দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণ—তিন দিকে বঙ্গোপসাগর আর পূর্বে কুতুবদিয়া চ্যানেল। মধ্যিখানে প্রায় ২১৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে সাগরের বুকে ভেসে থাকা একটি দ্বীপ—কুতুবদিয়া।
কুতুবদিয়া কক্সবাজার জেলায়। এখানে গেলে দেখা মিলবে, বাংলাদেশের একমাত্র উইন্ড মিলের। বায়ু থেকে তৈরি হয় বিদ্যুৎ।
(Click on the Image for Full Screen View)
ছবিঃ কুতুবদিয়ার কিছু ছবি
চকরিয়ার বড়ইতলী মোড়ে নামলাম। বাজার থেকে ডানের রাস্তা মগনাম ঘাটের দিকে গেছে। সিএনজি অটোরিকশায় করে প্রায় ৩০ মিনিটে চলে গেলাম ঘাটে। মগনামা ঘাট থেকেই দেখা যায় দূরের আবছা কুতুবদিয়া। ঘাট থেকে দ্বীপে যাওয়ার জন্য কিছুক্ষণ পরপর ইঞ্জিন নৌকা আর স্পিডবোট রয়েছে। উঠে বসলাম ইঞ্জিন নৌকায়, কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বড়ঘোপ ঘাটে যেতে সময় লাগল প্রায় ৩০ মিনিট।
১৯১৭ সালে কুতুবদিয়া থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। যাতায়াতব্যবস্থা ভালো। রাস্তা পাকা। চলাচলের জন্য আছে ব্যাটারি রিকশা, টেম্পো এমনকি ফোর হুইল গাড়িও। সব রকম দোকানপাটও রয়েছে। পানি একটু বেশি লবণাক্ত এখানে। তাই ইতিউতি অসংখ্য লবণের ঘের।
বড়ঘোপ বাজারে ‘সমুদ্র বিলাস’—এই একটাই ভালো হোটেল। যার একদম পাশেই সাগর। ঘাট থেকে রাসরি হোটেলে যাওয়ার জন্য রিকশা পাওয়া যায়। বাজারে বেশ কয়েকটা খাবার হোটেল আছে। দুপুরে খাওয়া ও বিশ্রামপর্ব শেষে চলে গেলাম সাগরপাড়ে। তেমন পরিচিতি না থাকার কারণেই স্থানীয় লোকজন ছাড়া তেমন পর্যটক চোখে পড়ে না। পাশেই অসাধারণ ঝাউবন। ঝাউবনের ভেতরটা মন ভালো করে দেওয়া পরিবেশ। সেখানে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে রাওনা দিলাম উইন্ড মিলের দিকে। সাগরের সঙ্গেই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক-একটা পাখা। ইংরেজি L অক্ষরের মতো অনেক জায়গা নিয়ে বসানো পাখাগুলো। এর একটা অংশ একদম সাগরের পাড় ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। উইন্ড মিল পশ্চিম দিকে হওয়ার কারণে সাগরে সূর্যাস্তের দৃশ্যটা ছিল দারুণ।
কুতুবদিয়ার প্রকৃতিকুতুবদিয়ায় আরও আছে বাতিঘর। প্রথম বাতিঘরটি বানানো হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। সেটি সাগরে ডুবে যাওয়ার পর নতুন করে বানানো হয়েছে আরেকটি। দেখতে মোবাইল ফোনের টাওয়ারের মতন। দূর থেকেই দেখতে হয়—‘জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ’। বড়ঘোপ বাজার থেকে রিকশায় যেতে সময় লাগে প্রায় ৪০ মিনিট। এ ছাড়া ঘুরে আসতে পারবেন কুতুব আউলিয়ার মাজার কুতুবাগ। পুরো দ্বীপটাকে ব্যাটারিচালিত রিকশা দিয়ে ঘুরে দেখা যায়। সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতন। তবে ঘোরাঘুরির পর্বটা সন্ধ্যার আগেই শেষ করা ভালো। বিদ্যুৎ বলতে দিনের বেলায় সৌর আর রাতে জেনারেটর। এলাকার মানুষের ব্যবসা মূলত লবণ আর শুঁটকি ঘিরে। কম দামে ভালো শুঁটকি পাওয়া যায় এখানে।
রাতে থাকার ইচ্ছা না থাকলে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘাটে পৌঁছাতে হবে। শেষ ট্রলার সন্ধ্যা সাতটায় ছাড়ে। সাগর এখন শান্ত। তবে ঝড়-বৃষ্টির সময় উত্তাল সাগরে কুতুবদিয়া যাওয়াটা একটু ঝুঁকিপূর্ণ।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা-কক্সবাজারের বাসে করে গিয়ে চকরিয়ার বুড়াইতলী মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে মগনামা ঘাট (সিএনজি রিজার্ভ ২৫০ টাকা, ভাগাভাগি করেও যাওয়া যায়), ইঞ্জিন নৌকায় ২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় কুতুবদিয়া। দ্বীপে ব্যাটারি রিকশায় দরদাম করে ওঠা ভালো। টেম্পো আছে আরও কম খরচে ঘুরে দেখার জন্য। ফিরে আসার একই রাস্তা। এ ছাড়া বড়ঘোপ বাজার থেকে প্রতিদিন সকালে বড় ট্রলারে গভীর সমুদ্র দিয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যাওয়া যায়, সময় লাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা।