এ নতুন প্রযুক্তির বিরোধিতা করে অনেকে বলছেন, এটা অনৈতিক। এ জন্য ব্রিটেনকে বিপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে হতে পারে। বিপদ সম্পর্কে তারা আশঙ্কা করছেন, এ প্রক্রিয়ার কথা বলে গোপনে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং করে নানা বৈশিষ্ট্যের শিশুর জন্ম দেওয়া হতে পারে।
হিউম্যান জেনেটিক অ্যালার্টের পরিচালক ড. ডেভিড কিং বলেন, এ পদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় এবং অনিরাপদ। এ পদ্ধতিতে না গিয়ে নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান দত্তক নেওয়ার পরামর্শ দেন ড. ডেভিড কিং।
সূত্র :দি টেলিগ্রাফ, বিবিসি ও দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।