দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হিটলারকে নিয়ে এতোবছর পরও যেনো লিখার শেষ হচ্ছে না। হিটলারের বিভিন্ন বিষয় বার বার উঠে আসছে। এবার তেমনই একটি ব্যতিক্রমি খবর হলো বিয়ের পরদিনই নাকি আত্মহত্যা করেছিলেন হিটলার!
নাৎসী জার্মানির প্রতিষ্ঠাতা হিটলারের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে বহুদিন অতিবাহিত হওয়া সত্বেও লেখালেখি হয়েই চলেছে। বিশেষ করে হিটলারের মৃত্যু নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র তত্ব রয়েছে। অনেকেই বলেন, হিটলার ১৯৪৫ সালে মারা যাননি, তিনি জার্মানির পরাজয়ের পর একটি সাবমেরিনে করে আর্জেন্টিনা পালিয়ে গিয়েছেন। আরেকটি তত্বে বলা হয়, হিটলার এ্যান্টার্কটিকায় এক গোপন ঘাঁটিতে চলে যান।
এও বলা হয়, হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষদিকে মারা যাননি। তিনি নাকি পালিয়ে গিয়ে আরও অনেক দিন বেঁচেছিলেন- এরকম নানা তত্বকে ভুল দাবি করেছে এবার একদল ফরাসী বিজ্ঞানী। তারা বলছেন যে, তারা নিশ্চিত প্রমাণ পেয়েছেন যে তিনি ১৯৪৫ সালেই বার্লিনে মারা যান। মারা যাওয়ার ঠিক আগের দিন দীর্ঘদিনের বান্ধবী ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেছিলেন!
ফরাসী ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল রাশিয়ায় সংরক্ষিত হিটলারের দাঁত এবং মাথার খুলির অংশ পরীক্ষা করে বলেছেন যে, হিটলার যে বুলেটের আঘাত এবং সায়ানাইড পান করার কারণে মারা গিয়েছিলেন- এই বিষয়টিতে তারা প্রায় সম্পূর্ণ নিশ্চিত।
ইউরোপিয়ান জার্নাল অব ইন্টার্নাল মেডিসিন নামে এক সাময়িকীতে ওই পরীক্ষানিরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়। প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে বলেছেন, তাদের এই জরিপের কারণে নাৎসী জার্মানির নেতার ভাগ্যে কি ঘটেছিল তা নিয়ে বহু ষড়যন্ত্র তত্ব নস্যাৎ হয়ে গেছে বলে তারা মনে করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের ৩০ এপ্রিল বার্লিনে মার্টির নিচের বাংকারের ভেতর এডলফ হিটলার ও তার সদ্যবিবাহিতা স্ত্রী ইভা ব্রাউন একসঙ্গে আত্মহত্যা করেন।
হিটলারের স্ত্রী ইভা ব্রাউন সায়ানাইড বিষ পান করেন, হিটলার নিজের মাথায় গুলি করেন ও সম্ভবত সায়ানাইডও গ্রহণ করেন। দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী ইভা ব্রাউনকে তার আগের দিন বাংকারের মধ্যেই বিয়ে করেন হিটলার। তখন রুশ সৈন্যরা বার্লিন শহরের উপকণ্ঠে ঢুকে পড়ে এবং নাৎসী শাসকদের পতন নিশ্চিত হয়ে যায়।
খবরে বলা হয়, হিটলারের মৃতদেহ জার্মান সৈন্যরাই বাংকার হতে বের করে রাইখ চান্সেরির বাগানে একটি গর্তে ফেলে পেট্রোল ঢেলে দেহটিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। তবে তার মরদেহের কিছু অংশ রুশরা উদ্ধার করে ও তা মস্কোয় নিয়ে যায়।
ফরাসী বিজ্ঞানীরা বলছেন, ১৯৪৬ সালের পর তারাই প্রথম হিটলারের দেহাবশেষের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে সক্ষম হন। হিটলারের মাথার খুলির একাংশের বাম দিকে একটি গর্ত দেখা যায় – যা সম্ভবত বুলেটের আঘাতেই সৃষ্ট। তাছাড়া হিটলারের বাঁধানো দাঁতের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে তারা নীলাভ আস্তরণও দেখতে পেয়েছেন – যা সম্ভবত ধাতব দাঁতের সাথে সায়ানাইডের বিক্রিয়ার কারণে সৃষ্টি হওয়া।
বিবিসির খবরে বলা হয়, প্রধান গবেষক ফিলিপ শার্লিয়ে এএফপি-কে বলেন, তাদের এই গবেষণার পর এখন সব ষড়যন্ত্র-তত্ব থেমে যাওয়া উচিত।
হিটলারের মৃত্যুর পরদিন অর্থাৎ ১ মে লন্ডনের ৪০ মাইল উত্তরে রেডিং শহরের উপকণ্ঠে বিবিসি মনিটরিং এর দফতরে বসে জার্মান রেডিওর অনুষ্ঠান শুনছিলেন জার্মানি হতে পালিয়ে আসা তার কর্মী কার্ল লিমান। তিনি বলছিলেন যে, শ্রোতাদের জানানো হলো যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসছে। তারপর ভাবগম্ভীর সঙ্গীত বাজালো এবং ঘোষণা করলো যে, `বলশেভিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করার সময়` হিটলারের মৃত্যু হয়েছে।
তবে সে সময় তারা বলেনি হিটলার আত্মহত্যা করেছেন, বরং তাদের কথায় মনে হয় যে, হিটলার যুদ্ধ করতে করতে নিহত হয়েছেন- প্রকৃতপক্ষে যা ছিল একটা বড় মিথ্যা। এর মাত্র কয়েক দিন পর ৭ মে জার্মানি আত্মসমর্পণ করে- ইউরোপের ৬ বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটে।