দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও বসতি গড়তে মঙ্গল গ্রহে যেতে চাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। গ্রহটির বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড ৯৫ শতাংশ। তাপমাত্রা মাইনাস ১৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রি পর্যন্ত। লোহিত এই গ্রহে যেতে পাড়ি দিতে হবে চার কোটি মাইলের মতো পথ। গ্রহটিতে পৌঁছতে সময় লাগবে প্রায় সাত মাস। এ সময়ে বিভিন্ন স্তরে মহাকর্ষ বলের পরিবর্তনের কারণে শরীরের ওপর যে ধকল যাবে, তাও কি মোকাবেলা করা সম্ভব? এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া কঠিন। যারা যাবেন, তাদের সেখান থেকে আর ফিরিয়ে আনা হবে না- এটি জানানো হয়েছে আগেই। তার পরও হল্যান্ডের কোম্পানি মার্স ওয়ানের প্রকল্পে নির্বাচিত হয়ে মঙ্গলে যেতে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আবেদন পড়েছে ৭৮ হাজারের বেশি।
সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ হচ্ছে মঙ্গল গ্রহ। পৃথিবী থেকে অনেকটা লাল দেখানোর কারণে এর অপর নাম হচ্ছে লাল গ্রহ। মঙ্গলের পৃষ্ঠে আইরন অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে এ গ্রহটি লাল বর্ণ ধারণ করে। মঙ্গল একটি শিলাময় গ্রহ। মঙ্গল সৌর জগতের শেষ পার্থিব গ্রহ। অর্থাৎ এরও পৃথিবীর মত ভূ-ত্বক রয়েছে। এর অতি ক্ষীণ বায়ুমণ্ডল রয়েছে, এর ভূ-ত্বকে রয়েছে চাঁদের মত অসংখ্য খাদ, আর পৃথিবীর মত আগ্নেয়গিরি, মরুভূমি এবং মেরুদেশীয় বরফ। এমন পরিবেশে কীভাবে, কত দিন বাঁচা যাবে, তার ব্যাখ্যা খুঁজছেন না আবেদনকারীরা।
উদ্যোক্তাদের ধারণা, সর্বশেষ তারিখ আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে আবেদন পড়বে পাঁচ লাখের মতো। তাদের মধ্য থেকে রিয়েলিটি টিভি শোর মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে চারজনকে। ২০২২ সালে তাদের পাঠানো হবে মঙ্গলে। ২০২৩ সালে তারা সেখানে পৌঁছে শুরু করবেন কলোনি গড়ে তোলার কাজ। এমন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ২০৩৩ সালের মধ্যে পাঠানো হবে মোট ২০ জনকে।
মার্স ওয়ান কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ব্যাস ল্যান্সডরপ জানান, ১৮ বছরের বেশি বয়সী যে কেউ আবেদন করতে পারেন ভিডিও যোগাযোগের মাধ্যমে। আবেদনের ফি নির্ধারণ হচ্ছে যে দেশের প্রার্থী, সে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে। যুক্তরাষ্ট্রের আবেদনকারীর আবেদন ফি ৩৮ ডলার। আবেদন ফি থেকে পাওয়া অর্থ ব্যয় করা হবে বাছাইয়ের জন্য রিয়েলিটি শো আয়োজনে। এই শো থেকেও আসবে অর্থ, যা প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে লাগানো হবে। দর্শকের ভোটসহ বিভিন্ন দিক বিবেচনায় প্রথমে বেছে নেওয়া হবে ২৪ জনকে। তাদের প্রশিক্ষণ চলবে আট বছর। তাদের মধ্য থেকেই চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া হবে ভাগ্যবান চারজনকে।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, পৃথিবী ছাড়া আর কোনো গ্রহে যদি প্রাণ থাকে তবে সেটা মঙ্গল গ্রহে। মঙ্গল গ্রহে খাল আবিষ্কার হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওডিসি নামের একটি মহাকাশযান প্রথম এই গ্রহে পানি পাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলো। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেকটি মহাকাশযান ফিনিক্স মঙ্গল গ্রহ থেকে বরফ নিয়ে আসে। পৃথিবীর প্রতিবেশী হিসেবে মঙ্গল গ্রহের প্রতি মানুষের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা বেশি। কারণ, এ গ্রহটি নিয়ে যতো গবেষণা হয়েছে, তা সৌর জগতের আর কোন গ্রহ নিয়ে হয়নি। মঙ্গল গ্রহ সম্পর্কে বেশ কিছু ধারণা প্রচলিত ছিল। কয়েকটি অভিযান থেকে প্রাপ্ত তথ্যও এসব ধারণা সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল।
সূত্রঃ সমকাল।