দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময় মানুষের সুখ-দুঃখের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়ে পড়েছে স্মার্টফোন। তবে অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহার মস্তিষ্ক, মন এবং শরীরের মারাত্মক ক্ষতি করে যাচ্ছে।
গবেষকরা বলেছেন, স্মার্টফোন হতে সব সময় নীল রঙের আলো নির্গত হয়ে থাকে। সে কারণে ঝলমলে রোদের মাঝেও স্মার্টফোনের কার্যক্রমকে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। এই ধরনের আলো ল্যাপটপ, টিভি, এসব থেকেও নির্গত হয়ে থাকে।
গবেষকরা বলেছেন যে, মূলত স্মার্টফোনের এই আলো তৈরি করা হয়েছে সূর্যের আলোর অনুকরণে। আপনার মস্তিষ্ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে, যা সূর্যের আলো যতোক্ষণ থাকবে ততোক্ষণ মেলাটোনিন নামক এক ধরনের হরমোন নিঃসরণ করতে থাকবে, এতেকরে আপনার ঘুম আসা বাধাগ্রস্ত করবে।
সূর্যের আলো ও স্মার্টফোনের আলো একই রকমের হওয়ার কারণে রাতে যখন আপনি স্মার্টফোন চালান তখন এই আলো আপনার মস্তিষ্ককে বিভ্রান্ত করে। মস্তিষ্ক দিন ভেবে নিয়ে মেলাটোনিন নিঃসৃত করতে থাকে, যে কারণে আপনি রাতে আপনার ঘুম আসে না বা ভালোভাবে ঘুমাতে পারেন না।
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বলেছেন, ঘুমানোর দুই হতে তিন ঘণ্টা আগে যেকোনো ধরনের বৈদ্যুতিক ডিভাইস ব্যবহার বন্ধ রাখা উচিত। মস্তিষ্কের পাইনিল গ্ল্যান্ড হতে মেলাটোনিন নির্গত হয়। নীল আলো অনিদ্রার প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই বিশেষজ্ঞরা এর জন্য দায়ী করেছেন আলোক সংবেদনশীলতাকেই, যার নাম হলো মেলানোপসিন। এই মেলানোপসিন রেটিনার স্নায়ুর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য যে কোষ থাকে, সেটার মধ্যে পাওয়া যায়, যেটি আসলে নীল আলো পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠে।
স্বাস্থ্যবিষয়ক সাময়িকী বোল্ড স্কাই বলেছে, স্মার্টফোনের সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে মূলত কিশোর-কিশোরীদের ওপর। এ ক্ষেত্রে তারা প্রাপ্তবয়স্কদের হতে অনেকখানি সংবেদনশীল। কারণ হলো স্মার্টফোনের জন্য কিশোর-কিশোরীদের বেশি রাত জাগার অভ্যাস বেশি। যে কারণে কিশোর বয়সে তাদের প্রাকৃতিক সারকাডিয়ান রিদম (কিশোর বয়সের শারীরবৃত্তিক বৃদ্ধি) ব্যাহত হয়ে থাকে।
যেমন বাসায় লাগানো ওয়াই-ফাই ও হাতে থাকা স্মার্টফোনের তড়িৎচৌম্বকীয় বিকিরণ শিশু স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণও হতে পারে।
আবার ঘুমানোর পূর্বে স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে আনা ও ঘুমানোর পূর্বে টিভি, ল্যাপটপ এবং স্মার্টফোন জাতীয় সব ধরনের ডিভাইস একেবারে বন্ধ করে ঘুমানো দরকার।
আরেকটি কাজ আপনি করতে পারেন। সেটি হলো আপনি ইন্টারনেট হতে ফ্লাক্স ডাউনলোড করে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের পর্দাগুলো রাত এবং দিনে সমন্বয় করে নিতে পারবে। এতে আপনার ইলেকট্রনিক ডিভাইসের আলোটি আপনার ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না।
গবেষকরা বলেছেন, স্মার্টফোনের আলো স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে ব্যাহত করে থাকে। যে কারণে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো ও সকালে ঘুম থেহতে দ্রুত ওঠা আপনার জন্য অনেক কঠিন হয়ে পড়বে।
তাছাড়া রাতে অতিরিক্ত আলোর প্রভাবে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। এটি বুক ও প্রস্টেট (মূত্রস্থলির গ্রিবাসংলগ্ন গ্রন্থিবিশেষ) ক্যান্সারের অন্যতম কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
আর এসব কারণে যদি আপনার স্বাভাবিক ঘুমের প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে তাহলে পরের দিন সকালে একাগ্রতা এবং মনোযোগ অনেক হ্রাস পায়, কাজে-কর্মে বা পড়াশোনায় অনীহা দেখা দিতে পারে। তাই অধিক রাত জেগে স্মার্টফোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। সুস্থ্য-সুন্দর জীবন যাপন করতে চাইলে এই নিয়মগুলো মানতেই হবে। তা না হলে আপনাকে ভাগ্যের ওপর দোষ চাপানো ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।