দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গত মাসের মাঝামাঝি নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ এবং লিনউড মসজিদে এক শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীর গুলিতে নিহত হন ৫০ জন মানুষ। আহত হন ৪২ জন। এরপর ফেসবুক কর্তৃপক্ষ শ্বেতাঙ্গদের প্রশংসা করে কোনো পোস্ট দেওয়া যাবে না বলে ঘোষণা করেছে।
সেদিন মসজিদে চালানো তাণ্ডব ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করে হামলাকারী। যদিও সে সময় তাৎক্ষণিকভাবে লক্ষ লক্ষ ভিডিও ডিলিট করেছে বলে দাবি ফেসবুকের।
এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে ওঠা নিন্দা ও প্রতিবাদের মুখে এবার ফেসবুক জানিয়েছে যে, আগামী সপ্তাহ হতে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদের `স্তুতি বা প্রশংসা, সমর্থন এবং প্রতিনিধিত্বমূলক` কোনো ধরণের পোস্টই ফেসবুকে শেয়ার করা যাবে না।
গত সপ্তাহে এক ব্লগ পোস্ট দিয়ে ফেসবুক জানিয়েছে যে, `সুশীল সমাজ ও একাডেমিকদের সঙ্গে ৩ মাস আলোচনার পর সংস্থাটি বুঝতে পেরেছে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদকে শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ ও সংগঠিত `হেট ক্রাইমে`র হতে আলাদা করা যাবে না।
যেকোন জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি চিহ্নিত ও ব্লক করার ক্ষেত্রে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কর্তাব্যক্তিরা।
এই ধরণের জিনিসপত্র ফেসবুকে যারা সার্চ করবেন তাদের সকল তথ্য সরাসরি উগ্র জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে কাজ করে এমন সংস্থাগুলোর কাছে পাঠানো হবে বলেও হুঁশিয়ারী করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হলো আগে কেনো অনুমতি দেওয়া হতো?
ফেসবুক শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের কিছু কর্মকাণ্ড, যেসব জিনিসপত্রকে তারা কখনও বর্ণবাদী বলে মনে করেনি, সেগুলো চালানোর অনুমতি দিয়েছিল। তার মধ্যে শ্বেতাঙ্গদের জন্য আলাদা জাতিরাষ্ট্রের দাবি সম্বলিত প্রচারণাও ছিল সে কারণে। এই বিষয়ে ফেসবুক একটি ব্যাখ্যাও দিয়েছে।
এটি আমেরিকানদের নিজেদের নিয়ে গর্ব ও বাস্কদের বিচ্ছিন্নতাবাদের মতোই ব্যাপার, যাকে আমরা সেখানকার মানুষের নিজেদের পরিচয়ের জরুরি অংশ বলেই মনে করি।
যে কারণে প্রতিজন ব্যবহারকারীর নিজের পরিচয়কে সম্মান জানানোর জন্য সেগুলো বন্ধ করা হতো না বলেও জানিয়েছে ফেসবুক।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ঘটনার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে জঙ্গি মতাদর্শ প্রচারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে যাতে কোনোভাবেই ব্যবহার না করা হয়, সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ব নেতারা।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আর্ডান বলেছেন যে, এক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছিল `প্রকাশক, শুধু পোস্টম্যান বা বার্তাবাহক নয়`।
ইতিপূর্বে ফেসবুক জানিয়েছিল, মসজিদে হামলার ঘটনার ভিডিওটি মুছে ফেলার আগেই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ লাখ ভিডিও ব্লক করেছে এবং ৩ লক্ষ ভিডিও ডিলিটও করেছে। তবে তার আগেই অন্য যেকোন ভিডিওর চেয়ে চার হাজার গুণ বেশি মানুষ সেটি দেখে ফেলেছে।
ফরাসি মুসলমানদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি গ্রুপ ওই ফুটেজ ব্যবহারের জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার কারণে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করছে।
ফেসবুকের সঙ্গে এখন অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানও এমন সহিংস জিনিস সম্প্রচার বন্ধের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে চলেছে বলে জানিয়েছ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি।