দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গতকাল থেকে ভারতে শুরু হয়েছে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। ৭ দফায় ভোট নেওয়ার পর ফলাফল ঘোষণা করা হবে আগামী ২৩ মে। নির্বাচন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মন্তব্য করেছেন আবারও মোদীকে ক্ষমতায় দেখতে চান!
প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন রয়েছে পাকিস্তানও। বিশেষ করে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় ভারতের রাজনীতিও পাকিস্তানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দেশটির ক্ষমতায় আসা না আসাও বিষয়টিও পাকিস্তানের অনেক কিছু নির্ভর করে।
তাই ইতিমধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, তিনি চান, নির্বাচনে জিতে আবারও ক্ষমতায় আসুক নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি। এর কারণ হিসেবে ইমরান খান বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী জয়ী হয়ে আবারও প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসলে তবেই কাশ্মির নিয়ে একটা আলোচনার পথে আসা সম্ভব হবে। ইসলামাবাদে বিদেশী একদল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন মন্তব্য করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
ইমরান খানের ধারণা মতে, বিজেপি না এসে যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় আসে তাহলে কাশ্মির সমস্যার কোনো সমাধান হবেই না, বরং বিষয়টি আরও স্পর্শকাতরও হয়ে উঠতে পারে। ইমরান খান মনে করেন, আফগানিস্তান, ভারত, ইরান -এই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান পাকিস্তান ও পাকিস্তানের নাগরিকদের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি বিষয়।
তবে ইমরান খান এই বিষয়টিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, ভারতে যা হচ্ছে তার কোনো সমর্থন জানাচ্ছেন না তিনি। তিনি বলেন, কাশ্মিরসহ পুরো ভারতের মুসলমানরা মোদির শাসনামলে নির্যাতিত-নিষ্পেষিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কখনই ভাবি না যে, ভারতে এখন যা হচ্ছে, যা হতে আমরা চোখে দেখছি, তা সম্পূর্ণ সঠিক। কেবলমাত্র মুসলমান হওয়ার কারণে ভারতজুড়ে মুসলমানরা আক্রান্ত হচ্ছে।
ইমরান খান বলেন, ভারতের মোদিও নির্বাচনে জয়ী হতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পথই ধরেছেন। নেতানিয়াহুর মতো তিনিও ভয় এবং জাতীয়তাবাদের জুজু দেখিয়েই নির্বাচনে জয়ী হতে চান।
কাশ্মিরের বিশেষ অধিকার বাতিলের বিষয়টি সম্পর্কে ইমরান খান বলেন, এই অধিকার বাতিলের কারণে বাইরের লোকের এখানে সম্পত্তি কেনার ব্যাপারে যে বাধা ছিল সেটি উঠে যাবে। এটি কাশ্মিরের জনগণের জন্য একটি গভীর উদ্বেগেরও বিষয়।
এই সময় ভারতের প্রতি শান্তির বার্তা দিয়ে ইমরান খান বলেন, পাকিস্তান ভিত্তিক সমস্ত সশস্ত্র সংগঠনকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে ইসলামাবাদ সব সময় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সরকারের এই কাজে পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীরও পূর্ণ সমর্থন রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তবে ইমরান খান বলেন, কাশ্মির ইস্যুটি পুরোপুরিভাবেই একটি রাজনৈতিক ইস্যু। এর কোনো সামরিক সমাধানই নেই। কারণ হলো এক্ষেত্রে কাশ্মিরিরা উভয় দিক থেকেই সব সময় সমস্যার মুখে পড়ে।
উল্লেখ্য, গত ফেব্রুয়ারিতে ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলা হওয়ার পর হতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক একেবারে তলানিতে পৌঁছে। ওই হামলায় সিআরপিএফের ৪৪ সদস্য নিহত হয়। এরপর ভারত ও পাকিস্তানের বালাকোটে হামলা চালায়। পাকিস্তানও এর জবাব দিয়েছে। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করলেও ইসলামাবাদ তা পুরোপুরিভাবেই অস্বীকার করে। যে কারণে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়তে থাকে। এই অবস্থায় পাকিস্তানে গ্রেফতারকৃত ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে পাকিস্তান কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই মুক্তি দিলে দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধাবস্থা কিছুটা হলেও স্থিমিত হয়। এখন সামনে উঠে এসেছে নির্বাচন। এই নির্বাচনে ভারতের সরকার পরিবর্তন হলে কি হতে পারে বা বর্তমান বিজেপিই যদি আবার ক্ষমতায় আসে তাহলে কি হতে পারে সেই বিষয়গুলো নিয়েই মূলত ইমরানকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো। যার উত্তর দিতে গিয়ে তিনি অনেক কথায় বলেছেন। তবে সব কথার এক কথা হলো ইমরান খান আবারও বিজেপি তথা মোদি সরকারকেই ক্ষমতায় দেখতে চান।