দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাতের আকাশে ছোট্ট আলোর ফানুস দেখে কার না ভাল লাগে। তেপান্তরের মাঠের দিকে মনে হয় হাজার হাজার আলোর বাহন চলছে। কিন্তু এই ফানুসের ছোট্ট আগুনের শিখাও মারাত্মক অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত করে। ফানুসকে পশ্চিম মিডল্যান্ডের একটি রিসাইকেলিং প্লান্টে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের জন্য দায়ী করা হয়। অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি ছাড়াও ফানুস আরও নানারকম সমস্যা তৈরি করে।
কাগজের ফানুস বাশ বা তারের ফ্রেমের ভিতরে মোমবাতি বা মোমের আবরণের জ্বালানির সমন্বয়ে তৈরি। আগুন জ্বালালে ফানুস উপরে উঠে উড়তে শুরু করে আর মোমের জ্বালানি শেষ হলেই এটি নীচে নেমে আসে। এটি প্রায় ১০০০ মিটার উচ্চতায় উঠতে এবং বাতাসের সাহায্যে কয়েক মাইল উড়তে সক্ষম। বিয়ে, হ্যালোউন উৎসবে, মিউজিক ফেস্টিভাল এমনকি মানুষের শেষ বিদায়ের অনুষ্ঠানেও প্রতিনিয়ত ফানুস উড়ানো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রতি বছর ২০০,০০০ চাইনিজ ফানুস যুক্তরাজ্যে বিক্রি হয়। ফানুস দ্বারা সংঘটিত সমস্যার কারণে এটি বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
পরিবেশের জন্য বিপদজ্জনক এবং অগ্নি সংযোগের ঝুঁকির কারণে গ্লাসটনবুরি ফেস্টিভালের সংগঠকরা চাইনিজ ফানুস নিষিদ্ধ করেছেন। পশু পড়ে যাওয়া ফানুসের অংশ খেতে পারে বলে দাবি করে কৃষকরা এবং পশু চ্যারিটিজ ফানুস বিক্রি বন্ধের জন্য চাপ দেন। ২০১০ সালে একটি গরু মাঠে পড়ে থাকা ফানুসের তারের ফ্রেম খেয়ে মারা যায়। তার বাদ দিয়ে বাঁশের তৈরি কাঠামোর ফানুস পরিবেশ বান্ধব বলে দাবি করে যুক্তরাজ্যের অনেক ফানুস তৈরির ফার্ম। কিন্তু আরএসপিসিএ তবুও বিপদজ্জনক বলে দাবি করে। পরিবেশ, খাদ্য এবং রুরাল অ্যাফেয়্যারস মন্ত্রণালয় (ডিইএফআরএ) মৃত্যু ঝুকি ও পশু সম্পদ আক্রান্তের পরিমান কম বলে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
কোস্টগার্ড এবং RNLI (Royal National Lifeboat Institution) ফানুস সমুদ্রে ভুল সর্তক বার্তা পাঠায় বলে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। RNLI জানিয়েছে ২০১০ সালে ফানুসের কারণে ভুল করে সাহায্যের জন্য লাইফ বোর্ট পাঠানোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সমুদ্রতটে চালানো সমীক্ষায় রাবার, কাগজ ও ধাতুর অংশবিশেষ পড়ে থাকার বৃদ্ধিহার দেখে গত বছর ম্যারিন কনজারভেশন সোসাইটিও ফানুস নিষিদ্ধের দাবি করেছে। চ্যারিটি সংস্থাসমূহ সামুদ্রিক জীব ও অন্যান্য জিনিসের বিপদের জন্য যারা ফানুস ছাড়বে তাদের ২৫০০ পাউন্ড করে জরিমানার দাবি করেছে।
বেসামরিক বিমান কর্তপক্ষ জানায় ফানুস বিমান ইঞ্জিনের জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জনক। মাটিতে পড়ে থাকা ভাঙা ফানুসের কাঠামো বিমানের ইঞ্জিন, টায়ার এবং ফাসলেজ এর জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে দাবি করে তারা। ডজন খানেক বিমানের ফ্লাইট দেরী হওয়ার কারণে চীনের জনপ্রিয় পর্যটনস্থল সানইয়াতে ফানুস নিষিদ্ধ করা হয়। গত বছর ডনিগাল বেসামরিক বিমান কর্তপক্ষ বিমানের হাজার হাজার গ্যালন জ্বালানির কনটেইনার পার্কের সামনে একটি ফানুস পড়ার পর সর্তক করে দিয়েছে।
২০১১ সালের এক জাতীয় সমীক্ষায় দেখা যায় তিন ভাগ ব্রিটেনের দমকল কর্মীরা জানিয়েছে তারা ফানুস দ্বারা সংঘটিত আগুন নির্বাপনের জন্য ইমারজেন্সী সাহায্যের জন্য সবচেয়ে বেশি ডাক পেয়েছেন। ফানুসের শিখায় মূলত বাগানে এবং বাড়ির ছাদে আগুন লাগার কারণে ক্ষতি হয়। কিন্তু দমকল কর্মীরা জানিয়েছে ফানুসের আগুন দ্রুত নিভে যাওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেতে কর্মীদের ভুল সর্তক সংকেতের অভিজ্ঞতা হয়েছে। গরমের সময় শুষ্কতার কারণে ফানুস সবচেয়ে বিপদজ্জনক। অনেক স্থানীয় দমকল কর্তৃপক্ষ ফানুস নিষিদ্ধ করেছে।
UFO (unidentified flying object) আকাশে উড়ন্ত অদ্ভূত আলো বা বস্তুর উপর নজর রাখা ফানুসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির সাথে অভিনবভাবে বেড়েছে। সম্প্রতি জাতীয় আর্কাইভের ফাইলে দেখা যায় মিনিস্টি অব ডিফেন্স UFO ডেস্ক তিনবার ২০০৯ সালের রিপোর্ট মুছা হয়। ২০০৬ সালে যুক্তরাজ্যের অন্যতম দৈনিকসমূহ ফানুস ও UFO বিভ্রাট এর শিরোনাম করে। ছোট্ট স্কটিশ শহরের বাসিন্দারা বিয়ের উৎসবে ফানুসকে আকাশের অদ্ভুত আলো বা সসার মনে করে পুলিশে খবর দেয়।
তথ্যসূত্র: বিবিসি