দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের শরীরের সবথেকে দরকারী ও প্রয়োজনীয় অঙ্গ হল চোখ। যে ব্যক্তির চোখ নেই সেজন্য দুনিয়ার আলো থেকে বঞ্চিত। বঞ্চিত দুনিয়ার সকল রং-রূপ থেকে। চোখ দ্বারা আমরা আমাদের আশেপাশের সকল জিনিসপত্র দেখি আমাদের পৃথিবী ও ভুবনের হাজার রং, রূপ, লাবণ্যকে উপভগ করে থাকি আমাদের এই মহা মূল্যবান চোখ দ্বারাই।
আমাদের এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গটির সঠিক যত্নের কিছু নিয়ম আছে যা সঠিক ভাবে পালন করতে হবে এবং এটি কে সঠিক পর্যবেক্ষণের মাঝে রাখতে হবে। সঠিকভাবে যত্ন ব্যতীত এবং সচেতনতা ছাড়া আমরা অচিরেই হারাতে পারি আমাদের চোখ এবং আমাদের চোখ আক্রান্ত হতে পারে নানাবিধ সমস্যায়। আমাদের অক্ষিগোলকের ভিতরে অবস্থিত কর্নিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ আমাদের চোখের। আমাদের চোখের কর্নিয়া নানাবিধ কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে এবং খুব সহজেই সমস্যা দেখা দিতে পারে যদি সঠিক ভাবে যত্ন না করা হয়। আমাদের চোখ এতটাই সক্রিয় বা সংবেদনশীল যে সামান্য খোঁচার কারণে বা সামান্য নখের আচরের কারণে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আমাদের আমাদের এই অতীব সংবেদনশীল অঙ্গটি সামান্য নখের আচর বা আমাদের নখ কাটার সময় অবশিষ্ট ছিটকে লাগলে চোখের কর্নিয়া আঘাত প্রাপ্ত হতে পারে। ঠিক একইভাবে কলম বা পেন্সিলের খোচা অথবা কারো দ্বারা কোন প্রকার আঘাতের ফলে আমাদের চোখের মূল্যবান কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। কর্ম ক্ষেত্রে নানা ধরণের পদার্থ চোখে ঝরে ছিটকে লাগলে আমাদের কর্নিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে যেমন ঝালাইয়ের কাজের সময়ে যদি কোন ধাতব বস্তু আমাদের চোখের কর্নিয়াতে আঘাত করে তাহলে এটি খুবই ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। এই আঘাতের ফলে আমরা খুব সহজে আমাদের চোখের আলো হারাতে পারি যার ফলে আমাদের স্থায়ীভাবে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। আমাদের অনেকেরই চোখে হাত দিয়ে চুলকানোর অভ্যাস রয়েছে এটি একটি কর্নিয়াতে আঘাত প্রাপ্ত কাজের মধ্যে অন্যতম। আমরা যদি খুব জোরে আমাদের চোখ চুলকাই তাহলে আমাদের কর্নিয়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যদি আমাদের চোখে ক্ষার বা এসিড জাতীয় কোন রাসায়নিক পদার্থ পড়ে তাহলে আমাদের চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমাদের চোখে ক্ষার বা এসিড পদার্থ যাওয়ার ফলে আমাদের কর্নিয়া স্থায়ীভাবে তার কার্যক্ষমতা হারাতে পারে। কৃষি কাজের সময় ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয় যার মধ্যে কাঁচি অন্যতম। নানাবিধ জরিপে দেখা গেছে যে কৃষি কাজে ঘাস কাটার সময় অধিকাংশ মানুষই ঝুঁকিতে থাকেন তাদের চোখে আঘাতের ক্ষেত্রে। কর্নিয়া আঘাত প্রাপ্ত হলে আমরা চোখ দিয়ে আলোতে তাকাতে পারে না এবং ব্যথা অনুভব হয় থাকে যার ফলে চোখে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। কর্নিয়া আঘাতপ্রাপ্ত হলে চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়তে থাকে এবং আমাদের চোখ অতিমাত্রায় লাল হয়ে যায়। এমন সময় মনে হয় আমাদের চোখের মধ্যে কিছু একটা রয়ে গেছে যার ফলে আমাদের চোখ প্রচুর পরিমাণে চুলকায় এবং বার বার পলক ফেলতে হয়। এমন অবস্থায় আমাদের চোখ বুজতে কষ্ট পেতে হয়। আমার অনেকই মাঝেমধ্যে ভাবি আমাদের চোখের মধ্যে কোন ধরনের ধূলিকণা গিয়েছে যার ফলে আমদের চোখের পলক ফেলতে কষ্ট পেতে কষ্ট হচ্ছে আসলে সেটি হবে আমাদের কর্নিয়া আক্রান্ত হওয়ার একটি লক্ষণ। কর্নিয়া আঘাতপ্রাপ্ত হওয়া মাঝে মাঝে এমন একটি পর্যায়ে চলে যায় যে আমরা আমাদের চোখ সহজে বুজতেই পারিনা।
কর্নিয়া আঘাত প্রাপ্ত হওয়ার পর আমাদের প্রথম কাজ হল চোখে অতীব মাত্রায় পানি দ্বারা আমাদের চোখকে ভালভাবে ধৌত করা। প্রাথমিক পর্যায়ে চোখে পানি প্রদান করলে চোখের জালাপড়া অতীব মাত্রা হওয়া থেকে কমে যায়। রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা আঘাত এর ক্ষেত্রে এটি খুবই উপকারী একটি কাজ। যদি কোন পদার্থ চোখে আঘাত করে বা থেকে যায় তাহলে তা পানি দ্বারা বের করে নিয়ে আসা উত্তম। এবং অবশ্যই সকল ক্ষেত্রে চক্ষু বিশেষজ্ঞের কাছে যত দ্রুত সম্ভব যোগাযোগ করতে হবে। চোখের বিশ্রামের জন্য চোখে ব্যান্ডেজ এর সাহায্য নিতে হবে এবং অ্যান্টিবায়োটিক মলম দিয়ে প্যাড ব্যবহার করতে হবে। আমার অনেকে চোখে আঘাত লাগলে নিজে থেকে ওষুধ লাগানোর চেষ্টা করে যেটি সম্পূর্ণ একটি ভুল কাজ এতে আমাদের চোখ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় থাকে। চোখে গভীর কোনো আঘাত লাগলে তা যদি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা না করা হয় তাহলে দৃষ্টিশক্তি হারানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। অতএব চোখের কর্নিয়া এবং সম্পূর্ণ চোখের যত্ন রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।