দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা কখনও শুনিনি যে একটি শহরের সবাই আত্মহত্যা প্রবণ। এবার তাই শোনা গেলো। সেই আত্মহত্যার শহর হিসেবে খ্যাত ইলুলিসাত কাহিনী রয়েছে পাঠকদের জন্য।
পশ্চিম গ্রীনল্যান্ডের একটি শহর ইলুলিসাত। যার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার জন্য দূর-দূরান্ত হতে অনেক পর্যটক আসেন। পর্যটন শহর হিসেবে ভ্রমণপিয়াসীদের কাছে ইলুলিসাত এক পরিচিত শহর। কিন্তু দু’একদিনের বেশি কোন পর্যটক এই শহরে থাকতে পারে না। আর এর কারণ হলো এখানে সূর্যের আলোর দেখা পাওয়া যায় না।
ইলুলিসাত বসবাসকারী মানুষের কাছে সূর্যের আলো দেখা এক সৌভাগ্যের ব্যাপার ছাড়া আর কিছু নয়। যেহেতু সূর্যের আলো দেখা মেলে না, তাই বেশিরভাগ সময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে এই শহরটি। ইলুলিসাতের অঢেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যেও রয়েছে এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যা সত্যিই বিচলিত করার মতো ঘটনা।
এর কারণ হলো বিশ্বের সবচেয়ে আত্মহত্যা প্রবণ শহর হিসেবে ইলুলিসাত এক পরিচিত নাম। শীতকালে বেশিরভাগ পাহাড়, গাছপালা, ঘরবাড়ি পর্যন্ত বরফে ঢেকে যায়। স্বাভাবিক জীবন যাপন করা তখন বড়ই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আর তাই শহরের বেশিরভাগ মানুষ পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য বেছে নেন আত্মহত্যার পথকে! শিশু কিশোর হতে শুরু করে এ কাজ হতে বাদ পড়ে না বৃদ্ধরাও!
সংবাদ মাধ্যমের খবরে জানা যায়, ২০০০ সালে এই শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৫০০ জন। তখন হতে পর পর দুবছর কমপক্ষে ৮ জন করে মানুষ মারা যেতো আত্মহত্যা করে। তবে এদের মধ্যে বেশিরভাগই অল্পবয়সী ও স্কুল ছাত্র।
২০০৩ সালের কথা। সে বছর এই শহরে আত্মহত্যা করে ৪০ জনের মৃত্যু ঘটে। যার মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী। এমনকি এই শহরের স্কুলগুলোতেও ছেলে-মেয়েদের আসা-যাওয়া নেই একেবারেই। অবশ্য ইউনিসেফের পক্ষ হতে এই মৃত্যুহার কমিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ইউনিসেফের এসব পদক্ষেপগুলোর মধ্যে ছিল ভারী কম্বল বিতরণ ও কাউন্সিলার গঠন করার পদক্ষেপ।
কাউন্সিলারদের মূল কাজ ছিল তাদের নানাভাবে কাউন্সিলিং করে আত্মহত্যার পথ হতে ফিরিয়ে আনা। তবে এই চেষ্টা পুরোপুরি কাজে না লাগলেও কিছুটা সফল হয়। এই শহরের বাসিন্দারা এখন বাঁচার জন্য বেছে নিচ্ছেন ইলুলিসাতের পার্শ্ববর্তী শহরগুলোকে। পার্শ্ববর্তী শহরগুলোতে যদি এখানকার মানুষ চলে যায়, তাহলে এক সময় জনমানবশূন্য হয়ে পড়বে ইলুলিসাত।