দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্যতম পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি সবজি। দেখতে সাদামাটা হলেও এতে লুকিয়ে আছে নানা পুষ্টিগুণ, যা শরীরকে রাখে সতেজ, সুস্থ ও সক্রিয়।

বিশেষ করে গরমের দিনে শসা শরীরে পানির ঘাটতি পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তা- সবার জন্যই শসা একটি উপকারী খাবার।
প্রথমেই বলা দরকার এর পানির পরিমাণের কথা। শসার প্রায় ৯৫ শতাংশই পানি, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং পানিশূন্যতা রোধে কার্যকরভাবে কাজ করে। পাশাপাশি এতে রয়েছে অল্প ক্যালোরি, যা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য শসাকে একটি চমৎকার খাবারে পরিণত করেছে। নিয়মিত শসা খাওয়ার যে কারণে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা থাকে এবং অপ্রয়োজনীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে যায়।
শসায় রয়েছে ভিটামিন ‘সি’, ভিটামিন ‘কে’ এবং বিভিন্ন বি-কমপ্লেক্স ভিটামিন, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে। ভিটামিন ‘কে’ হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শসার খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান- বিশেষ করে ফ্লাভোনয়েড এবং ট্যানিন- শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি-র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে কাজ করে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি বয়সজনিত ক্ষয় কমাতে এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমাতেও সহায়ক।
এ ছাড়াও শসায় রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ, যা হৃদ্স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়। যারা উচ্চ রক্তচাপ সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য শসা একটি উপকারী খাদ্য হিসেবে বিবেচিত। শসার উচ্চ পানি ও আঁশযুক্ত অংশ হজমশক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। নিয়মিত শসা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য কমে, পেটে আরাম পাওয়া যায় এবং হজমপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে।
ত্বক এবং চুলের পুষ্টিতেও শসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শসার পানি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে রাখে সতেজ, মসৃণ এবং উজ্জ্বল। চোখের নিচের ফোলাভাব বা ডার্ক সার্কেল কমাতেও শসা বেশ কার্যকর। অনেকেই স্কিন কেয়ার রুটিনে শসার রস বা টুকরো ব্যবহার করেন- এটি ত্বকে প্রশান্তি এনে দেয়।
শসা শুধু একটি সাধারণ সবজি নয়; এটি একটি প্রাকৃতিক পুষ্টি ভাণ্ডার। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শসা যুক্ত করলে শরীর থাকে সতেজ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং সামগ্রিকভাবে সুস্থতা বজায় থাকে। সহজলভ্য এবং সস্তা এই সবজির পুষ্টিগুণ কাজে লাগাতে প্রতিদিনই খাওয়া উচিত।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org