দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অত্যন্ত চাপা স্বভাবের ছিল জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী মিতা নূর। কখনও কোনও কারণে মন খারাপ হলেও কাওকে কিছুই বলতো না।
মানুষ যখন বেঁচে থাকেন তখন তার ভালো দিকগুলো ওঠেনা। কিন্তু তিনি যখন পরপারে পাড়ি জমান তখন তার সকল ভালো দিকগুলো উঠে আসে- এটাই বোধহয় জগত সংসারের নিয়ম। ‘জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূর মৃত্যুর পরও তাঁর সম্পর্কে ভালো দিকগুলো বেরিয়ে আসছে। পত্র-পত্রিকায় মিতা নূরের নানা জীবন কাহিনী ছাপা হচ্ছে। মিতা নূর একজন ভালো বন্ধু ও আদর্শ মা ছিলেন। জীবনসঙ্গিনী হিসেবে তার সঙ্গে পথচলা ছিল বন্ধুর মতোই। এভাবে চলে যাওয়াটা ভাবনার বাইরে ছিল।’
অনলাইন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, মিতা নূরের মৃত্যু রহস্য উদ্ঘাটনে গতকাল ৩ জুলাই সকালে নিহতের স্বামী সাহানুর রহমান মজুমদার ওরফে রানাকে তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গুলশান থানা পুলিশের একটি চৌকস দল বিভিন্ন কৌশলে রানাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তিন ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদে রানা ছাড়াও দুই সন্তানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কাজের লোক এবং গাড়ি চালকও তথ্য দিয়েছেন জিজ্ঞাসাবাদে। জিজ্ঞাসাবাদকারী দলের এক কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘সাহানুর রহমান জিজ্ঞাসাবাদে মিতা নূরের আদর্শ নিয়ে কথা বলেন। একজন ভালো বন্ধু, জীবনসঙ্গিনী হিসেবে প্রশংসা করেন। টানা ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদে মাঝে মধ্যে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তবে কিছু প্রশ্নের উত্তরে পাশ কাটিয়ে যাওয়া এবং আপত্তি তোলেন মিতা নূরের স্বামী রানা। পুলিশের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘তার সঙ্গে কারও পরকীয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
জিজ্ঞাসাবাদে সাহানুর রহমান বলেন, মনোমালিন্য হতো। মিতার স্বামী আরও স্বীকার করেন, ‘মিতা খুব চাপা স্বভাবের ছিল। কিছু বলত না।’ গুলশান থানার ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিতা নূরের স্বামীকে নারী ঘটিত বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাকে বলা হয়েছে, আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, আপনার পরকীয়া নিয়ে কথা উঠেছে। এ বিষয়ে সাহানুর বলেন, এ ধরনের কোনো কেলেঙ্কারি নেই। একই সঙ্গে নিকেতনের আপনার বায়িং হাউসে অন্য নারীদের আনাগোনা ছিল কি-না এ ধরনের তথ্য জানার চেষ্টা করা হলে মিতার স্বামী বলেন, এসব তথ্য সঠিক নয়। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, নারী ঘটিত বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েনসহ বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কান্নায় সময়ক্ষেপণ করেন সাহানুর রহমান। তিনি বলেন, স্ত্রীকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়েছি। পুরো পরিবার শোকাহত। এ ধরনের প্রশ্ন না করতেও তিনি অনুরোধ করেন। সাহানুর রহমান শুধু মনোমালিন্যের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হ্যাঁ ঝগড়া হতো এবং তা আমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেলি। কিন্তু মিতা ছিল চাপা স্বভাবের, তাই কোনো কিছু খুলে বলত না। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, মিতা নূর নিকেতনে তার স্বামীর বায়িং অফিসে গিয়ে জিনিসপত্র ভাংচুর করেছেন। সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে নিহতের স্বামী বলেন, পরিবারে অনেক কিছুই ঘটে। আবার ঠিক হয়ে যায়।
বাড়ির কাজের বুয়া হালিমা বেগম ও শিমু আক্তার এবং কার চালক সবুজ মিয়াকে বিভিন্ন কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশের দলটি। তিন ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ দু’জন কর্মকর্তা একটি কক্ষে মিতা নূরের স্বামী সাহানুর রানা এবং পৃথক পৃথকভাবে অন্য কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা সন্তান ও কাজের লোকদের কাছে তথ্য জানার চেষ্টা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজ কর্মকর্তা বলেন, ‘মিতা নূরের মা মরিয়ম সরকার নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। পত্রিকায় এ ধরনের খবর ছাপা হয়েছে। এসব বিষয়ে মরিয়ম সরকারের সঙ্গে তারা কথা বলেন। অভিনেত্রী মিতা নূরের বাবা ও মামলার বাদী ফজলুর রহমানের সঙ্গেও পুলিশ কথা বলেছে।’ পুলিশের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির বলেন, ‘আমাদের জিজ্ঞাসাবাদের মূল লক্ষ্য ছিল মিতা নূরকে কেউ আত্মহত্যায় প্ররোচিত করেছিল কি-না তা খুঁজে বের করা। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি। তারা সাফ বলে দিয়েছে ‘যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এখন আর এ নিয়ে বেশি দূর এগুতে চাই না’। উপ-কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ আইনের বাইরে নয়। কেউ অভিযোগ না করলে জোর করে কোনো কিছু করা যায় না। আর আত্মহত্যার প্ররোচনার বিষয়টি আসতে হয় পরিবার থেকে। কিন্তু এ ধরনের কোনো তথ্য মেলেনি জিজ্ঞাসাবাদে। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে আত্মহত্যার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও ভিসেরা প্রতিবেদনের অপেক্ষা করা হচ্ছে। ভিসেরা প্রতিবেদন আসতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।