দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অন্যতম আবিষ্কার হল এক্স-রে বা রঞ্জন রশ্মি। এক সময় মানূষ ভাবতেই পারতো না জীবিত মানুষের কঙ্কালের ছবি দেখা সম্ভব হবে। কিন্তু এক্স-রে আবিষ্কার মানুষের সেই চিন্তাধারাকে পাল্টে দিয়েছে। এখন প্রশ্ন হল এক্স-রে এর আরেক নাম রঞ্জন রশ্মি কেন?
আমরা ডিকশনারিতে সার্চ দিলে বা বাংলা অর্থ খোঁজ করলে এক্স-রে এর অর্থ পায় রঞ্জন রশ্মি। প্রকৃতপক্ষে এক্স-রে এর অপর নাম রঞ্জন রশ্মি করা হয়েছিল এক্স-রে এর আবিষ্কারক জার্মান পদার্থবিদ উইলহেম রঞ্জনের নামানুসারে। তাহলে চলুন একটু জেনে নেওয়া যাক এক্স-রে এর ইতিহাস। ক্যাথোড রশ্মি অনেক আগেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। তবে আবিষ্কার হলেও এর সঠিক ব্যবহার কেউ জানতো না। ১৮৯৫ সালে জার্মান পদার্থবিদ উইলহেম রঞ্জন একটি কালো কাগজে ঢাকা গ্লাস টিউবে ক্যাথোড রশ্মি চালিয়ে পরীক্ষা করছিলেন। তার উদ্দেশ্য ছিল কাঁচ থেকে ক্যাথোড-রে বের হয় কিনা পরীক্ষা করা।
এমন সময় একটি মজার ঘটনা ঘটে গেল। রঞ্জন লক্ষ্য করলেন কিছু দুরে এক ধরণের আলো দেখা যাচ্ছে। তিনি প্রথমে ভাবলেন হয়তো কাঠবোর্ড ফেটে গিয়ে এই রশ্মি বের হচ্ছে। কিন্তু কোথাও কোন ছিদ্র নেই। তিনি ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলেন, ক্যাথোড রশ্মি কাঠবোর্ড ভেদ করে বের হচ্ছে। এমন সময় রঞ্জনের মাথায় বিচিত্র একটি আইডিয়া চলে এলো- তিনি ভাবলেন, যে রশ্মি কার্ডবোর্ড ভেদ করে বের হতে পারছে তা মানবদেহকে কেন ভেদ করতে পারবে না?
ঠিক তখনি রঞ্জন তার স্ত্রীকে ডেকে এনে স্ত্রীর হাত সামনে রেখে পরীক্ষা চালালেন। এই পরীক্ষায় তিনি যে ফলাফল পেলেন তা মানুষের চিন্তাধারাকে পাল্টে এক নতুন ইতিহাস তৈরি করলো। প্রথমবারের মতো কোন রকম কাটাছেঁড়া না করেই মানবদেহের কঙ্কালের ফটোগ্রাফিক ইমেজ তৈরি করলেন। রঞ্জনের স্ত্রী নিজের কঙ্কালের ছবি দেখে আঁতকে উঠে বলেছিলেন, “আমি যেন সাক্ষাৎ মৃত্যুকে দেখতে পাচ্ছি চোখের সামনে!”
আর সেই থেকে মানুষের কোন অঙ্গ বা সম্পুর্ণ কঙ্কালের ছবি তুলতে এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। এক্স-রে রশ্মি মুলত এমন একটি তড়িৎ চৌম্বক বিকিরণ যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য টেন ইনভার্স টেন মিটার। এটি সাধারণ আলোর চেয়ে তুলনামুলক অনেক কম। তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম থাকার কারণে এটি যে কোনো পদার্থকে খুব সহজেই ভেদ করতে পারে। পরবর্তীতে এক্স-রে এর আবিষ্কারক উইলহেম রঞ্জনের নাম অনুসারে অনেকেই এক্স-রে কে রঞ্জন রশ্মি বলে থাকেন। এই এক্স-রে আবিষ্কারের কারণেই উইলহেম রঞ্জন পদার্থ বিজ্ঞানে প্রথম নবেল পুরষ্কার লাভ করেন।