দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পৃথিবীতে প্রাণীকূলের নানা রকম প্রজাতি রয়েছে। যা দেখতে ও আচার আচরণ একেক জনের একেক রকম হয়ে থাকে। তেমনি একটি বহুরূপী প্রাণী হলো গিরগিটি।
কেনো গিরগিটিকে বহুরূপী বলা হচ্ছে? কারণ হলো এই গিরগিটি ঘনঘন রঙ পাল্টায়! নানা রঙের কারণে নানা বর্ণ ধারণ করে এর চেহারাতে। আর তাই এই গিরগিটিকে বলা হয়ে থাকে বহুরূপী।
এই গিরগিটি বেশিরভাগ সময় কাটায় একটি নির্দিষ্ট স্থানে একধারে বসে থেকে। ওদেরকে দেখে মনে হবে হয়তো মরে গেছে। চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে থাকে। এই সরীসৃপ তান্ডহীন এক প্রতীক্ষা, বিশ্ব একে কি দেয় তা দেখা ও চারদিকে এর চোখ খোলা রাখাই পছন্দ করে। ক্ষুদ্রাকৃতির এই সরীসৃপের রয়েছে যথার্থই বিশেষ ধরনের চোখ। যে কারণে এটা একই সময়ে দুই পৃথক অবস্থানে দৃষ্টিপাত করতে সক্ষম।
এরা আকারে বড়ই পরস্পর থেকে স্বতন্ত্র, চঞ্চল দু’টি চোখ খাবারের সন্ধানে দ্রুত এদিক ওদিক দৃষ্টি ফেলতে থাকে। কখনও এমন হয়, গিরগিটির একটি চোখ হয়তো সামনের দিকে তাকায়, আবার অন্যটি এই প্রাণীর পেছনের দিকে কি ঘটতে যাচ্ছে তা লক্ষ্য করে।
বহুরূপী গিরগিটির দুটি চোখ চক্রাকারে ক্লান্তিহীনভাবে দৃষ্টিপাত করে ও উপযোগী শিকার দৃষ্টিগোচর না হওয়া অবধী থাকে অনড়ভাবে। শিকার চোখে পড়া মাত্রই এই সরীসৃপটি তখন হামাগুড়ি দিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগোয় সামনের দিকে। এটি শিকারকে নাগালের মধ্যে পাওয়ার অবস্থানে এসে ওর ল্যান্সের মতো বিশেষ ধরনের জিহ্বা ছুঁড়ে দিয়ে স্বাভাবিক দ্রুততায় খাবার গিলে খায়। ক্ষুদ্র প্রজাতির গিরগিটিরা খায় মশা, মাছি, ফড়িং এবং মাকরসা জাতীয় জিনিস পোকামাকড়।
বড় প্রজাতিগুলো এদের ঘাতক জিহ্বার ফাঁদে ক্ষুদ্রাকৃতির পাখি এবং স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলো গিলতে পারে। বিশ্বে গিরগিটির প্রজাতি রয়েছে ৮০টি। এগুলোর বেশিরভাগই বসবাস করে আফ্রিকায়। ভারত এবং শ্রীলংকাতেও ক্যামিলিঅ্যা জেলানিকাস পাওয়া যায়। এই সরীসৃপগুলো এদের গাত্র রঙ দ্রুত পাল্টানোর জন্য সুপরিচিত ও এই ধরনের দক্ষতা সর্ম্পকে প্রচলিত রয়েছে অনেক কথকথা।
এই সম্পর্কে এমনি একটি অলীক কাহিনী রয়েছে যে, এক সময় একটি গিরগিটিকে নাকি রাখা হয়েছিল লাল, হলুদ এবং সবুজ রঙের ডোরাকাটা একখণ্ড বস্ত্রের ওপর। সরীসৃপ বস্ত্র খণ্ডটির রঙের ধরনের সঙ্গে মিল রেখে ও গাত্রবর্ণ পাল্টানোর সত্ত্বেও পরে মনোকসে এটির মৃত্যু ঘটে। গিরগিটি কেনো কিংবা কিভাবে এর গোত্রবর্ণ পাল্টায় সে সম্পর্কে এখন অবধি সঠিক কিছুই জানা যায়নি।
তবে এখন ধারণা করা হয় যে, এই সরীসৃপ অবস্থানের প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রঙ পাল্টায় না। আলো, তাপের তীব্রতা এমনকি আপন আবেগে সাড়া দিয়ে এই প্রাণীটি ত্বক ভিন্নতর রং ধারণ করে থাকে। একটি ক্ষুদ্র গিরগিটি আরেকটির মুখোমুখি হলে উভয়েই দ্রুততার সঙ্গে উজ্জ্বলতা দিয়ে কৃষাভা ছড়িয়ে দেয়। গিরগিটির দেহে রয়েছে বিশেষ রঙের কোষের ৪টি স্তর। সেগুলোর অবস্থান এই প্রাণীর ভেদ্য ত্বকেও। এগুলো থেকেই গিরগিটি এতো অধিক ও ভিন্নতর রঙ ধারণ করতে সক্ষম হয়।