দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দক্ষিণ কোরিয়ার হোটেল রুমে অতিথিদের ব্যক্তিগত মুহূর্ত গোপনে ধারণ করা, তারপর সেই ফুটেজগুলো মোটা অংকের বিনিময়ে একটি ওয়েবসাইটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে।
গোপন ক্যামেরায় পর্নোগ্রাফির শিকার হয়েছেন হোটেলে থাকতে আসা অন্তত এক হাজার ৬০০ অতিথি! গোপনে এই সব ভিডিও ধারণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এই পর্যন্ত ৪জনকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ।
খুব ছোট আকারের বা মিনি ক্যামেরাগুলো হোটেল কক্ষের টেলিভিশন, চুল শুকানোর হেয়ার ড্রায়ারের হাতল ও প্লাগের সকেটে অভিনব কায়দায় বসানো হতো যাতে করে তা খালি চোখে বোঝা না যায়।
অতিথিদের অজান্তে ধারণ করা এইসব ভিডিও হতে দুষ্কৃতিকারীরা ৬ হাজার ২০০ ডলারের মতো আয় করতো বলেও জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃত ওই চার সন্দেহভাজন আদালতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের প্রত্যেককে ১০ বছর পর্যন্ত জেল, সঙ্গে হাজার হাজার ডলার জরিমানাও করা হতে পারে।
সাম্প্রতিক সময় দক্ষিণ কোরিয়ায় যৌনমিলন এবং নগ্ন দৃশ্য গোপনে ক্যামেরায় ধারণের ঘটনা মহামারি আকারে ছড়িয়ে গেছে। এইসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে দেশটির সাধারণ মানুষ।
সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে কোরীয় পুলিশ বলেছে, দুষ্কৃতিকারীরা গত বছরের আগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার ১০টি শহরের অন্তত ৩০টি হোটেলের বিভিন্ন রুমে এই মিনি ক্যামেরাগুলো স্থাপন করেছিল বলে তারা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছেন।
ওই গোপন ক্যামেরাগুলো এক মিলিমিটার লেন্স ক্যামেরা হওয়ায় অতিথিদের কেওই বুঝতে পারেননি যে তারা নিজেদের অজান্তেই শিকার হচ্ছেন পর্নোগ্রাফির মতো একটি জঘন্যতম কাজে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত নভেম্বর মাসে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা হয় যেখানে সেইসব গোপনে ধারণকৃত ফুটেজগুলো ছাড়া হতো।
ভিডিওগুলোর ইউজাররা প্রথম ৩০ সেকেন্ড ফ্রিতে দেখার সুযোগ পান। তারপরের পুরো দৃশ্য দেখতে তাদের অর্থ পরিশোধ করতে হতো। মূলত এভাবেই চলতো এইসব অবৈধ ব্যবসা।
দুষ্কৃতিকারীরা এই পর্যন্ত ৮০০ এর বেশি ভিডিও ওই ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ। তাছাড়া বিদেশে ওয়েবসাইট সার্ভার পরিচালনার আইনও তারা লঙ্ঘন করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ বলেছে, এই মাসেই তারা ওই ওয়েবসাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে। তার আগ পর্যন্ত ওই ব্যক্তিরা ৯৭ জন পেয়িং মেম্বারদের হতে নিয়মিতভাবে আয় করতো।
মিডিয়া ক্যাপশন লুকানো ও আপ স্কার্ট ক্যামেরা ব্যবহার দক্ষিণ কোরিয়া একটি বিশাল সমস্যা। সিউল মেট্রোপলিটন পুলিশ এজেন্সিটির এক মুখপাত্র কোরিয়ার সংবাদ মাধ্যম হেরাল্ডকে বলেন, ‘পুলিশ সংস্থা কঠোরভাবে সেইসঙ্গে কৌশলী হয়ে অপরাধীদের হতে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে। মূলত যারা অবৈধভাবে ভিডিওগুলো পোস্ট ও শেয়ার করেছে। কারণ এই বিষয়টি গুরুতরভাবে মানুষের মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’
দক্ষিণ কোরিয়াতে পর্নোগ্রাফি তৈরি এবং প্রচার করা সম্পূর্ণ অবৈধ কাজ। তা সত্ত্বেও দেশটির দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধার কারণে গোপনে চিত্রগ্রহণের হার ক্রমেই বেড়েই যাচ্ছে বলে মনে করা হয়।
অনেক ভিডিও পোশাক পরিবর্তন কক্ষে এমনকি টয়লেটেও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা হয়ে থাকে বলে জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।
আবার অনেক ক্ষেত্রেই প্রাক্তন প্রেমিক-প্রেমিকা প্রতিশোধের বশবর্তী হয়েও এই সব ভিডিও ওয়েবসাইটে ছেড়ে দেয়।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০১৭ সালে এই ধরনের গোপন ভিডিও ধারণের ৬ হাজার অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়ে। ২০১২ সালে এই ধরনের অভিযোগের সংখ্যা ছিল মাত্র আড়াই হাজারের মতো।
২০১৭ সালে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গোপন ক্যামেরা সংশ্লিষ্ট অপরাধের জেরে সাড়ে ৫ হাজার সন্দেহভাজনকে আটকও করে। তবে এর মধ্যে দুই শতাংশেরও কম মানুষের কারাদণ্ড নিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে। বাকিরা কোনো না কোনো আইনী ফাঁকে ছাড়া পেয়েছেন।
এভাবেই একের পর এক গোপন ভিডিও ধারণ ও তা ফাঁস হওয়ার ঘটনা পুরো দক্ষিণ কোরিয়া জুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গত বছর দেশটির রাজধানী সিউল শহরে কয়েক দফা বিক্ষোভ হয়। আন্দোলনকারীরা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত সবার কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন।