দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিজয়ের ৪১ বছর পূর্তিতে জাতীয় প্যারেড ময়দানে সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের প্যারেডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকটি ছিল ২০০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট চওড়া জাতীয় পতাকা। এমন বিশাল আকারের পতাকা দেখে দেশপ্রেমিকদের হৃদয় কেড়েছে।
সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা এ জাতীয় পতাকা নিয়েই প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। জাতীয় পতাকাকে স্যালুট করেন শেখ হাসিনাও। রীতি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করলেও স্বাস্থ্যগত কারণে মো. জিল্লুর রহমান গত দু’বছর ধরে প্যারেড ময়দোনে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী যে এবার কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন- তা আগেই জানিয়ে দেয়া হয়েছিল। ভোরে পুরাতন বিমানবন্দরের প্যারেড ময়দানে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে মহান বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এবং ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর প্রধানমন্ত্রী প্যারেড ময়দানের অনুষ্ঠানে যোগ দেন সকাল সোয়া ১০টার দিকে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাহিনীর সদস্যরা ছাড়াও তিন বাহিনীর যান্ত্রিক বহর এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বহর সুসজ্জিতভাবে এ কুচকাওয়াজে অংশ নেয়। বিমানবাহিনীর ফ্লাইপাস্ট এবং বাদক দলের অভিবাদন জানানোর মধ্যে দিয়ে শেষ হয় বিজয়ের ৪১ বছর উপদযাপনের প্যারেড। এবার প্যারেড ময়দান সাজানো হয় বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন স্থিরচিত্র দিয়ে। প্রধানমন্ত্রীর অভিবাদন মঞ্চের ঠিক উল্টো দিকে সম্মিলিত বাদক দলের স্ট্যান্ডের পেছনে ছিল বঙ্গবন্ধুর বিশাল ছবি এবং জাতীয় স্মৃতিসৌধের প্রতিকৃতি। আর দু’দিকে ছিল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি। প্রধানমন্ত্রী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে পৌঁছানোর পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম এবং তিন বাহিনীর প্রধান তাকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী প্রথমে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। এরপর অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে সালাম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান এবং নবম ডিভিশনের জিওসি এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, আনসার ও ভিডিপি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং অশ্বারোহী বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও পুলিশের কুকুরের স্কোয়াড, মহিলা পুলিশের সদস্য, জেল পুলিশ এই প্যারেডে অংশ নেয়। মার্চ পাস্টের পর জাতীয় পতাকা, সরকার প্রধানের পতাকাসহ বিভিন্ন বাহিনীর পতাকা নিয়ে প্যারাট্রুপাররা প্যারেড স্কয়ারে অবতরণ করেন। তারা প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। এরপর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে বিশাল পতাকা নিয়ে প্যারেড গ্রাউন্ড অতিক্রম করেন বিভিন্ন বাহিনীর ২৮২ জন সদস্য।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিভিন্ন বাহিনীর যান্ত্রিক বহর প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানায়। সাঁজোয়া বাহিনীর নতুন পাওয়া এমবিটি-২০০০ ট্যাংক, গোলন্দাজ বাহিনীর বিভিন্ন পালস্নার কামান, নতুন উইপন লোকেটিং রাডার, পদাতিক বাহিনীর আর্মার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ার, ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের বিভিন্ন সরঞ্জাম, নৌবাহিনীর মিসাইল ও টর্পেডো এবং বিমানবাহিনীর ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপনযোগ্য মিসাইল এ যান্ত্রিক বহরে ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর যান্ত্রিক বহরের পর এবারের বিজয় দিবসের থিম ‘বিজয় থেকে বিজয়ে’ এবং সহযোগীদের লোগো সংবলিত একটি সুসজ্জিত খোলা ট্রাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কণ্ঠ শিল্পীরা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ গানটি গাইতে গাইতে প্যারেড গ্রাউন্ড অতিক্রম করেন। ট্রাকটি সরকার প্রধানের অভিবাদন মঞ্চ অতিক্রম করার সময় শেখ হাসিনা তাদের উদ্দেশে হাত নাড়েন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের নিজ নিজ কর্মকাণ্ড নিয়ে সাজানো বাহন ছিল যান্ত্রিক বহরের শেষ ভাগে। শেষ ভাগে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান, পরিবহন বিমান, হেলিকপ্টার এবং মিগ-২৯ ফ্লাইপাস্টে অংশ নেয়। রাশিয়ার তৈরী যুদ্ধবিমান ‘মিগ-২৯’ আকাশে শত্রু বিমানকে ধাওয়া করাসহ বিভিন্ন কলাকৌশল প্রদর্শন করে। এরপর অত্যন্ত নিচ দিয়ে উড়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ফ্লাইং স্যালুট’ ও ‘ভিক্টরি রোল’ এবং সম্মিলিত বাদক দলের সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে কুচকাওয়াজ শেষ হয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, সচিব, সশস্ত্রবাহিনীর কর্মকর্তা, বিদেশী রাষ্ট্রদূত ও বিভিন্ন মিশনপ্রধান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ও প্যারেড দেখেন।