দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময় যুব সমাজের একটি বড় নেশা হলো স্মার্টফোন। তারা সারাক্ষণ এই স্মার্টফোন নিয়ে থাকতে পছন্দ করে। কিন্তু গবেষকরা বলেছেন, এই স্মার্টফোনের কারণে মস্তিষ্ক স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে!
আধুনিক প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় গোটা বিশ্ব বর্তমানে হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। সহজ কথায় বললে আপনার হাতে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ থাকা মানেই হলো মুহূর্তেই আপনি চষে বেড়াতে পারেন গোটা পৃথিবী। তবে এই স্মার্টফোনের যেমন নানাবিধ সুবিধা ঠিক তেমনি অতিমাত্রায় স্মার্টফোনের উপর নির্ভরতা আপনাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে দিচ্ছে।
সম্প্রতি এমআইটি স্লোয়ান ম্যানেজমেন্ট রিভিউ-এ ইতালি ও ফ্রান্সের দু’টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। যেখানে গবেষকরা কিছু শিক্ষার্থীকে প্রতি সন্তাহে একটি দিন স্মার্টফোন ছাড়া রেখে পরীক্ষা চালান। তাতে দেখা যায়, সামগ্রিকভাবে স্মার্টফোন ছাড়া থাকার সময়টিতে তাদের মধ্যে মানসিক অবসাদ ও উৎকণ্ঠ বেড়ে যেতো। তারা যে অতিরিক্ত সময় পেয়ে যাচ্ছেন ওই দিন, তাতে কখন কী করবেন সেই সিদ্ধান্তহীনতার কারণে দৈনন্দিন রুটিনেও গোলমাল করছিলেন তারা।
তবে কেনো এই মানসিক পরিবর্তন? কোরিয়া ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক দেখিয়ে দিয়েছেন যে, স্মার্টফোন সার্ফিং -এ অত্যধিক নেশার কারণে কিছু স্থায়ী পরিবর্তন আসছে সংশ্লিষ্ট টিনএজারদের মস্তিষ্কে। যে কারণে ডিপ্রেশন, অ্যাংজাইটি, এক্সেসিভ ইমপালসিভিটি, ইনসমনিয়ারের মতো রোগের কবলে পড়ছেন টিনএজাররা।
রেডিয়োলজিক্যাল সোসাইটি অফ নর্থ আমেরিকা কনফারেন্সে এক স্টাডি রিপোর্টে কোরিয় গবেষকদলের প্রধান হিউং সাক সিও জানিয়েছেন যে, ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং (এমআরআই) এর উন্নততর পরীক্ষা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স স্পেকট্রোস্কোপি-র (এমআরএস) সাহায্যে তারা দেখেছেন যে, স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটে আসক্ত একদল টিনএজারদের মস্তিষ্কে গামা অ্যামাইনো বিউটারিক অ্যাসিড (গাবা) ও গ্লুটামেট -গ্লুটামাইন (জিএলএক্স) এর অনুপাত স্বাভাবিকের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বদলে দেয়, যা মস্তিষ্কে তরঙ্গপ্রবাহের গতিকে স্বাভাবিকের থেকে অনেক শ্লথ করে ফেলে।
মূলত গাবা দৃষ্টিশক্তি, মোটর নার্ভ নিয়ন্ত্রণ ও একাধিক মস্তিষ্কজনিত কার্য, যেমন উদ্বেগ , বিচার-বিবেচনার সঠিক ক্রিয়াশীলতার জন্যেই দায়ি।
কোরিয় গবেষকদের দেওয়া তথ্যে আরও দেখা যায় যে, স্মার্টফোনের নেশা না থাকা স্বাভাবিক টিনএজারের মস্তিষ্কের অ্যান্টেরিয়র সিঙ্গুলেট কর্টেক্সে গাবা ও জিএলএক্স এর অনুপাত যা থাকে, নোমোফোবিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে সেটি থাকে কয়েকগুণ বেশি। বাড়তে থাকে ডিপ্রেশন এবং উদ্বেগ। গাবার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সেইসঙ্গে বাড়ে ঝিমুনি, স্নায়ুবৈকল্য। একই সঙ্গে গাবা ও ক্রিয়াটিন অনুপাত এবং গাবা ও গ্লুটামেট অনুপাতও স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়ায় শরীরে এসে ভিড় করে অনভিপ্রেত নানা উপসর্গ।
ওই গবেষকদলের প্রধান হিউং সাক সিও জানিয়েছেন যে, তাদের গবেষণা এই বিষয়ে পথিকৃত হলেও ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের বা সংখ্যক নমুনার উপর পরীক্ষা চালালে সঠিকভাবে জানা সম্ভব, আদতেও যুব সমাজকে কতোটা ক্ষতি করছে স্মার্টফোনের নেশা। গবেষকরা তাই যুব সমাজকে সময় থাকতে মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।