দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা অনেক রকম জাদুঘর দেখেছি। এসব জাদুঘরে রক্ষিত জিনিসপত্র দেখতে আমরা ভিড়ও জমায়। কিন্তু এবার একটু ব্যতিক্রমি জাদুঘর টাকার জাদুঘর। টাকা বা মুদ্রার ইতিহাস জানতে হলে এখানে আসতে হবে।
টাকা আমাদের মূল চালিকা শক্তি। এই টাকা ছাড়া আমরা একেবারেই অচল। আমরা ঘর থেকে বেরিয়ে এক পা এগুতে চাইলেই প্রয়োজন হবে টাকার। এই টাকা ছাড়া পৃথিবী একেবারেই অচল। টাকা দিয়ে পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত সবখানে ঘুরে বেড়ানো যায়। আর তাইতো কথায় বলা হয় ‘গডের পরেই টাকা’। কথাটির গভীরে না গিয়ে আমরা সাধারণ ভাবে প্রমাণ পাবো যে টাকা ছাড়া পৃথিবীটা সত্যিই অচল।
এই টাকার ইতিহাসও তাই আমাদের জানা দরকার। কালের বিবর্তনে টাকার অনেক রকম ফের ঘটেছে। বহুযুগ আগে স্বর্ণমুদ্রা ব্যবহৃত হতো। এরপর কাচা টাকার প্রচলন হয়েছিল। কালের বিবর্তনে এই টাকা এখন আধুনিকতার ছোঁয়ায় ক্রমেই নানা রকম আকার ধারণ করছে। শুরু হলো টাকা বা কাগজে তৈরি নোটের প্রচলন, যা মুদ্রার ব্যবহারকে এগিয়ে দিলো বহুদূর। এসব টাকা বা মুদ্রার ইতিহাস ধরে রাখতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে যাতে এই টাকা বা মুদ্রার ইতিহাস টিকে থাকে সেজন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই জাদুঘরের সংগ্রহশালা। আর টাকা নিয়ে এমন এক অনন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই উদ্যোগ জাতির ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাক্ষ্য বহন করবে সব সময়।
প্রতিষ্ঠানটির একান্ত আগ্রহে দেশে যাত্রা শুরু করলো টাকা জাদুঘর। রাজধানীর মিরপুর-২ এ বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমির দ্বিতীয় তলায় স্থাপিত হলো এই ‘টাকা জাদুঘর’। আবহমান বাংলা এবং উপমহাদেশের প্রাচীন মুদ্র্রার ক্রমবিকাশের ধারাকে লালন, সংরক্ষণ ও তার নান্দনিক উপস্থাপনই টাকা জাদুঘর প্রতিষ্ঠার অন্যতম উদ্দেশ্য।
গতকাল শনিবার সকালে মিরপুর-২ এ বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে ‘টাকা জাদুঘর’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মোঃ আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গভর্নর ড. আতিউর রহমান, নির্বাহী পরিচালক দাশগুপ্ত অসীম কুমার, টাকা জাদুঘর বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি চিত্রশিল্পী হাশেম খান, বাংলাদেশ নিউমিসম্যাটিক কালেক্টরস সোসাইটির সভাপতি অমলেন্দু সাহা, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন নির্বাহী পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক, উপ-মহাব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন কর্মকর্তা, বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী, টাকা গাছ ডিওরমা এবং ম্যুরালের শিল্পী শ্যামল চৌধুরী, জাদুঘরের অবকাঠামো নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জার্নিম্যানের স্বত্বাধিকারী তারেক সুজাতসহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
টাকা জাদুঘরে সীমিত পরিসরে স্থাপিত বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা জাদুঘরের-১ গ্যালারিতে সংরক্ষিত এবং প্রদর্শিত হচ্ছে প্রাচীন আমল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যনত্ম মুদ্র্রিত ও সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের ধাতব মুদ্রা, কাগুজে নোট ও মুদ্রা সম্পর্কিত বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রী স্থান করে নিয়েছে।
টাকা জাদুঘরে সংরক্ষিত মুদ্রাগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাচীনতম ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা (পাঞ্চ মার্কড), হকুচবিহারের মুদ্রা, কুশান মুদ্রা, বাংলার স্বাধীন সুলতানি আমলের মুদ্রা, পরাক্রমশালী মুঘল সম্রাটদের মুদ্রা, রিকেলের মুদ্রা, ইন্দো-পার্থিয়ান মুদ্রা। আরো রয়েছে ভারতে মুঘল শাসনের সমাপ্তির পর ১৮৩৫ সাল থেকে প্রচলিত ব্রিটিশ ভারতীয় মুদ্র্রা। স্মরণাতীতকাল থেকে ঊনিশ শতকের শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে খুচরা বেচাকেনায় কড়িই ছিল প্রাধান বিনিময় মাধ্যম। প্রাচীন বাংলায় ব্যবহৃত এ সকল কড়িও জাদুঘরে প্রদর্শিত হতে দেখা গেছে।
এই জাদুঘরে আরও প্রদর্শিত হচ্ছে বর্তমান সময়ের যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আর্জেন্টিনা, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেপাল, ভুটান, ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশসহ প্রায় সকল দেশের মুদ্রা। বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ঘটনা, দিবস এবং কালজয়ী ব্যক্তিদের স্মরণে এ পর্যন্ত ১১টি স্মারক মুদ্রা এবং ৩টি স্মারক নোট মুদ্রিত হয়েছে। যা এখানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২০০০ এর স্বর্ণের স্মারক ৫০ হাজার টাকায় বিক্রির জন্য প্রদর্শন করা হয়েছে। এছাড়া টাকা জাদুঘরে একটি স্যুভেনির শপ রয়েছে। স্যুভেনির শপে থাকছে সকল স্মারকমুদ্রা, স্মারক নোট, বিভিন্ন স্যুভেনিরসহ বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত বিভিন্ন পুস্তক, প্রতিবেদন। দর্শনার্থীরা ইচ্ছে করলেই এ সকল আইটেম সুলভে কিনতেও পারবেন এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
টাকার জাদুঘর কোনো প্রবেশ ফি ছাড়া শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যনত্ম খোলা থাকবে। শুক্রবার থাকবে বিকাল ৪ থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যনত্ম। এই জাদুঘর বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে।