দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কুকুরের প্রভুভক্তের কথা অবশ্য নতুন কিছু নয়। তবে এবার কুকুরের প্রভুভক্তের কাহিনী সবগুলোতেই হার মানিয়েছে। এবার পুরো পরিবারকে বাঁচালো এক কুকুর!
প্রভুভক্ত প্রাণী হিসেবে মনিবের প্রতি কুকুরের ভালোবাসা নানা সময় মানুষের বিবেককে নাড়া দেয়। কখনও মনিবের প্রতি নিদারুণ ভালোবাসা, কখনও আবার মনিবকে রক্ষা, আবার কখনও মনিবের জন্য অপেক্ষা করতে করতে জীবনকে উৎসর্গ করা। এমন অনেক কাহিনী সিনেমাতেও আমরা দেখি। তবে বাস্তবেও মাঝে মধ্যে ঘটে এমন কিছু ঘটনা। আজকের এই ঘটনাটিও তেমনই একটি ঘটনা।
ব্যতিক্রমি ঘটনার কারণ হলো এবার শুধু মনিবকে নয়, মনিবের পুরো পরিবারকে রক্ষা করে হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার এক ঘটনার জম্ম দিলো প্রভুভক্ত এই প্রাণীটি। কুকুরের কারণেই নিশ্চিত মৃত্যুর হাত হতে রক্ষা পেয়ে যায় পরিবারের সবাই।
সম্প্রতি মার্কিন এক নাগরিকের বাড়িতে আগুন লাগে। ওই ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনায় টুইট করেন বাড়ির মালিক নিজেই। তিনি লেখেন যে, গত শুক্রবার রাতে তার স্ত্রী ও সন্তানরা বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছিল, মধ্যরাতে তার কুকুরটি খুব জোরে ডাকাডাকি করতে শুরু করে। কেনো এত জোরে জোরে চিৎকার করছে তা দেখতে ওই ব্যক্তি তার শোয়ার ঘরে প্রবেশ করেন। তিনি খুব ভয়ে ভয়ে বারান্দায় যান। এরপর ঘরের এক কোন থেকে আড়ালে তিনি কমলা রঙের উজ্জ্বল কিছু জ্বলজ্বল ও শব্দ করছিল- এমন কিছু তিনি দেখতে পান।
আমেরিকান নাগরিক ওলাইসেস এস কুকম্যান আগুন লাগার ওই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লেখা তার টুইট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। এই ঘটনায় কুকুরটিকে ‘গোল্ডেন রিট্রাইভার’ অ্যাখা দিয়ে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন সবাই।
টুইটারে ওই ব্যক্তি বলেন যে, ‘সেদিন রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর মধ্যরাতে শোয়ার কক্ষে হাঙ্ক (কুকুর) প্রচণ্ড আকারে জোরে ডাকাডাকি করছিল। তখন আমার স্ত্রী ও বাচ্চারা ঘুমিয়েছিল। আমি তখন অন্য কক্ষে মুভি দেখা শেষ করেছিলাম মাত্র। তবে হাঙ্ক কোনোভাবেই তার ডাকাডাকি থামাচ্ছিল না। এরপর আমি বিছানা হতে নেমে শোয়ার কক্ষে গেলাম এবং তাকে (হাঙ্ক) থামানোর চেষ্টাও করলাম। এরপর যতোদ্রুত সম্ভব আমি বাড়ির কর্ণারে গেলাম। কামরায় প্রবেশ করে সেখান থেকে উজ্বল কমলা রঙের কিছু একটা দেখতে পাই।’
টুইটারে ঘটনাটি বর্ণনা করার সময় গর্বিত ওই মনিব কুকুরের ৬ বছরের আগের একটি ছবি শেয়ার করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমি হাঙ্ক সম্পর্কে আপনাদের একটি গল্প বলতে চাই। আমি জানি আপনারা এটিকে একটা খুবই ভালো ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করবেন।’
ডেইলি মেইল-এর এক প্রতিবেদনে মার্কিন নাগরিক আরও বলেন, সেখানে বড় ধরনের কোনো একটি কাঠ এবং পেইন্ট জাতীয় কিছু পুঁড়ছিল। ঈশ্বর ভালো জানেন যে, সেখানে আসলে কী কী ঘটেছিল। উজ্জ্বল কমলা রঙের ওই আলো থেকে কিছুক্ষণ পর দেখি আগুনের ধোয়া জাতীয় কিছু খুব দ্রুত চারিদিকে যেনো ছড়িয়ে পড়ছে।’
এই ব্যক্তি বলেন, ‘এই ঘটনার কিছুক্ষণ পর আমরা প্রত্যেকে হাঙ্কের চিৎকারের ঘটনায় বিষয়টি জানতে পারি ও আমি ও আমার পরিবার বাড়িতে কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করি। পাশের প্রতিবেশীরা আগুনের বিষয়টি দেখতে পেয়ে টর্চ নিয়ে বেরিয়ে আসেন। এরপর আমি এবং আমার পরিবার ও কুকুর নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে আসি। আমার স্ত্রী গতকাল আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন হাঙ্ক ৬ বছর আগে তার নতুন জুতার একটি স্লিপার খেয়ে ফেলেন, তখন থেকেই সে অপরাধ বিষয়ক কোনো কিছু হলে বুঝতে পারে।’
তারপর তিনি আবারও আগুনের ওই ঘটনাটির বর্ণনা করেন, তিনি বলতে থাকেন যে, কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কিভাবে কুকুরটি তাদেরকে সেদিন রক্ষা করেছিল।
এই ঘটনাটি হয়তো অন্যভাবেও শেষ হতে পারতো। কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়ির চারপাশে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ও আগুন নির্বাপনকারীরা সেখানে এসে আগুন দেখতে পায়। তারা সেখানে এসে আমাদের প্রত্যেককে রক্ষা করে, তখন আমরা বাড়িতেই ছিলাম।
গর্বিত ওই বাবা এই লেখার শেষে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লেখেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা সত্যিই বিস্ময়কর। তারা বাতাসের বেগে আমাদের বাড়িতে এসে পুরো বিষয়টি নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে নিয়েছিলেন। যেটা সত্যি অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতারও প্রমাণ দেয়।’
তবে তিনি এ ঘটনায় পরিবারের জীবন রক্ষায় পুরো ক্রেডিট দিতে চান তার পোষ্য কুকুর হাঙ্ককেই। গর্বিত ওই কুকুরের মালিক আরও লেখেন, ‘আজকে আমি তাদের সঙ্গে যারা এই ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আমি এই ঘটনাকে কখনই ভুলবো না, কখনই না।’