দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায় নদীমোহনায় অবস্থিত এই গুলিয়াখালি সৈকত। ক্ষুদ্র চাকা চাকা মাটিগুলো যেন একেকটা সবুজ দ্বীপ। স্থানীয়দের কাছে এ সমুদ্রসৈকত মুরাদপুর সি বিচ নামে পরিচিত। মনভরে প্রকৃতি উপভোগের এক অনন্য লীলাভূমি।
নগরের ব্যস্ততা, যানজট, হাঁপিয়ে ওঠা জীবনকে অবশ্যই একটু স্বস্তি দেবে এ সমুদ্রসৈকত। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত যেন অপার্থিব শান্তিময়। এর মুগ্ধতার আবেশ থাকে অনেক দিন। বিশাল মাঠ আর কিছুদূর পরপর সারিহীন গাছের বাগান। এক পাশে সাগর আর অন্য পাশে কেওড়াবন এই সি বিচকে করেছে অতুলনীয়। কেওড়াবনের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া খালের চারপাশে কেওড়াগাছের শ্বাসমূল দেখা যায়।
গুলিয়াখালী সি বিচকে ভিন্নতা দিয়েছে সবুজ গালিচার বিস্তৃত ঘাস। সবুজ ঘাসের বুকে শুয়ে সাগরের ঢেউয়ের গর্জন আর বাতাসের শীতলতা, যা আপনাকে দেবে অন্য রকম এক প্রশান্তি। সবুজ ঘাসের উন্মুক্ত প্রান্তর নিশ্চিতভাবে আপনার চোখ জুড়াবে।
সৈকতের পাশে সবুজ ঘাসের এই মাঠে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে আঁকাবাঁকা নালা। এই সব নালায় জোয়ারের সময় পানিতে ভরে ওঠে। চারপাশে সবুজ ঘাস আর তারই মধ্যে ছোট ছোট নালায় পানিপূর্ণ এই দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।
ভাটার সময় সি বিচকে অনেকটাই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত মনে হয়। বিচের পাড়ে বসে ছবি তোলা যায় কিংবা সূর্যাস্ত দেখা যায়। আর জোয়ারের পানি যখন বনের ভেতরে ঢুকে যায়, তখন দৃশ্য থাকে অন্য রকম। সবুজ খোপ খোপ পাড়, যা গুলিয়াখালীর ট্রেডমার্ক দৃশ্য হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছে, তার ওপরে বসে পানিতে পা ভিজিয়ে রাখতে পারবেন।
সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই এলাকার মানুষ অত্যন্ত মিশুক প্রকৃতির। আপনি কথা বলতে না চাইলেও এরা আপনার সঙ্গে অনেক কথা বলবে। এককথায় বলতে গেলে সহজ-সরল যাকে বলে। ডর-ভয়হীনভাবে আপনি এই সি বিচ স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ করতে পারবেন।
সৈকত থেকে ফেরার পথে আমরা একটি নৌকা ভাড়া করতে পারেন। তারপর নৌকায় করে ঘুরে দেখতে পারেন খালসংলগ্ন ম্যানগ্রোভ বন। নৌকা খাল থেকে সমুদ্রের খানিকটা ভেতরেও ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে। নৌকায় চড়ে ম্যানগ্রোভ বন দেখার সময় মনে হবে যেন সুন্দরবনে চলে এসেছেন। যাওয়ার আগেও জানবেন না কী এক অসম্ভব সুন্দর সৈকত অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য। সুতরাং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
খাবারদাবার:
এখানে খাবারের কোনো সুব্যবস্থা নেই। তবু চা, রুটি যা পাওয়া যায়, দোকানদার আশা করেন, তা খেয়ে আপনি তাঁদের কিছু বকশিশ দেবেন। কারণ, এটাই তাঁদের রুজি। সুতরাং খাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড বাজারে ফিরে আসতে হবে কিংবা আসার সময় খাবার কিনে নিয়ে যেতে পারেন।
যেভাবে যাবেন:
যেকোনো জায়গা থেকে আপনাকে সীতাকুণ্ড শহরে আসতে হবে। ঢাকামুখী রাস্তার বাঁ পাশ দিয়ে একটু নিচে নামলেই সিএনজি পাবেন। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া নেবে। আর রিজার্ভ যেতে চাইলে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। বেড়িবাঁধ এসে সিএনজি আপনাকে নামিয়ে দেবে। সেখান থেকে সাগরের বুকে চরতে চাইলে এখানকার জেলেদের নৌকায় চড়তে পারেন। মোটামুটি সুলভ মূল্যেই ঘুরতে পারবেন। আবার চাইলে হেঁটেও সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট লাগবে।
বি.দ্রঃ অনুগ্রহ করে পলিথিন,পানির বোতল,চিপসের প্যাকেট ইত্যাদি অপচনশীল বস্তু সাগরে ফেলবেন না। এবং অবশ্য অবশ্যই কোন ধরনের প্রবাল,শামুক ঝিনুক কড়ি ইত্যাদি সাথে নিয়ে অাসার চিন্তাও করবেন না।