দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে সদস্য দেশসমূহের উপস্থিতিতে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে আবারও রোহিঙ্গা সঙ্কট বিষয়ে বিপুল ভোটে একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) ‘মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার পরিরিস্থিতি’ শিরোনামে আনীত এবারের রেজুলেশনটির বিশেষ একটি দিক হলো এতে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের বিভিন্ন উপায়গুলোর উপর আলোকপাত করা হয়। তাছাড়াও মিয়ানমারকে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে সেই বিষয়েও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
রেজুলেশনটি নিরাপত্তা পরিষদকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে সুস্পষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, এতে করে নিরাপত্তা পরিষদের উপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে। তাছাড়াও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ব্যর্থতার জন্য এতে করে মিয়ানমারকে দায়ী করে স্পষ্ট রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রদর্শন এবং প্রত্যাবর্তনের উপযোগী পরিবেশ তৈরিসহ সুনির্দিষ্ট ১০টি বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও বলা হয়। এতে করে মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতকে বাস্তব পরিরিস্থিতির বিষয়ে রিপোর্টিং বাধ্যতামূলক করার কথাও উল্লেখ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে প্রদত্ত বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে যেসব প্রস্তাবনা দেন তার বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনাও রেজুলেশনটিতে স্থান পেয়েছে ও ‘রোহিঙ্গা মুসলিম’ শব্দটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যা গুরুত্বপূর্ণ একটি সংযোজন।
রেজুলেশনটির পক্ষে ভোট দিয়েছে ১৪০টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে ৯টি দেশ এবং পক্ষ অবলম্বনবিহীন ভোট প্রদান করেছে ৩২টি দেশ।
২০১৭ সালের উদ্বুত পরিরিস্থিতির উপর ওই বছর হতেই নিয়মিতভাবে ওআইসি’র নেতৃত্বে মিয়ানমারের মানবাধিকার সঙ্কট ইস্যুতে তৃতীয় কমিটিতে এই রেজুলেশনটি আনা হচ্ছে। গত বছর হতে ওআইসি ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) যৌথভাবে তৃতীয় কমিটিতে রেজুলেশনটি উত্থাপন করে আসছে এবং প্রতিবারই বিপুল ভোটে সেটি গৃহীতও হচ্ছে।
এবারের রেজুলেশনটি মিয়ানমারের উপর রাজনৈতিক চাপকে শুধু জোরদারই করবে না বরং সেটি অব্যাহত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। ওআইসি ও ইইউ’র সদস্যরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড এবং মেক্সিকোসহ মোট ১০২টি দেশ রেজুলেশনটি কো-স্পন্সর করে এবং বিপুল ভোটাধিক্যে এটি গৃহীতও হয়। যা রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব জনমতের জোরালো একটি প্রতিফলন হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এই রেজুলেশনটি ভোটে যাওয়ার আগে এর পক্ষে ভোট দেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরে বক্তব্য রাখে ফিনল্যান্ড (ইইউ), কানাডা, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব ও সুইজারল্যান্ড। ভোট গ্রহণের আগে এবং পরে দেওয়া বক্তব্যে প্রায় সব সদস্য দেশের প্রতিনিধিগণই জোরপূর্বক বাস্তচ্যূত রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সংরক্ষণ, টেকসই পূনর্বাসন, জাতিগত নিধন এবং গণহত্যার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ, সহিংসতার দায় নিরূপন এবং অপধারীদের বিচারের মুখোমুখি করা ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানসহ মিয়ানমারে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রেজুলেশনটি তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে গৃহীত বৈশ্বিক পদক্ষেপসমূহের মধ্যে এটি একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।