দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যাটলান্টিস কিংবা সোনার দেশ এলডোরাডো কাল্পনিক হতে পারে কিন্তু ইতিহাসে এই রকম আরো অনেক শহর রয়েছে যা আজো মানুষদের ভাবিয়ে তোলে। এগুলো হারিয়ে গেছে কালের অতল গভীরে, কিন্তু রেখে গেছে কখনো সমাধান না হওয়া অসংখ্য প্রশ্ন। আজও সেই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছে আধুনিক মানব সভ্যতা। আজ আমরা দি ঢাকা টাইমসের জন্য সেই সকল শহরের কথা তুলে ধরবো।
মাচু পিচ্চু
ইনকা সভ্যতার ধারক হলো এই মাচ্চু পিচ্চু। ১৯১১ সালে আমেরিকান ঐতিহাসিক হিরাম বিঙ্ঘাম দ্বারা আবিষ্কৃত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ম্যাচু পিচু ছিল বাইরের দুনিয়ার কাছে অজানা ও অচেনা একটি স্থাপত্য নিদর্শন। মেক্সিকোতে অবস্থিত এই সভ্যতা। মাচ্চু পিচ্চু আবিস্কারের পুর্বে এটি যতটা না রহস্যময় ছিল তার চেয়ে এটি আবিস্কারের পর রহস্য আরো বেড়ে যায়। পর্বতের আড়ালে গড়ে উঠা এই বিস্ময়কর সভ্যতা কেন গড়ে উঠেছিল কিংবা এই সভ্যতার মানুষদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা আজো সারা পৃথিবীর প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে অসমাধানকৃত প্রশ্ন।
পেত্রা
পাথরের পাহাড়ের পাদদেশে বিস্ময়করভাবে গড়ে উঠা পেত্রা তার শিলা কাটা আর্কিটেকচারের জন্য বিখ্যাত। এটি জর্ডান এর সবচেয়ে প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। ১৮১২ সালের আগ পর্যন্ত এই প্রাচীন শহরটি পশ্চিমা বিশ্বের অজানাই রয়ে গিয়েছিল। ইউনেস্কো এটিকে ১৯৮৫ সালে একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ঘোষণা করে । ইন্ডিয়ানা জোন্সের বিখ্যাত সিরিজ মুভির ‘দি লাস্ট ক্রুসেডের’ শুটিং হয়েছিল এই পেত্রা নগরীতে। পাথরের পাহাড় কেটে কারা এই শহর নির্মাণ করেছে তা ইতিহাসবিদদের কাছে রহস্য। গ্রীকদের সাথে বাণিজ্য করতো এই সভ্যতার অধিবাসীরা, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করে ইতিহাসবিদরা খুজে পান এটি।
মেমফিস
মেমফিস সত্যিই ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ শহরগুলোর অন্যতম। মেমফিস মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম রাজকীয় নগর। প্রথম রাজবংশের সময়কাল ৩০০০ থেকে ২৮০০ খ্রিস্টপূর্ব। প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন রাজা মেনেস। তিনিই মিশরের ইতিহাসে প্রথম উল্লেখযোগ্য ফারাও, যিনি উচ্চভুমির মিশর এবং নিম্নভুমির মিশরকে সংযুক্ত করেছিলেন। আর এই অবিভক্ত মিশরের রাজধানী ছিল মেমফিস। আধুনিক ইতিহাসবিদ আর প্রত্নতাত্ত্বিকদের কাছে এটি স্বর্গ উদ্যান। মিশরের রাজকীয় গোরস্থানটি এখানে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কিংস ভ্যালি।
তিকাল
তিকাল হল প্রাচীন মায়া সভ্যতার সর্ববৃহৎ ধ্বংসাবশেষ শহর। বর্তমানে উত্তর গুয়াতেমালারপেতেন বাসিনে এটি অবস্থিত। এল পেটেন বিভাগে অবস্থিত, গুয়াতেমালার তিকালের জাতীয় পার্কের অংশ। তিকাল ছিল প্রাচীন মায়া সভ্যতার রাজধানী এবং সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী রাজ্যের একটি। যদিও তিকালের স্মৃতিসৌধ স্থাপত্যর বয়স খ্রীষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী পৌঁছ, কিন্তু তার প্রাচীন সময় কালের প্রায় ২০০ থেকে ৯০০ খ্রীষ্টাব্দ ধরা হয়।
বিজয়নগর
দক্ষিণ ভারতের একটি মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্য। পর্তুগিজরা এই সাম্রাজ্যকে বিসনাগা রাজ্য নামে অভিহিত করে।এই সাম্রাজ্যের নিদর্শন স্বরূপ নানা স্থাপত্য ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র দক্ষিণ ভারত জুড়ে। এর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন অবশ্যই হাম্পি। দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন মন্দির নির্মাণশৈলীগুলির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিল বিজয়নগর স্থাপত্য। এর হিন্দু নির্মাণশৈলীর মধ্যে সকল ধর্মবিশ্বাস ও স্থানীয় শৈলীগুলির মিলন ঘটেছিল। স্থানীয় গ্র্যানাইট পাথরে এই শৈলী গড়ে ওঠে। বিজয়নগর সাম্রাজ্য শিল্প ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিল। কন্নড়, তেলুগু, তামিল ও সংস্কৃত সাহিত্যে এই সাম্রাজ্যের পৃষ্টপোষকতায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়। কর্ণাটকী সংগীত এই সাম্রাজ্যের রাজত্বকালেই তার বর্তমান রূপটি লাভ করে।
ব্যাবিলন
ব্যাবিলনের শূন্য উদ্যান বা ঝুলন্ত বাগান ইরাকের ইউফ্রেটিস নদীর তীরে খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দে নির্মিত হয়। সম্রাট নেবুচাদনেজার সম্রাজ্ঞীর প্রেরণায় এটি নির্মাণ করেন। প্রথমে নির্মাণ করা হয় বিশাল এক ভিত, যার আয়তন ছিল ৮০০ বর্গফুট। ভিতটিকে স্থাপন করা হয় তৎকালীন সম্রাটের খাস উপাসনালয়ের সুবিস্তৃত ছাদে। ভিত্তি স্থাপন করার পর মাটি থেকে এর উচ্চতা দাড়িয়েছিল ৮০ ফুট। এই ভিত্তির উপরেই নির্মিত হয়েছিল বিশ্বের সর্ববৃহৎ এবং বিস্ময়কর পুস্পবাগ। ৪০০০ শ্রমিক রাতদিন পরিশ্রম করে তৈরি করেছিল এই বাগান। বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত ছিল ১০৫০ জন মালী। ৫ থেকে ৬ হাজার প্রকার যুলের চারা রোপণ করা হয়েছিল এই ঝুলন্ত বাগানে। ৮০ ফুট উচুতে অবস্থিত বাগানের সুউচ্চ ধাপগুলোতে নদী থেকে পানি উঠানো হত মোটা পেচানো নলে সাহায্যে। ৫১৪ খ্রিস্টাব্দে পার্শ্ববর্তী পারস্য রাজ্যের সাথে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে এই সুন্দর উদ্যানটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়।
মহেঞ্জোদারো
প্রাচীন ভারতের সিন্ধু সভ্যতার বৃহত্তম নগর-বসতিগুলির মধ্যে অন্যতম হলো মহেঞ্জোদারো। এটি অধুনা পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিন্ধু প্রদেশের লারকানা জেলায় অবস্থিত। ২৬০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ নাগাদ নির্মিত এই শহরটি ছিল বিশ্বের প্রাচীনতম শহরগুলির অন্যতম এবংপ্রাচীন মিশর, মেসোপটেমিয়া ও ক্রিটের সভ্যতার সমসাময়িক। এই শহরের পুরাতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান। এটিকে “একটি প্রাচীন সিন্ধু মহানগর” নামেও অভিহিত করা হয়।