দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নিজেদের জন্য নিজেরাই শেষ পর্যন্ত কারাগার তৈরি করছেন আসামে কথিত অবৈধ অভিবাসীরা। এনআরসি থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের একটি বড় অংশই এই কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
আশ্চর্যের বিষয় হলো নিজেদের জন্যই তারা আটক কেন্দ্র বানাচ্ছেন। তবুও তাদের কোনো পথ নেই। জীবিকার স্বার্থে এই কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন আসামের বাসিন্দারা। বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই কারাগারের আশপাশে স্কুল, হাসপাতাল, বিনোদনের স্থান, নিরাপত্তারক্ষীদের বাসভবনের পাশাপাশি উঁচু সীমানা দেওয়াল ও ওয়াচ টাওয়ারও থাকবে। ক্যাম্পগুলো নির্মাণের সঙ্গে জড়িত শ্রমিক এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে কথা বলে ও ক্যাম্পগুলোর লেআউট পর্যবেক্ষণ করে এসব তথ্য জানতে সক্ষম হয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ক্যাম্প নির্মাণে জড়িত শ্রমিকদের অনেকেই জানিয়েছেন, আসামে অবৈধ অধিবাসী চিহ্নিত করতে গত সপ্তাহে যে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়, তার মধ্যে তাদের নাম নেই। তারা জানেন, ডিটেনশন ক্যাম্পগুলোতে শেষ পর্যন্ত হয়তো তাদেরও স্থান হতে পারে। তবুও কাজ না করে তাদের কোনো উপায় নেই।
শেফালি হাজং নামে একজন শ্রমিক জানান, কারাগারের খুব কাছাকাছি একটি গ্রামে তার বাড়ি। হাড্ডি-চর্মসার এই আদিবাসী নারীদেরও নাম ওঠেনি চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জিতে। আরও প্রায় ২০ লাখ মানুষের মতোই তাকেও এখন জন্মসনদ বা জমির মালিকানা সনদের মতো নাগরিকত্বের প্রমাণ স্বরূপ কাগজপত্র দাখিল করতে হবে; ব্যর্থ হলে নিজের হাতে বানানো ক্যাম্পগুলোর মধ্যে কোনও একটি ক্যাম্পে বন্দি হতে পারেন তিনিও!
দুশ্চিন্তাগ্রস্থ শেফালি হাজং আরও বলেন, ‘আমাকে তো পেট চালাতে হবে’। অন্যান্য শ্রমিকদের মতো তিনিও ক্যাম্প বানানোর কাজে প্রতিদিন প্রায় চার ডলারের (তিন শত রুপির মতো) কাছাকাছি আয় করেন; তুলনামূলক দরিদ্র এলাকা হওয়ায় এ আয়কেই যথেষ্ট মনে করছেন এখানকার অধিকাংশ শ্রমিক।
কিন্তু শেফালি তার সঠিক জন্মসাল বলতে পারেন না। তার ধারণা তার বয়স ২৬ এর কাছাকাছি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত নাগরিকপঞ্জিতে কেনো নাম নেই তাও বলতে পারছেন না শেফালি। শেফালির মা মালতি হাজং বলেছেন, “আমাদের কোনো জন্মসনদই নেই”। তিনিও ক্যাম্পটির নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
উল্লেখ্য যে, গত ৩১ আগস্ট আসামের চূড়ান্ত নাগরিক তালিকা (এনআরসি) প্রকাশ করা হয়। সেখানে ৩ কোটি ৩০ লাখ নাগরিকের মধ্যে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন মানুষ। বাদ পড়া বাসিন্দাদের ১২০ দিনের মধ্যে আপিলের সুযোগ রয়েছে। তবে এই আপিলে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে না পারলে তারা সেখানকার অবৈধ অভিবাসী বলেই বিবেচিত হবেন। আর তখন তাদের প্রাথমিক স্থান হবে এই কারাগারটিতে।