দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মেয়েদের জন্য প্রকৃতির নিয়ম ঋতুস্রাব। এটি আগেকার মানুষ গোপনীয় মনে করলেও এখন আধুনিক যুগে সবকিছুই খুব সাধারণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। প্রথম ঋতুস্রাবের অভিজ্ঞতা যেনো সন্তানের মনে ভয়ের সঞ্চার না করে সেজন্য এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে সময় থাকতে ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলাটা জরুরি। কীভাবে এই কাজটি করবেন?
সাধারণভাবে মেয়েদের স্কুলে দিতে গিয়ে নানা কথাই কানে আসে অনেক মায়ের। বয়ঃসন্ধি ছুঁইছুঁই মেয়ের বন্ধুর মায়েরা নানা বিষয়ে আলোচনাও করেন। মেয়ের ক্লাসের অন্যদের ঋতুস্রাব শুরু হলেও নিজের মেয়ের এখনও সেই পথে পা দেয়নি। তবে জীবনবিজ্ঞানে এই বিষয়ে পড়াশোনা করেছে। স্কুলেও জীবনশৈলীর পাঠও দেওয়া হয় মাঝেমধ্যেই। টেলিভিশনে স্যানিটারি ন্যাপকিনের বিজ্ঞাপন দেখে লজ্জা পায় অনেক সময়। আবার ঋতুস্রাব নিয়ে সরাসরি কথা বলতেও আড়ষ্ট বোধ করে অনেক মেয়ে।
আর এই সময় ঋতুস্রাব নিয়ে তাদের জানানো দরকার। তা নাহলে তারা হয়তো ভয়ও পেতে পারে। তাই অনেকেই পরামর্শ দেন আগে থেকে একটু একটু করে মেয়ের সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে। তবে অনেক সময় সাত-পাঁচ ভেবে এই বিষয়ে কোনো কিছু বলার বদলে আরও পিছিয়ে আসেন অনেকেই। কীভাবে শুরু করবেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না এমন মানুষের সংখ্যা কিন্তু এই আধুনিক যুগেও কম নেই। এই বিষয়ে মনোবিদরা বলেছেন, অনেকেই এই বিষয়ে মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে আড়ষ্ট বোধ করেন। তবে একটা বয়সের পর শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটতে পারে, সে সম্পর্কে জানিয়ে রাখাটা অত্যন্ত জরুরি।
সন্তানের সঙ্গে কীভাবে শুরু করবেন ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা? আজ জেনে নিন সেই বিষয়টি।
খোলা মনে মেয়ের সঙ্গে কথা বলুন
প্রথম বার এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে এই বয়সি মেয়েদের মনে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করতেই পারে। এই বিষয়ে মেয়েকে অভয় দেওয়াই হবে অভিভাবকদের প্রাথমিক কাজ। প্রয়োজনে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতাকে উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরতে পারেন আপনি। তাতে কথা শুরু করা অনেকটাই সহজ হবে।
ঋতুস্রাব নিয়ে যেভাবে কথা বলবেন
নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন কোথায় ভিন্নতা রয়েছে, সে বিষয়টি আগে বুঝিয়ে দিন মেয়েকে। নারী শরীর কীভাবে পূর্ণতা পায়, সেই বিষয়টিও জানিয়ে রাখাটা জরুরি। সেইসঙ্গে, বয়ঃসন্ধি, যৌনতা, প্রজনন ও সে সঙ্গে হরমোনের প্রকারভেদ বা পরিবর্তন সম্পর্কেও আগে থেকেই জানিয়ে রাখাটা জরুরি।
বয়স বুঝেই কথা বলুন
বলতে হবে বলে এক দিনেই সব কথা না বলাই ভালো। কথা বলার সময় বয়সের কথা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। কোন বয়সে কতোটুকু বোঝার ক্ষমতা আপনার মেয়ের রয়েছে, তা অভিভাবক হিসাবে আপনাকেই বুঝে নিতে হবে।
সব জানাবেন ধৈর্য নিয়ে
ঋতুস্রাব নিয়ে শুরু করুন সাধারণভাবে কথাবার্তা বলার মাধ্যমে। তবে কোনওভাবেই তাড়াহুড়ো করতে যাবেন না। শুধু ঋতুস্রাব নয়, তার আগে কিংবা পরে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে সেই সব বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করুন।
সুবিধা-অসুবিধাও জানিয়ে রাখুন
বেশ কিছু বিষয় আপনার মেয়েকে বুঝিয়ে বলতে হবে। ঋতুস্রাব হলে মাসের ওই ক’টা দিন শারীরিক অস্বস্তি হওয়া একেবারেই স্বাভাবিক। তবে এই পরিস্থিতিতেও যে মেয়েরা ঘরে-বাইরে সব কাজ করে থাকেন, সেই উদাহরণও আপনাকে দিতে হবে। শারীরিকভাবে তো বটেই, নতুন এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে তাকে মানসিকভাবেও প্রস্তুত করে তুলতে হবে। সবকিছুই এমনভাবে আপনাকে বলতে হবে যাতে এটিকে সে পজেটিভলি গ্রহণ করে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org