দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিপাহ রোগ সাধারণত একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা নিপাহ নাকম একটি ভাইরাস থেকে ছড়িয়ে থাকে। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমনের কারণে যেসকল লক্ষণসমূহ সৃষ্টি হয় তারই বহিঃপ্রকাশই হলো নিপাহ রোগ।
নিপাহ ভাইরাসের আক্রমণের লক্ষণসমূহের মধ্যে রয়েছে জ্বর, প্রলাপ বকা, খিচুনি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথা, ইত্যাদি। এ রোগে আক্রান্ত রোগী অনেক ক্ষেত্রে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এটা খুবই মারাত্মক একটি রোগ যার ফলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে দিনে দিনে। এই ভাইরাস জনিত রোগ সাধারণত পশুপাখি থেকেই মানুষের শরীরে ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাসটি ইমার্জিং জনটিক ভাইরাস যা সাধারণত পশুপাখির দেহে পাওয়া যায়। এটির তীব্রতা এতই যে এটি আমাদের মস্তিষ্ক ও শ্বাসতন্ত্রের মাঝে প্রদাহ তৈরীর মাধ্যমে আমাদের অসুস্থ করতে পারে এবং রোগীকে করতে পারে অতীব হারে ব্যধিত। নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যাক্তির নানাবিধ রোগ হতে পারে এর মধ্যে এনসেফালাইটিস নামক রোগটি খুবই ভয়াবহ প্রদাহজনিত একটি রোগ। নিপাহ ভাইরাসের ফলে এনসেফালাইটিস নামক রোগটি সাধারণত মস্তিষ্কে সংঘটিত হয়।
নিপাহ ভাইরাস সর্বপ্রথম মালয়েশিয়াতে সনাক্ত করা হয় ভাইরাসটি মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরের শুকরের খামার এর কাজ করা চাষীদের মধ্যে প্রথম পাওয়া যায়। এটি মূলত ১৯৯৮ সালে আবিষ্কার করা হয়। এটি সাধারণত পশু পাখির শরীরের স্পর্শ লাগা, তাদের লালা, বিষ্ঠা, ও মাংস থেকে সংক্রমিত হতে পারে। পরবর্তীতে এটি মানুষ থেকে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায় প্রথমত বাদুরের মাধ্যমে। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ২০০১ সালে এই নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর বেশিরভাগ পাওয়া যায়। ঐ সময় খেজুর রস সংগ্রহ করার জন্য বাদুর গাছে হাড়ি বাধা হয়। এর ফলে উক্ত গাছে বাদুর রস খাওয়ার চেষ্টা করে ফলে হাড়িতে বাদুরের অবশিষ্ট প্স্রাব করে ওই রসের সঙ্গে মিশে যায়। এছাড়া লালা বাদুরের অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ মিশে যায় ঐ রসের মাঝে। বাদুর বা ঐ সকল পদার্থ যদি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে মানুষ উক্ত রস গ্রহণ করলে তার এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
এমন মারাত্মক ও জটিল রোগ থেকে নিস্তার পেতে আমাদের সচেতনতা ছাড়া কোন উপায় নেই। কারণ এই রোগের বর্তমানে কোন প্রকার ঔষধ বা ভ্যাক্সিন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে অবশ্যই সচেতন ভাবে আমাদের জীবনকে যাপন করতে হবে যাতে আমাদের কারোই নিপাহ ভাইরাসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে না হয়। সেক্ষেত্রে আমরা খেজুরের রস গ্রহণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই তা টগবগিয়ে ফুটিয়ে খেতে হবে। রস গ্রহণের পাশাপাশি আমরা অনেকে তাড়ি খাই অতএব তাড়ি গ্রহণের ক্ষেত্রে যাতে তা বিশুদ্ধ হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় গাছের মধ্যে বাদুড় আধা খাওয়া ফল রেখে চলে যায় সে আধা খাওয়া ফল থেকে আমাদের খুব সহজে নিপাহ ছড়াতে পারে সে ক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই আধা খাওয়া ফল বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ফল-ফলাদি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আমাদের যে কোন প্রকার ফল ধুয়ে খেতে হবে কারণ বাদুড় গাছে যে কোন ফলে বসে প্স্রাব করতে পারে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই পর্যাপ্ত পানি দিয়ে ফল আমাদেরকে ভালমত ধুয়ে খেতে হবে। নিপাহ ভাইরাস সাবানের দাঁড়া ধ্বংস করা সম্ভব সেক্ষেত্রে আমাদের অবশ্যই সবসময় ধোয়ামোছার ক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার করতে হবে যাতে করে এই ভাইরাস থেকে নিস্তার লাভ করা সম্ভব হয়। নিপা একটি ছোঁয়াচে রোগ যা একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়াতে পারে সেই ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। যদি কোন এলাকায় এই রোগের প্রকোপ দেখা যায় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং সকলকে সচেতন ভাবে এর চিকিৎসা করাতে হবে।