দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যখন আরোহীরা মাউন্ট এভারেস্ট জয় করার নিমিত্তে এতে আরোহণ করে তখন অন্যান্য সকল প্রকার প্রতিকূল অবস্থার বিপরীতে তাদের মধ্যে সর্বশেষে আসে রেডিয়েশনের কথা। কিন্তু তারা যখন এর চূড়ায় আবিষ্কার করে তখন বুঝতে পারে তারা রয়েছে এক বিপুল রেডিয়েশনের ভেতরে।
একদক স্কটিশ রেডিয়েশন বিশেষজ্ঞ দেখিয়েছে যে, মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় যে পরিমাণ রেডিয়েশন হয় তা একটি বড় আকারের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে ঘটে থাকে। ফলে যে সকল আরোহী মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করে থাকেন তারা একই সাথে একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে থাকা শ্রমিকের মতো রেডিয়েশন গ্রহণ করে থাকেন। রেডিয়েশন বিশেষজ্ঞ বব কার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় আরোহণ করবেন একটি গাইগার মুলার কাউন্টার নিয়ে। গাইগার মুলার কাউন্টার দিয়ে কোন স্থানের রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। তিনি দেখতে চেয়েছেন যে মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় কি পরিমাণ রেডিয়েশন হয়ে থাকে। তিনি তার এই অভিযানটি শুরু করেন ২০১৩ সালের মে মাসে এবং আরোহণ করেন ২৬০০০ ফুট। কিন্তু এই উচ্চতায় তিনি অক্সিজেনের অভাবে পার্শ্বীয় অন্ধত্ব ত্রুটিতে আক্রান্ত হন।
ফলে তাকে এই উচ্চতায় অভিযান স্থগিত করতে হয়। তিনি তার নেপালি শেরপা বা গাইডকে গাইগার মুলার কাউন্টারটি দেন এবং তাকে অভিযান গতিশীল রাখতে বলেন। তার নেপালি গাইড দার্জি খাত্রি গাইগার মুলারটি নিয়ে এভারেস্টের ২৯০০০ ফুট উচ্চতায় আরোহণ করে। গাইগার মুলার কাউন্টারের পরিমাপ থেকে দেখা যায় যে, এভারেস্টের এই উচ্চতায় ১ মিলিসিভার্ট বা ১ এমএসভি রেডিয়েশন হয়ে থাকে। এই পরিমাণটি একটি নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্টে কর্মরত শ্রমিকের বাৎসরিক গড় তেজস্ক্রিয়তার চেয়ে পাঁচগুণ বেশি। এভারেস্টের এই উচ্চতায় থাকা রেডিয়েশনটি মূলত আসে মহাশূন্যের মহাজাগতিক রশ্নি বা কসমিক রে থেকে এবং এই তেজস্ক্রিয়তার প্রয়োগটি হয়ে থাকে সরাসরি কোন ধরনের পাতন ছাড়াই।
এভারেস্টের এই বিস্ময়কর রেডিয়েশন আবিষ্কারের পর এই প্রসঙ্গে বব ক্যার বলেন, আমি যখন রেডিয়েশন প্রতিরোধের বিষয়ে কাজ শুরু করলাম। তখন জানতে পারলাম যে পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ এই এভারেস্ট জয় করাটা একশ্রেণীর মানুষের শখ। তারা বারবার এটি জয় করার নেশায় এতে আরোহণ করেন। কিন্তু তারা কেউই এর রেডিয়েশনের বিষয়ে অভিজ্ঞ নন। এমনকি তারা মহাজাগতিক রশ্নির বিষয়টি জানেন না। এই রেডিয়েশন শরীরের মারাত্মক প্রভাব ফেলে। মহাজাগতিক রশ্নির তেজস্ক্রিয়তার সবচেয়ে ভয়াবহ ফলাফল হলো শরীরের অনিয়ন্ত্রিত কোষবৃদ্ধি। এর ফলে বড় ধরনের ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া মহাজাগতিক রশ্নির প্রভাবে চোখের অন্ধত্ব থেকে শুরু করে, ত্বকের অ্যালার্জি জনিত রোগের কারণ হয়ে থাকে।
তথ্যসূত্রঃ টেকজার্নাল