দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকের কন্ঠেই শুনি ‘হায় হায় আমি মোটা হয়ে যাচ্ছি।’ নাগরিক জীবনযাপনে এই আফসোস আজ অনেকের। স্থূলতা নিয়ে যেমন মনকে নিয়ে যায় ডিপ্রেশনে। তেমনি শরীরে দানা বাঁধায় নানা রোগ। স্থূলতা থেকে রেহায় পেতে হন্যে হয়ে আছে সবাই। শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে এবং তা থেকে বের হওয়ার নানা পরামর্শ দিয়েছেন বারডেম হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের ডাঃ আফরীন আহমেদ।
স্থূলতা হলো শরীরের এমন একটি অবস্থান, যে অবস্থায় শরীরে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। উন্নত বিশ্বে গত ২০ বছরে স্থূলতা বৃদ্ধি পেয়েছে তিনগুণ এবং এ হার অব্যাহত রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশে স্থূলতার জাতীয় বৃদ্ধির হার এত বেশি নয়। বাংলাদেশে স্থূলকায় লোকের সংখ্যা বেশি না হলেও অতিরিক্ত ওজনের লোক একেবারে কম নয়।
সেন্ট্রাল স্থূলতা মাপার উপায়
পুরুষের কোমরের মাপ ৪০ ইঞ্চি (১০১ সেমি.) বা অধিক হলে এবং নারীদের ৩৫ ইঞ্চি (৮৮ সেমি.) বা বেশি হলে রোগের সম্ভাবনা থাকে। এশীয় পুরুষদের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ ৩৬ ইঞ্চি (৯০ সেমি.) বা বেশি হলে এবং নারীদের বেলায় ৩২ ইঞ্চি (৮০ সেমি.) বা বেশি হলে রোগের আশঙ্কা থাকে।
স্থূলতার কারণ
অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাসথ বর্তমানে শারীরিক পরিশ্রমের মাত্রা অনেক কমে গেছে এবং কারও কারও বেলায় শারীরিক পরিশ্রম বলতেই নেই। বিশেষ করে শহরে অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং বিলাসবহুল জীবনযাপন ও স্থূলতার জন্য দায়ী।
মেটাবলিক/এন্ডোক্রাইন ডিজঅর্ডার-
অপর্যাপ্ত থাইরয়েড ফাংশন, কুশিং সিন্ড্রোম ও পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম হলে শরীরে মেদ জমে। অনেক স্থূলতায় ব্যক্তির রক্তে অভুক্ত অবস্থায় উচ্চমাত্রার গ্গ্নুকোজ ও ইনসুলিন থাকে।
জেনেটিক বা বংশগত কারণ- বাবা-মায়ের একজনের স্থূলতা থাকলে শতকরা ৪০ ভাগ আশঙ্কা এবং যদি বাবা-মা দু্থজনই স্থূলকায় হন, তবে তার আশঙ্কা শতকরা ৮০ ভাগ।
মানসিক সমস্যা-ভাবাবেগ, উদ্বিগ্নতা, ডিপ্রেশন অথবা ব্যথা হলে বেশি খাওয়া হয়। কেউ কেউ খেয়ে শান্তি পায় এবং উদ্বিগ্নতা দমনের জন্যও খায়।
ওষুধ- দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট অথবা কর্টিকোস্টেরয়েড খেলে স্থূলতা হয়। এগুলো শরীরে পানি ধরে রাখে।
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান : অ্যালকোহল (বিয়ার এবং মিক্সড ড্রিংকস) অধিক ক্যালরিযুক্ত। অ্যালকোহল পান করলে পাকস্থলীর চারদিকে ওজন বাড়ে।
কোক, পেপসি ইত্যাদি পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে ক্যালরি থাকে। এ ছাড়া টেলিভিশনের সামনে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলেও মুটিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বাস্থ্যের ওপর স্থূলতার প্রভাব
ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ এবং স্ট্রোক
হৃদরোগ, ডিসলিপিডেমিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা,শল্য চিকিৎসার উচ্চমাত্রার ঝুঁকি,
আয়ু কমে যাওয়া এবং মৃত্যু হার বেড়ে যাওয়া,মাসিকে অনিয়ম ও বন্ধ্যত্ব,
মানসিক ও যৌন সমস্যা, ক্যান্সার : স্তন, জরায়ু, পিত্তথলি, ডিম্বাশয়, অন্ত্র ও প্রস্টেট।
স্থূলতা যেভাবে কমানো যায়
পুষ্টিবিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী স্থূলতা ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
ক) নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে চিকিৎসা
কোনো ব্যক্তির খাদ্যশক্তি নিরূপণ করে যদি দেখা যায়, তার শরীরে ৫ কেজির বেশি অতিরিক্ত ওজন রয়েছে তবে প্রতিদিন ৫০০ কিলোক্যালরি কম খেলে সপ্তাহে আধা কেজি ওজন কমবে এবং মাসে কমবে ২ কেজি। অন্যদিকে যদি অতিরিক্ত ওজন পাঁচ কেজি অথবা কম হয়, তবে প্রতিদিন ২৫০ কিলোক্যালরি খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিলে সপ্তাহে ২৫০ গ্রাম এবং মাসে এক কেজি পরিমাণ ওজন কমবে।
খ) শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো
দৈনিক অন্তত এক ঘণ্টা দ্রম্নত হাঁটতে হবে। অল্প দূরত্বের যাত্রায় রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করে হেঁটে চলতে হবে।
স্থূলতার প্রতিরোধ
শারীরিক পরিশ্রম ও সুষম খাবার স্থূলতায় ও মোটা হওয়া প্রতিরোধ করে। তাজা ফল এবং প্রচুর পরিমাণে কাঁচা শাকসবজি খেতে হবে। দিনে একটি আহারে শুধু শাকসবজি ও ফল থাকতে। হবে। শিশুদের কোমল পানীয়, ফলের রস এবং চকোলেট জাতীয় খাবার থেকে বিরত রাখতে হবে।