দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ওজন কমাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা যাবে না, কারণ তাড়াহুড়া করলেই ঘটতে পারে বিপদ। কীভাবে মেদ ঝরালে শরীরে বিরূপ প্রভাবও পড়বে না। কী বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা?
কেও ওজন কমিয়ে ফেলছেন এক মাসে ১০ কেজি। কেও আবার বলেছেন, কোনও বিশেষ নিয়মে ৪ মাসে ২৫ কেজি মেদ ঝরানো যায়। এভাবে এক ধাক্কায় অনেকটা মেদ ঝরানোর নানা উপায় এখন নেটমাধ্যমে খুঁজলেই পাওয়া যায়। তবে সেইসব আদৌ কী নিরাপদ?
চিকিৎসক থেকে পুষ্টিবিদরা বলেছেন, ওজন ঝরাতে গিয়ে তাড়াহুড়ো করা মোটেও উচিত নয়। তারকাদের পুষ্টিবিদ রুজুতা দিবেকর বলেছেন, ধীরে সুস্থে নিয়ম না মেনে ওজন কমালেও উধাও হতে পারে ত্বকের জেল্লা। চিকিৎসকরা বলেছেন, শরীরে এর বিরূপ প্রভাবও পড়তে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণাতেও ওজন কমানোর বিষয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতির কথা বলা হচ্ছে।
আয়ারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লিমেরিকে ওজন কমানো সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করেন আলেকজ়ান্দ্রা ক্রিমোনা। ওজন কমাতে গেলে- হয় শরীরে ক্যালোরির ঘাটতি তৈরি করতে হবে, নয়তো শরীরচর্চা করে অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝরিয়ে ফেলতে হয়।
আলেকজ়ান্দ্রার গবেষণা বলছে, প্রতিদিন শারীরবৃত্তীয় কাজের জন্য কতোটা ক্যালোরি প্রয়োজন হয়, শরীরচর্চার জন্য কতোটা, সেটি বুঝতে হবে। এমনকি যখন শরীর বিশ্রামে থাকে, তখনও বিপাকক্রিয়া চলে। শক্তিরও প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবটাও ঠিক রাখতে হবে।
তবে হিসেব কষতে হবে, সারাদিন কতোটা ক্যালোরি শরীরে যাচ্ছে। শরীরচর্চায় কতোটা খরচই বা হচ্ছে ও অতিরিক্ত ক্যালোরি জমছে কি-না। গবেষণা বলছে যে, ওজন কমাতে গেলে প্রতিদিন শরীরে ৫০০-১০০০ ক্যালোরির ঘাটতি হওয়াটাও জরুরি। এই ঘাটতি দিয়ে এক সপ্তাহে ০.৪৫ গ্রাম পর্যন্ত ওজন কমানো যায়। বেশি নয়, নিয়মিত কিছুটা পরিমাণ ক্যালোরির ঘাটতি হলে, ধীরে ধীরে ওজনও কমতে থাকবে। এই পদ্ধতিতে ওজন কমলে, শরীরের কোনো ক্ষতিই হবে না।
যদি ক্যালোরির ঘাটতি বেশি থাকে তাহলে?
দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে শরীরে তার খারাপ প্রভাবও পড়তে পারে। সেন্টারস ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছেন যে, সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম হতে এক কেজি ওজন কমলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষেও ক্ষতিকর নয়। সেই হিসাবে মাসে ২ হতে ৪ কেজি ওজন কমানোও যেতে পারে।
কীভাবে ওজন কমানো উচিত?
ইউনিভার্সিটি অফ লিমেরিকের গবেষণা বলছে যে, পরিমিত খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। সঠিক ডায়েট ও খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে শরীরের ক্ষতি না করে ওজন কমানো সম্ভব। সেইসঙ্গে, পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়া প্রয়োজন, দরকার সঠিক উপায়ে শরীরচর্চা। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিংও ওজন ঝরাতে সাহায্য করতে পারে। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org