দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কিছু দিন আগে ১৫-১৬ জুন অনুষ্ঠিত গ্লোবাল ফিউচার ২০৪৫ আন্তর্জাতিক কংগ্রেস নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। উক্ত সম্মেলনে স্নায়ুবিজ্ঞান, জৈবপ্রযুক্তি এবং রোবোটিক্স এর সমন্বিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মানব মস্তিষ্ক কৃত্রিম ব্যবস্থায় রূপান্তর প্রত্যাশা বিষয়ক আলোচনা হয়। রাশিয়ান ধনকুবের ৩২ বছর বয়স্ক Dmitry Itskov উক্ত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। ২০৪৫ সালের মধ্যে মানব মস্তিষ্ক কে মেশিনে রূপান্তর এর মাধ্যমে অমরত্ব লাভ সম্ভব – এই বিশ্বাস উক্ত সম্মেলনে তিনি ব্যক্ত করেন।
মূলত বহুকাল থেকেই মানুষ অমরত্বের সন্ধানে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই পথ যাত্রায় মানুষের সফলতাও কম নয়। কৃত্রিম অঙ্গ প্রতঙ্গ ব্যবহারের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠছে মানুষ। কৃত্রিম কিডনি স্থাপন করে বেঁচে থাকছেন অনেক কিডনি রোগী। বিকালঙ্গরা অঙ্গ ফিরে পাচ্ছেন রোবোটিক্স এর কল্যাণে। এর প্রতিফলন আমার দেখতে পাই বর্তমান নির্মিত সিনেমাগুলোতে। জেমস ক্যামেরুন এর এভাটার (Avatar) তার চমৎকার একটি উদাহারণ। এখানে দেখানো হয় কিভাবে মানব মস্তিষ্ক – মন, কৃত্রিম দেহতে স্থানান্তরিত করা হয়। এবং প্রতিকূল পরিবেশে কৃত্রিম দেহ কিভাবে কাজ করে। এবার সিনেমাতে নয় বাস্তবেই এরকমটি ঘটানার জন্যই The 2045 Initiative নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন Dmitry Itskov। প্রকল্পটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
দিমিত্রি মনে করেন মানব মস্তিষ্ক কৃত্রিম দেহতে স্থানান্তর এই শতকের ২০৪৫ সালের মধ্যেই সম্ভব। এর জন্য তিনি লক্ষ্যমাত্রাও বেধে নিয়েছেন। ২০৪৫ বিষয়ক প্রকল্পটি মানুষের অমরত্ব লাভের জন্য আগামী ৩২ বছর ধরে কাজ করবে। শুরুর দিকে রোবোটিক এভাটার তৈরি করা হবে যা দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, মানব মস্তিষ্কের আদলে কম্পিউটার মস্তিষ্ক তৈরি করা হবে, হলোগ্রাফিক এভাটারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে। মানুষের অমরত্ব বিষয়ক উদ্যোগটি আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বেশ সাড়া জাগিয়েছে। জানা গেছে রাশিয়ার ৩০ জন শীর্ষ বিজ্ঞানী অমরত্ব বিষয়ক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করবেন।
অনুষ্ঠিত সম্মেলন এর আগে দিমিত্রি একটি স্বচ্ছ ধারাবাহিক পর্যায়ক্রম তৈরি করেছিলেন যাতে তিনি দেখান কিভাবে ২০৪৫ সাল নাগাদ মানুষ অমরত্ব লাভ করতে পারে। তার পর্যায়ক্রম অনুসারে,
• ২০২০ সালের মধ্যে মানুষ দূর থেকে মস্তিষ্ক দ্বারা রবোট নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে অনেকটা এভাটারের মতন
• ২০২৫ সালের মধ্যে মানব মস্তিষ্ক কে রোবোটিক লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম এ স্থাপন করা সম্ভব হবে
• ২০৩৫ সালের মধ্যে এভাটার তৈরি করা সম্ভব হবে যা মানব ব্যক্তিত্ব অনুকরণ করতে পারবে
• ২০৪৫ সালের মধ্যে মানব মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। মস্তিষ্কের সকল কোর্টেক্স ফাংশন, স্মৃতি, ব্যক্তিত্ব সব কিছু কম্পিউটার এ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং প্রয়োজনে এভাটারে স্থানান্তরিত করা যাবে।
http://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=Ik_3Q2kQbfQ
বর্তমানে, দিমিত্রি তার চিন্তা ভাবনা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। সরকারি মনোযোগ আদায়ের চেষ্টা করছেন যাতে এটাকে জাতীয় ইস্যু হিসাবে নেয় এবং সেই অনুযায়ী অমরত্ব প্রকল্পটি এগিয়ে নিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে। হয়তো সেদিন খুব বেশি দেরি নেই যেদিন এনিমেটেড সিনেমা এভাটারের মতন মানুষ নিজেকে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করবে।
তথ্যসূত্র: দি টেক জার্নাল